বিএসইসি চেয়ারম্যানে আস্থা নেই বিনিয়োগকারীদের

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন, ছবি: সংগৃহীত

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন, ছবি: সংগৃহীত

পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা এবং বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়াসহ এক গুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু তারপরও থামছে না পুঁজিবাজারের দরপতন।

দরপতনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। আর তাতে দেশি বিনিয়োগাকারীদের পাশাপাশি বিদেশিরাও আতঙ্কিত হয়ে পুঁজিবাজার ছাড়ছেন।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি থেকে চলা পতনে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারিয়ে গেছে সাড়ে ৬১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলধন কমেছে ৩১ হাজার ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূলধন কমেছে ৩০ হাজার ৩৭৫ কোটি ৭৩ লাখ ২ হাজার টাকা।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেনের কারণে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না পুঁজিবাজার।

তারা বলছেন, ২০১০ সালের ধসের পর বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করবেন। তারপর আট বছর কেটে গেল কিন্তু পুঁজিবাজার ঠিক হল না। বরং গত আট বছরের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শতাধিক পচা ও দুর্বল কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আর তাতে পুঁজিবাজারে নেতিচাক প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সভাপতি মিজানুর-উর-রশিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করলেই পুঁজিবাজার ভালো হবে। তার কারণ, গত আট বছরে তিনি অনেক আশার বাণী শুনিয়েছেন। একের পর এক সংস্কারের কথা বলে আমাদের ধোঁকা দিয়েছেন। অবৈধভাবে নিজের চেয়ার টিকিয়ে রাখার জন্য প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন পর‌্যন্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেননি তিনি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা হচ্ছে-দুর্বল ও খারাপ কোম্পানিতে আইপিওর মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দেওয়া। একের পর এক কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি হচ্ছে তা রোধ না করা।

তিনি বলেন, ২০১০ এবং ১৯৯৬ সালের ধসের সঙ্গে জড়িতদের বিচার না করায় বিনিয়োগকারীরা কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। ফলে শত উদ্যোগের পরও পুঁজিবাজার ভালো হচ্ছে না।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও ডিবিএর প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বার্তা২৪.কমকে বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার জন্য যে ‍উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাজারের জন্য ইতিবাচক। কিন্তু বাস্তবায়ন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ফলে এখনও দরপতন হচ্ছে। তবে, আমি আশাবাদি, পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আগেরবারের অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকে বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়নোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর তারা করেননি। এখন আবার ব্যাংকের এক্সপোজার থেকে নন লিস্টেড কোম্পানির বিনিয়োগ বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন করতে হবে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগকরীদের আশ্বাস দিয়েছেন, আসন্ন বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হবে, দ্বৈত কর নীতি পরিহার করা হবে, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৯শ’ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে এবং লভ্যাংশের ওপর আয়কর কমানো হবে।

ডিএসইর ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এবং মাচেন্ট ব্যাকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান প্লেসমেন্টের মাধ্যমে আসা নতুন কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন বন্ধ করে দিয়েছেন। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নূন্যতম ২ শতাংশ আর সম্মিলিত ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ এবং বোনাস শেয়ার ধারণের বিষয় নিয়ে দু’টি কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে করিম ঘোষণা দিয়েছেন, নন লিস্টেড কোম্পানিতে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা ধরা হবে না। কিন্তু এসব ঘোষণার পরও পুঁজিবাজারে দরপতন থামছে না।