পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় ডিএসই পরিচালকের একগুচ্ছ প্রস্তাব

  • মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ডিএসই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. রকিবুর রহমান/ছবি: বার্তা২৪.কম

ডিএসই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. রকিবুর রহমান/ছবি: বার্তা২৪.কম

সমস্যার গভীরে না গেলে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করা যাবে না বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. রকিবুর রহমান।

তার মতে, বাজারের গভীর সমস্যা হলো-বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) যারা বাজারের সঙ্গে জড়িত, তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজগুলো করতে হবে। তাহলেই আস্থার সংকট কেটে যাবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাজারের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো-সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা, ডিসক্লোজার বেসিসে নতুন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) দেওয়া বন্ধ করা এবং আইপিও দেওয়ার আগে কোম্পানির প্রসপেক্টাসকে পুনরায় অডিট করা।

তিনি বলেন, আইপিও অনুমোদনের আগে কারখানা পরিদর্শন করতে হবে। যারা আইপিও আনছে তাদের ক্রেডিবিলিটি দেখতে হবে। তারপর আইপিও অনুমোদন দিতে হবে।

মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রকিবুর রহমান আরও বলেন, পৃথিবীর সব দেশের নিয়ম হচ্ছে-আইপিও অনুমোদন দেয় স্টক এক্সচেঞ্জ। তারা এ কারণে দেয় যে স্টক এক্সচেঞ্জ অনুমোদন দেওয়ার পর কোনো ভুল করলে তাদের বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো নিয়ম। আইপিওর অনুমোদন দেয় কমিশন। আর তাও ডিসক্লোজার বেসিসে।

ডিসক্লোজার বেসিসে আইপিও অনুমোদন দেওয়ার পর সেখানে যদি মিথ্যা তথ্য পাওয়া যায়, ভুল ভ্রান্তি পাওয়া যায়, তাহলে কমিশন জাজ হয়ে সেটি কীভাবে মূল্যায়ন করবে?

তাই অমি মনে করি, আইপিও অনুমোদনের ক্ষমতা এক্সচেঞ্জের হাতে দেওয়া উচিত। স্টক এক্সচেঞ্জ অত্যন্ত সততার সঙ্গে এক্সপার্ট টিমের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে দেখে আইপিওর অনুমোদন দেবে।

তিনি মনে করেন, বর্তমান সময়ে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি।

ডিএসইর সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, তারা নিয়ম অনুযায়ী শেয়ার বিক্রি করবে; তাতে আমার কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু উদ্যোক্তারা যখন শেয়ার বিক্রি করে, তখন যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। দেখতে হবে, উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিতভাব ৩০ শতাংশ শেয়ার আছে কি না?

যদি থাকে, তাহলে এক্সচেঞ্জ তার ক্লিয়ারেন্স দেবে। তারপর উদ্যোক্তারা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার বিক্রির জন্য ঘোষণা দেবে। ঘোষণা দেওয়ার ১৫ দিন পর থেকে উদ্যোক্তারা শেয়ার বিক্রি করবে। কারণ, বিনিয়োগকারীদের সুযোগ দিতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা যে উদ্যোক্তাদের দেখে শেয়ার কিনেছিল, সেই উদ্যোক্তারা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এখন তারা শেয়ার রাখবে কি না-সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আর স্পন্সররা অব্যশই ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রি করে। এটাকে পাবলিক মার্কেটে বিক্রি করা যাবে না। নিয়ম অনুসারে তাদের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করতে হবে।

রকিবুর রহমান বলেন, যে সব কোম্পানি ৩০ শতাংশ ও ২ শতাংশ শেয়ারহোল্ড করে না। সেসব কোম্পানিতে রিএনফোর্সমেন্টে যেতে হবে। প্রয়োজনে তাদের চিহিৃত করতে নতুন একটি ক্যাটাগরি করতে হবে। তার নাম হতে পারে ‘এম’ ক্যাটাগরি। এই ক্যাটাগরির শেয়ার লোন মার্জিন পাবে না। কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ করতে পারবে না। বোনাস ও রাইট শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না। তাদের যদি কোনো মাদার প্রতিষ্ঠান থাকে, তাহলে তাদের ব্যাংক লোনও বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের কিছু কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে আনতে হবে। যাতে তারা অন্যদের মতই সমাজে সুযোগ সুবিধা না পায়। আমার মনে হয়, এমনটা সম্ভব হলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।