বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) হাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা করার জন্য আর মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় রয়েছে। আগামী রোববার, ১২ জানুয়ারি, বিসিবি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলকে (আইসিসি) স্কোয়াড পাঠাবে। তবে দল চূড়ান্ত করার আগেই আলোচনায় রয়েছে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের ইস্যু।
তামিম ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় দলে না ফেরার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। কিন্তু সাকিব আল হাসানের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তার অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিলেটে তামিম ইকবালের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকায় ফিরে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর সঙ্গে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার বিসিবি সভাপতির অনুপস্থিতির কারণে সেই বৈঠকটি হয়নি।
নির্বাচক প্যানেল ইতোমধ্যে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে আলোচনা করে দুটি স্কোয়াড তৈরি করেছে। একটিতে রাখা হয়েছে সাকিব ও তামিমকে, কারণ অধিনায়ক অভিজ্ঞ চার ক্রিকেটারকেই দলে চেয়েছিলেন। তবে তামিম ইতোমধ্যেই দলে জায়গা হারিয়েছেন। অন্য তালিকায় রয়েছে নিয়মিত ক্রিকেটাররা, যারা ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে খেলছেন।
নির্বাচকরা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্কোয়াড ঘোষণা করার পর কোনো পরিবর্তন আনবেন না। তবে সাকিবের পরিস্থিতি এই অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে।
সাকিব সম্প্রতি চেন্নাইয়ে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। বিসিসিআই-এর অধীনে গত ২১ ডিসেম্বর পরীক্ষা দিয়ে তার অ্যাকশনে ত্রুটি ধরা পড়ে। তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যা রয়ে গেছে।
সাকিব লাল বলের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও নিরাপত্তা শঙ্কায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলতে পারেননি। আফগানিস্তান সিরিজ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও তাকে পাওয়া যায়নি। চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও তিনি খেলছেন না।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডে সাকিব আল হাসানের জায়গা হবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তার সাম্প্রতিক বোলিং নিষেধাজ্ঞা এবং ফিটনেস সমস্যা বাংলাদেশ দলের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চেনা ছন্দে ফেরার দিনে একটা মাইলফলকেও গতকাল পা রাখেন লিটন কুমার দাস। বিপিএলে শুক্রবার খেলতে নামেন নিজের সেঞ্চুরি ম্যাচে। যেখানে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৩ বলে ৭৩ রান। ১০০তম ম্যাচে নিজেও ফিরেছিলেন রানে। কিন্তু মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচেও জিতল না তার দল।
লিটন দাসের মুখের হাসি কেড়ে জাকির হাসানের ব্যাট। ঢাকা ক্যাপিটালসকে আরও একটা হার উপহার দিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স চলতি বিপিএলে তুলে নিল প্রথম জয়। ৩ উইকেটে জিতে জিতল স্বাগতিকরা। আর ঢাকা ক্যাপিটালসকে দেখল টানা ষষ্ঠ হার!
ঢাকার দেওয়া ১৯৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২৭ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন জাকির হাসান। তাতেই সিলেট পায় আসরের প্রথম জয়।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে জয়ের নায়ক জাকির বলেন মানিয়ে নিয়ে খেলেই পেয়েছেন সাফল্য, ‘দেখুন, উইকেট ভালো ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে যে এখানে জোনে পড়লে মারা যাবে। আমি ওইভাবেই পরিকল্পনা করার চেষ্টা করেছি। প্রথম ইনিংসে যেহেতু ওরা ব্যাটিং করেছে। উইকেটটি দেখে নেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আমার যেগুলো জোনে পেয়েছি ওগুলো হিট করার চেষ্টা করেছি।’
জয়ের নায়ক জাকির আরও বলেন, ‘দল আশা করছিল যে আমরা একটা ম্যাচ জিতব। ফাইনালি আমরা একটা ম্যাচ জিতেছি। সবচেয়ে বেশি যেটা বলব যে দর্শকরা অকল্পনীয় সমর্থন করেছে পুরো আসরজুড়ে। সবসময় ফুল প্যাকড দর্শক থাকছে। তো খুব উপভোগ করছি।’
জাকির উৎসর্গ করলেন সিলেটের ক্রিকেটপ্রেমীদের, ‘ওইভাবে উৎসর্গ করতে চাই না। করলে এখন আপাতত আমাদের ভক্তদের করতে চাই। ওরা আমাদের অনেক সমর্থন করছে, একটু আগে যা বললাম। তাই এই ফিফটি আমি দর্শকদের উৎসর্গ করতে চাই।’
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে পারফর্ম করে আলোচনায় এসেছিলেন জিশান আলম। বিশেষ করে তার পাওয়ার হিটিং সামর্থ্য তাকে লাইমলাইটে নিয়ে আসে। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এসে ধারাবাহিক ব্যর্থতায় হতাশ করেছেন এই ওপেনার। এক ম্যাচে রান পেলেও তার স্ট্রাইকরেট নিয়ে হয়েছে সমালোচনা।
তবে জিশানের সামর্থ্যে বিশ্বাস হারাননি তার সতীর্থ এনামুল হক বিজয়। জিশানকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে ও যদি ওর মত করে খেলে... দলের জন্য সারপ্রাইজ প্যাকেজ তো অবশ্যই। আশা করি সে এগুলো বুঝবে শিখবে। বিপিএলে তো আরও প্লেয়ার রয়েছে। তাদের সাথে যদি সে কথা বলে। ওর নিজের কোয়ালিটিও যদি সেভাবে মেইনটেইন করে।’
সর্বশেষ এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে সিলেট বিভাগের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিলেন জিশান। আসরে ৭ ম্যাচে ২৮১ রান করে ছিলেন দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার। তার ব্যাটিং গড় ছিল ৪০.১৪, আর স্ট্রাইকরেট ছিল ১৫৮.৭৫। তবে বিপিএলে এসে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে আসর শুরু করেন জিশান। পরের ম্যাচে ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষেও শূন্য রানে ফেরেন। যদিও বরিশালের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচে ২৭ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন। খুলনার বিপক্ষে করেন ২৩ রান।
বিজয়ের মতামত
বিপিএলে জিশানের ফর্ম নিয়ে বিজয় বলেন, ‘অভিজ্ঞতার সাথে সাথে খেলার উন্নতি হবে। নিজেকে প্রমাণ করতে পারবে। বিপিএলে একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। চ্যালেঞ্জটা পার করে ফেলতে পারবে তখন ব্যাপারটা ভালো। চ্যালেঞ্জিং কিন্তু আশা করি সে পারবে।’
জিশানের উন্নতিতে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথোপকথন এবং নিজের গুণাবলী ধরে রাখার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিজয়। তার বিশ্বাস, তরুণ এই অলরাউন্ডার বিপিএলের চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন তামিম ইকবাল খান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে আজ রাতে পাকাপাকিভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা এই ওপেনার।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক একাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
ওই পোস্টে তিনি লিখেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ। অনেক দিন ধরেই এটা নিয়ে ভাবছিলাম। এখন যেহেতু সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় একটি আসর সামনে, আমি চাই না আমাকে ঘিরে আবার অলোচনা হোক এবং দলের মনোযোগ ব্যাহত হোক।
তিনি আরও লিখেন, এটা অবশ্য আগেও চাইনি। চাইনি বলেই অনেক আগে নিজেকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছি। যদিও অনেকেই বলেছেন, অনেক সময় মিডিয়ায় এসেছে, আমিই নাকি ব্যাপারটি ঝুলিয়ে রেখেছি। কিন্তু বিসিবির কোনো ধরনের চুক্তিতে যে নেই, এক বছরের বেশি সময় আগে যে নিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, তাকে পরিকল্পনায় রাখা বা তাকে নিয়ে আলোচনারও তো কিছু নেই। তার পরও অযথা আলোচনা হয়েছে। অবসর নেওয়া বা খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একজন ক্রিকেটার বা যে কোনো পেশাদার ক্রীড়াবিদের নিজের অধিকার। আমি নিজেকে সময় দিয়েছি। এখন মনে হয়েছে, সময়টা এসে গেছে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আন্তরিকভাবেই আমাকে ফেরার জন্য বলেছে। নির্বাচক কমিটির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমাকে এখনও উপযুক্ত মনে করার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তবে আমি নিজের মনের কথা শুনেছি।
পোস্টের শেষে তামিম লিখেন, ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে যা হয়েছে, আমার জন্য তা বড় ধাক্কা ছিল, যেহেতু ক্রিকেটীয় কারণে আমি দলের বাইরে যাইনি। তার পরও আমি যেখানেই গিয়েছি, ক্রিকেট ভক্তদের অনেকে বলেছেন, আমাকে আবার জাতীয় দলে দেখতে চান। তাদের ভালোবাসার কথা ভেবেছি আমি। আমার ঘরেও একজন অনুরাগী আছে। আমার ছেলে কখনও আমাকে সরাসরি বলেনি, কিন্তু তার মাকে বারবার বলেছে, বাবাকে আবার দেশের জার্সিতে খেলতে দেখতে চায়।
ভক্তদের হতাশ করার জন্য আমি দুঃখিত। ছেলেকে বলছি, ‘তুমি যেদিন বড় হবে, সেদিন বাবাকে বুঝতে পারবে।’