‘নিষিদ্ধ’ সেমাই তিন নামে বাজারজাত করছে প্রাণ

  • হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহীতে অবস্থিত প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের ফ্যাক্টরি, ছবি: বার্তা২৪.কম

রাজশাহীতে অবস্থিত প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের ফ্যাক্টরি, ছবি: বার্তা২৪.কম

নিম্নমানের ভেজাল ৫২টি পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। 'নিষিদ্ধ' ওই ভেজাল পণ্যগুলোর মধ্যে প্রাণের লাচ্ছা সেমাইও ছিল। আদালতের ওই নির্দেশনার পরও রাজশাহীতে প্রাণ গ্রুপের লাচ্ছা সেমাই উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, কৌশলে তারা একই ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত লাচ্ছা সেমাই তিন নামে বাজারজাত করছে। রাজশাহীর সপুরায় বিসিক শিল্প নগরীতে অবস্থিত ‘প্রাণ এগ্রো ফুড লিমিটেড’ ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত হচ্ছিল এসব সেমাই।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: প্রাণ-এসিআইসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২ ভেজাল পণ্য প্রত্যাহারের নির্দেশ

কাঁচামাল, তৈরির জনশক্তি ও সব উপকরণ এক থাকলেও মোড়কীকরণের সময় তা কখনও হয়ে যাচ্ছে ‘প্রাণ লাচ্ছা সেমাই’, কখনও ‘মোঘল লাচ্ছা’ কিংবা ‘মিস্টার লাচ্ছা সেমাই’। একই ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন হলেও তিন নামে ব্র্যান্ডিং করে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যে ক্রেতাদের ধোঁকাও দিয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডাডর্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ার পরও রাজশাহীতে প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘প্রাণ এগ্রো ফুড লিমিটেড’ লাচ্ছা সেমাইয়ের উৎপাদন ও বাজারজাত অব্যাহত রেখেছে। এমন খবরে মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

‘নিষিদ্ধ’ সেমাই তিন নামে বাজারজাত করছে প্রাণ

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিসান বিন মাজেদ ও আরাফাত আমান আজিজের নেতৃত্বে অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া উৎপাদিত ও বাজারজাতকরণের উদ্দেশে ফ্যাক্টরিতে রাখা লাচ্ছা সেমাই জব্দ করা হয়। পরে তা ধ্বংস করা হবে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত আমান আজিজ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'তারা আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে প্রাণ এগ্রো ফুড লি. পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছিল। খবর পেয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে গিয়ে আমরা দেখেছি- তারা একই কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছে। অথচ তা ভিন্ন ভিন্ন নামে মোড়কীকরণ করা হচ্ছে। যা স্পষ্ট প্রতারণা।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রাণ এগ্রো ফুডের ওই ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত ও পোড়া তেল, তারা সঠিক প্রক্রিয়ায় নষ্ট না করে; উন্মুক্তস্থানে ফেলে দেয়। যা পরিবেশের ক্ষতি করছে। কাজটি আইনেরও পরিপন্থী। আমরা তাদেরকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর আওতায় ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।'

আর ফ্যাক্টরির পাশেই বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত রাতুল বেকারিকে উৎপাদিত খাদ্যে অস্বাস্থ্যকর রং মেশানোর দায়ে ভোক্তা আইনে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে, জনকল্যাণে ও জননিরাপত্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত আমান।

এদিকে, এ বিষয়ে রাজশাহী প্রাণ এগ্রো ফুডের অফিসিয়াল দু’টি নম্বরে কয়েক দফা কল করা হলেও রিসিভ করেনি। পরে সাংবাদিক পরিচয়ে এসএমএস পাঠালে প্রতিউত্তর আসে ‘রং নম্বর’।

প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন ‘সেলস ম্যান’ নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সামনে ঈদ এখন সেমাই ব্যবসার মৌসুম। আদালত নির্দেশ দিলেও কোম্পানির উচ্চপর্যায় থেকে রাজশাহী অফিসকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন। ঈদের আগেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই সেমাই তৈরি ও মোড়কের কাজ পুরোদমে চলছে।’