বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) লো-স্কোরিং ম্যাচ হওয়া যেনো নিয়মে পরিণত হয়েছিলো। তবে সেই নিয়মকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন খুলনা টাইগার্সের হয়ে মাঠে নামা মোহাম্মদ নাঈম শেখ। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন ঘরোয়া আসরেও ভালো স্কোর করা সম্ভব। বিপিএল আজ দুর্ধ্বস ব্যাটিংয়ের পর এবার এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।

মিরপুরে আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলের দলটির হয়ে জড়ো ব্যাটিং করা নাঈমের মতে ভালো স্কোরের জন্য উইকেটই সবকিছুর মুল। তিনি বলেন, ভালো উইকেট হলে সবসময় ভালো। দেশিদের নিয়ে প্রশ্ন উঠত আগে, বাউন্ডারি মারতে পারি না, চার-ছয় মারতে পারি না। ভালো ট্র্যাক দিন, অবশ্যই ভালো খেলব। এরকম উইকেট দিলে ব্যাটাররা সবসময় রান করবে। বাইরের দেশে সবসময় দেখি মারছে। সবাই ভাবে আমাদের দেশের প্লেয়াররা পারে না। আসলে এমন না। উইকেট ভালো হলে বাংলাদেশিরাও রেঞ্জ হিটিংয়ে খুবই ভালো।'

খুলনার হয়ে ৬২ বলে ১১১ রানের দ্রুতগতির অপরাজিত ইনিংস খেলা এই বলেন, ‘তিন বছর আগে মুশফিক ভাই বলেছিল, রিভার্স সুইপ নিয়ে কাজ করা গেলে আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। ওনার কথা মতো্ কাজ করে এখন অফ স্পিনে সুইপ, রিভার্স সুইপ অনেক সহজ হয়েছে। স্লগ সুইপে আগে ভালো ছিলাম, মাঝখানে সংগ্রাম করেছি সেটা নিয়ে। বলতে গেলে লম্বা হয়ে যাবে, এটা ঠিক যে কিছু জিনিস পরিবর্তন এনেছি, তাই সাফল্য আসছে। বিপিএল প্রথম দিন থেকেই চেষ্টা করছিলাম ফ্লো ধরে রাখার। দুই ম্যাচ বাদে বেশিরভাগ ম্যাচেই ভালো শুরু পাচ্ছিলাম। ২-৩টি লম্বা হয়েছে। ওপেনার হিসেবে ৭০-৮০ রান করলে দলের কাজ সহজ হয়ে যায়।'

বিপিএলে এবারের আসরে ১১ ম্যাচে ৪৪.৪০ গড়ে এবং ১৪৮.৯৯ স্ট্রাইকরেট নিয়ে ৪৪৪ তুলেছেন নাঈম। তবে এ যাত্রা এতা সহজ ছিলো না তার জন্য। তাই কোচ সহ সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করেন নি ২৫ বছর বয়সী নাঈম। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট একজন বলতে গেলে মাইন্ড ট্রেনিং নিয়ে কাজ করেছি, ওটা অনেক ভূমিকা রাখছে । ঘরোয়া ক্রিকেটের সব কোচের কথা বলতে হবে।’

প্লে-অফ খেলতে প্রয়োজন দুই ম্যাচে একটি জয়। এমন সহজ সমীকরণকে সামনে রেখে খেলতে নামা চিটাগং কিংস জয়ও পেয়েছে সহজেই। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসরে সবার আগে ছিটকে পড়া সিলেট স্ট্রাইর্কাসকে হারিয়েছে ৯৬ রানে।

আজ দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে মিরপুর শের-এ-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ১৯৬ রানের বড় পুঁজি পায় চিটাগং। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১০০ রানেই গুটিয়ে যায় সিলেট। আর তাতেই রংপুর রাইডার্স ও ফরচুন বরিশালের পর তৃতীয় দল হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিত করলো চিটাগং।

১৯৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদের গতির সামনে দাঁড়াতেই পারেননি সিলেট ব্যাটাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে তিন উইকেট হারিয়ে আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি সিলেটের। সিলেটের হয়ে দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর ১৯ রান এসেছে জাকির হাসানের ব্যাট থেকে। আর তাতেই ১৫.২ ওভারে মাত্র ১০০ রানেই শেষ হয় সিলেটের এবারের আসরের পথ চলা। শরিফুল নিয়েছেন ৫ উইকেট আর খালেদ নিয়েছেন ৪ টি।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে মোহাম্মদ মিঠুনের দল। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে তানজিম হাসান সাকিবের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। তৃতীয় ওভারে সাকিবের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন আসরে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা গ্রাহাম ক্লার্ক। তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১ রান। ১৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে দল বিপর্যস্ত দলকে টেনে তোলেন ওপেনার খাজা নাফে ও অধিনায়ক মিঠুন। দুজনে গড়েন ৯৪ রানের জুটি। এরপর ২৪ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট পড়লেও শামিম হোসেন পাটোয়ারী ও খালেদ আহমেদের দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রান করে চিটাগং।

এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই প্লে-অফ নিশ্চিত হল চিটাগংয়ের। ১১ ম্যাচে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে মিঠুনের দল। তবে চিটাগংয়ের সামনে সুযোগ থাকবে শীর্ষ দুইয়ে যাওয়ার। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ফরচুন বরিশালের সঙ্গে জিতে রান রেটে এগিয়ে থাকলেই রংপুরকে পেছনে ফেলে শীর্ষ দুইয়ে জায়গা করে নেবে চিটাগং।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এবারের আসরে পারিশ্রমিক বিতর্ক নিয়ে শক্তভাবে মোকাবেলা করার কথা জানিয়েছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের বিপিএলে পারিশ্রমিক বিতর্কের কারণ জানতে আজ বৃহস্পতিবার সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনসিএ)।

এনসিএর পরিচালককে (ক্রীড়া) আহ্ববায়ক, ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিবকে সদস্য এবং সহকারী পরিচালককে (ক্রীড়া) সদস্য সচিব করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে জানিয়েছে কতৃপক্ষ।

সেখানে বলা আছে,‘এবারের বিপিএল আয়োজনে ৩টি ক্রীড়া অবকাঠামো মেরামত/সংস্কারে সরকার কতৃক বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বিপিএল পারিশ্রমিক সংক্রান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু খবর ক্রীড়া পরিষদের নজরে এসেছে এবং আমরা মনে করি পারিশ্রমিক পরিশোধ না করা হলে তা বিসিবি, বিপিএল তথা দেশের সম্মানের জন্য হানিকর।’

তাই এ ইস্যুগুলো যথাযথ খতিয়ে দেখতে এই সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এনসিএ সচিব মো: আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এবারের বিপিএলে দুর্বার রাজশাহী ও চিটাগং কিংস ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক সময়মতো ও যথাযথ নিয়মে না দেওয়ায় তুমুল বিতর্ক ছড়িয়েছে কয়েক দফায়, যা চলছে এখনও। পারিশ্রমিক বিতর্কে রাজশাহীর ম্যাচও বয়কট করেছে দলটির বিদেশী খেলোয়াড়রা। তবে দেশীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে কোনোরকমে ম্যাচ খেলায় সেবার বড় কোনো লজ্জায় পড়তে হয়নি পদ্মাপাড়ের দলটিকে।

গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের থেকেই কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বের শুরু হয়। ঘটেছে মিটিংয়ে অনুপস্থিতি থেকে শুরু করে জিম সেশন বয়কটের মত ঘটনা।

তবে এবার বাটলারের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযোগের তীর ছুড়ে দিয়েছেন ফুটবলাররা। তার বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানি ও উৎপীড়নসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়েরা।

এমনকি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এই ব্রিটিশ কোচকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে একযোগে অবসরের হুমকিও দিয়েছেন তারা। আজ বৃহস্পতিবার বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ সব ঘোষণা দেন সাবিনা খাতুন, মনিকা চাকমাসহ ১৮ ফুটবলার।

আজ সকালে বাটলারের অধীনে ১২ জন ফুটবল খেলোয়ার জিমে অংশ নেন। ক্যাম্পে থাকা বাকি ফুটবলারেরা সন্ধ্যার পর কোচের বিরূদ্ধে তাদের লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। যেখানে ছিলেন অধিনায়ক সাবিনা, মনিকা, শামসুন্নাহার, সানজিদা, ঋতুপর্ণা, মাসুরাসহ ১৭ সিনিয়র ফুটবলার।

তবে খেলোয়াড়রা আশা করছেন বাফুফে তাদের ন্যায্য সমাধান এনে দেবে। তা না হলে পিটারের অধীনে কোন ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নেবেন না বলে জানান তারা। তারা বলেন,‘বাফুফে যদি বাটলারকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে,তাহলে আমরা একযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হব। ভেবে নিব, দেশের নারী ফুটবলে আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।