১ বলে ১৫ রান, টাইম আউট নাটকীয়তার ম্যাচে জিতল খুলনা

  • নেয়ামত উল্লাহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

মাহিদুল অঙ্কন খানিকটা আফসোস করতেই পারেন। বিপিএলের ১০ আসরে যা দেখা যায়নি, তিনি তাই করে দেখিয়েছেন, ১৮ বলে ফিফটি করে বিপিএল ইতিহাসের দ্রুততম ফিফটি করা বাংলাদেশি ব্যাটার বনে গেছেন; এত কিছুর পরেও তার নামটা যে নেই শিরোনামে।

গড়পড়তা ম্যাচ হলে হয়তো তার নামই থাকত শিরোনামে। কিন্তু বিপিএলের তৃতীয় ম্যাচে যা হলো, তাতে যে ম্যাচটা মোটেও সাধারণত্বের মানদণ্ডে থাকে না। ওশান থমাস দিলেন ১ বলে ১৫ রান, এরপর ১৪৭ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো টাইম আউটের নাটক দেখতে দেখতেও দেখা হলো না ক্রিকেটের। সে ম্যাচটাকে আর সাধারণ বলার উপায় কোথায় বলুন?

বিজ্ঞাপন

বিপিএল মানে অদ্ভুতুড়ে সব কাণ্ডের মিলনমেলা, তা গত অনেক বছর ধরেই হয়ে আসছে। এবারের বিপিএলের প্রথম দিনেও তার দেখা মিলেছিল, লোড শেডিংয়ের কারণে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচটা বন্ধ ছিল বেশ কিছুক্ষণ, তার আগে টিকিট না পেয়ে ভাঙচুরও হয়েছে শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। তবে সেসবকে আপনি বলতে পারেন ‘অক্রিকেটীয়’ অদ্ভুতুড়ে কারণ। আজ অদ্ভুত ক্রিকেটীয় কারণের সাক্ষাৎও পেয়ে গেল এবারের বিপিএল।

সবকিছুর শুরু দ্বিতীয় ইনিংসে। ওশান থমাস প্রথম বলেই ‘শিকার’ বানিয়েছিলেন নাঈম ইসলামকে। তবে ‘ছক্কা’ নাঈম রক্ষা পেলেন নো বলের কল্যাণে। এরপর যা হলো, তাতে ম্যাচটা উঠে গেল ইতিহাসের পাতায়। পরের বলটা ডট দিলেন থমাস।

বিজ্ঞাপন

এরপর নো বলে ছক্কা মারলেন নাঈম। পরের দুই ডেলিভারিতে আবারও দুটো অতিরিক্ত রান, এবার তা এল ওয়াইড থেকে। পরের বল আবারও নো, এবার হলো বাউন্ডারি। সব মিলিয়ে সে ওভারের দ্বিতীয় বৈধ বলের আগে বিশ্লেষণটা দাঁড়াল এমন– ১(নো), ০, ৭(নো), ১(ও), ১(ও), ৫(নো); সব মিলিয়ে ১ বলে ১৫ রান তখন চিটাগংয়ের স্কোরবোর্ডে। 

আর তাতেই গড়া হয়ে যায় রেকর্ড। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে এক বলে ১৩ রান তুলে এর আগে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। ২০২৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভারতের এ ওপেনার ৭ রান নেন। তিনি পান নো-বল থেকে। ১টি ছক্কায়।

পরের অদ্ভুতুড়ে ঘটনার দেখা মিলল ইনিংসের প্রায় মাঝ পর্যায়ে। ইনিংসের সপ্তম ওভারে হায়দার আলীকে বিদায় করেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। এরপর উইকেটে আসেন চট্টগ্রামের বিদেশী রিক্রুট টম ও’কনেল।

তবে তিনি ব্যাট হাতে মাঠে নামতে নামতে পার করে ফেলেন অনেক সময়। তারই সুযোগ নিয়ে নিচ্ছিলেন খুলনা অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। আম্পায়ার তানভীর আহমেদের কাছে টাইমড আউটের আবেদন করেন তিনি।

আম্পায়ারও তাতে সাড়া দেন, ‘আউট’ হয়ে মাঠ ছাড়ছিলেন ও’কনেল। তখনই ঘটল অ্যান্টি ক্লাইমেক্স, কী ভেবে সিদ্ধান্ত বদলান মিরাজ, ডেকে পাঠান ও’কনেলকে। তিনি নিজেও মিরাজকে ‘থাম্বস আপ’ দেখিয়ে ধন্যবাদ জানান।

স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম বারের মতো এমন কিছুর দেখা মিলেছিল ২০২৩ বিশ্বকাপে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ম্যাচে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে টাইমড আউট করেন সাকিব আল হাসান আর নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে। আজ তার দেখা দ্বিতীয় বারের মতো পেতে পেতেও শেষমেশ পায়নি ক্রিকেট।

তবে অদ্ভুতুড়ে দুটো ঘটনাই গেছে চিটাগংয়ের পক্ষে। তবু দলটা তার ফায়দা নিতে পারেনি। টাইমড আউট হতেও হতেও রক্ষা পাওয়া ও’কনেল পরের বলেই ফিরেছেন সাজঘরে। প্রথম বলে ‘নো’ হওয়াতে বেঁচে যাওয়া নাঈম ইসলাম করতে পেরেছেন মোটে ৯ বলে ১২। 

নাঈম ইসলাম আর টম ও’কনেলের মাঝের ব্যাটাররাও ভালো কিছুই করতে পারেননি, ২০ রানের ইনিংসও আসেনি শীর্ষ ৫ ব্যাটার থেকে। এরপরও চিটাগং শেষ পর্যন্ত লড়েছে শামীম পাটোয়ারীর ব্যাটে চড়ে। সদ্যসমাপ্ত ‘সফল’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরকে সফল করার অন্যতম কুশীলব আজ করেছেন ৩৮ বলে ৭৮ রান। তার ওই ইনিংসই চিটাগংকে ১৮তম ওভার পর্যন্ত ম্যাচে রেখেছিল, ১১তম ওভারে ৭৫ রানে ৮ উইকেট হারানোর পরও। তারপর আর কিংসের ইনিংসও এগোয়নি, অলআউট হয়েছে ১৬৬ রান তুলে। ম্যাচটা হেরেছে ৩৭ রানে।

চিটাগংয়ের ইনিংসের আগ পর্যন্ত অবশ্য ম্যাচটা বেশ ‘সাধারণ’ই ছিল। শুরু থেকে এক পাশ আগলে রেখে ব্যাট চালিয়েছেন খুলনার ওপেনার উইলিয়াম বোসিস্টো। শেষে এসে তার সঙ্গে সুর মেলান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। 

অঙ্কনের ব্যাট অবশ্য চলেছে আরও বেশি। বোসিস্টোর ফিফটি এসেছিল ৩৬ বলে। তার চেয়ে অর্ধেক বল খেলেই ৫০ এর দেখা পেয়ে যান অঙ্কন। হাঁকিয়েছেন ৬ ছক্কা। তাতে গড়া হয়ে গেছে বিপিএলে কোনো বাংলাদেশির দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। গেল বিপিএলে ২১ বলে ফিফটি করে যে রেকর্ডটা গড়েছিলেন সাকিব, তা বছর পেরোনোর আগেই ভেঙে দেন অঙ্কন, তাও মাত্র ১৮ বলে ফিফটি করে। শেষমেশ তিনি অপরাজিত থাকেন ২২ বলে ৫৯ রান করে। পঞ্চম উইকেটে তার সঙ্গে বোসিস্টোর অবিচ্ছিন্ন ৩৫ বলে ৮৬ রানের জুটি খুলনাকে নিয়ে বসায় ২০৩ রানের পাহাড়ে।

এমন সংগ্রহ জেতার জন্য যথেষ্ট অবশ্যই। খুলনা সে জয় তুলেও নিয়েছে। তবে মাঝে যা হয়েছে, তাতে ম্যাচটার গায়ে লেগে গেছে ‘অদ্ভুতুড়ে’ তকমাটা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর–
খুলনা টাইগার্স– ২০৩/৪, ২০ ওভার (বোসিস্টো ৭৫*, অঙ্কন ৫৯*; আলিস ২-১৭)
চিটাগং কিংস– ১৬৬/১০, ১৮.৫ ওভার (শামীম ৭৮; রনি ৪-৪৪, নাওয়াজ ৩-১৩)
ফল– খুলনা ৩৭ রানে জয়ী