রেকর্ড গড়ে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন। তবে সেই তানজিম হাসান সাকিব আজ পেলেন একটা দুঃসংবাদ। ম্যাচে ‘অশোভন আচরণ’ করে আইসিসির শাস্তির মুখে পড়েছেন তিনি।
নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক রোহিত পোড়েলের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। সাকিব তার জবাব তো দিয়েছেনই, সঙ্গে রোহিতকে আলতো ধাক্কা দিয়েছেন। পরে আম্পায়ারদের হস্তক্ষেপে বিষয়টা সমাধান হয়।
সে ঘটনার জেরে আজ তানজিম শাস্তি পেয়েছেন। তাকে ম্যাচ ফির ১৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে। আইসিসি জানিয়েছে, আচরণবিধির ২.১২ ধারা ভেঙেছেন তিনি। যে ধারা মূলত একজন খেলোয়াড়, একজন সাপোর্ট পার্সোনেল, আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি বা অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে (আন্তর্জাতিক ম্যাচে একজন দর্শকসহ) অনুপযুক্ত শারীরিক যোগাযোগের সাথে সম্পর্কিত।
তার বিরুদ্ধে আইসিসিতে নালিশটা দিয়েছেন আম্পায়ার আহসান রাজা, স্যাম নোগাজস্কি, সঙ্গে তৃতীয় আম্পায়ার জয়রামন মদনগোপাল এবং চতুর্থ আম্পায়ার কুমারা ধর্মসেনা।
তানজিম সাকিব তার অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন। যার ফলে প্রয়োজন পড়েনি কোনো আনুষ্ঠানিক শুনানির।
অনেক নাটকের পর বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে কোচের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার দিকে তার এই বরখাস্তের আদেশ কার্যকর হয়েছে। তবে তাকে এভাবে বিদায় করাটাকে দুঃখজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
তিনি বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন এ কথা। এর আগে গত মঙ্গলবার ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে একজন খেলোয়াড়ের ওপর ‘হামলা’ করা ও নিয়ম বহির্ভূত ছুটি কাটানোর অভিযোগে বিসিবি হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করে।
সে কারণে হাথুরুসিংহেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাসপেন্ড করা হয় এবং সেই সময়সীমা শেষ হলে তাকে ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ বরখাস্ত করা হবে। বিসিবি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও পাঠিয়েছে। ফিল সিমন্স ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এবং তিনি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
ফাহিম এই বিষয়ে বলেন, ‘হাথুরুসিংহের মেয়াদকালে অনেক বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে। তার কিছু অর্জন আছে, আবার কিছু অসদাচরণও রয়েছে। আমরা তার বিষয়ে কিছু সমস্যার কথাও শুনেছি। এমনভাবে তাকে চলে যেতে দেখাটা দুঃখজনক, বিশেষ করে আমি নিজেও একজন কোচ ছিলাম।’
হাথুরুর অধীনে টেস্টে নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় আছে। আবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে মুখ থুবড়ে পড়ার রেকর্ডও আছে। সব মিলিয়ে তার আমল কেমন ছিল? ফাহিমের অভিমত, ‘আমরা দেখেছি, কিছু বড় আইসিসি টুর্নামেন্টে আমরা তার অধীনে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে পারিনি। সুতরাং, এটি আসলে মিশ্র অভিজ্ঞতা।’
গেল বছর ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে ফিরে আসেন হাথুরুসিংহে। বিসিবির নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদের নিয়োগের পরপরই তিনি বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কার এই কোচকে আর বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হিসেবে রাখা উচিত নয়। তার দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় দুই মাস পর এই বক্তব্যেরই প্রতিফলন দেখা গেল গত মঙ্গলবার।
তিনি সাকিব আল হাসানের প্রিয় কোচ-মেন্টর। কোন সমস্যায় পড়লেই তিনি ছুটে আসেন তার কাছে। সেই সাকিবের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ালেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে খেলতে সাকিব দেশে ফিরতে পারেননি। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের মতামত জানালেন সালাউদ্দিন।
শুধু সাকিব নয়, সালাউদ্দিনের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসেছে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবালের নামও। সবারই পাশে থাকলেন এই কোচ। তার সেই ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো বার্তা২৪.কমের পাঠকদের জন্য।
‘‘দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি কখনই এতো রাগ বা কষ্ট লাগেনি, আজ কেন যেন লাগছে। আমরা মানুষ কি কখনও নিজেরা ভুল করি না? কেউ অনুতপ্ত হলে তাঁকে একটা সুযোগ দেয় উচিত, কিন্তু আমরা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি মানুষ হিসেবে। দয়া মায়া জিনিসটা আমাদের মধ্য থেকে উঠে গেছে।
একটা মানুষ দেশের জন্য ১৭টা বছর কিছু না কিছু করেছে। আজ ক্রিকেট বিশ্ব আমাদের একটু সম্মান করে কাদের জন্য, তারা ক্রিকেট মাঠে নামতে পারবে না, এই কান্না তো সবাই দেখবে না, রাজনীতি করছে বলে এরা খুনি? এদের সাথে মিশেছেন, এরা কত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে জানেন আপনি? এরা কত অসহায় মানুষের চিকিৎসা করিয়েছে সেটা কি জানেন?
তারা স্ট্যাটাস না দেওয়ার কারণে আজ শত্রু। যখন মাশরাফি ৫টা অপারেশন করে দেশের জন্য লড়াই করছে তা কি দেখছেন? সাকিব যে আঙুলে চিড় নিয়ে বোলিং করে গেছে, তামিম এক হাতে ব্যাটিং করে গেছে কাদের জন্য?
দেশ কে সবাই কম-বেশি ভালোবাসে, এদের ভালোবাসাটা হয়তো দেখা যায়ও না , এদের কাছ থেকে দেখেছি, এরা মানুষের উপকার ছাড়া কারো ক্ষতি করেনি। এরা খুনি না।
খুব কষ্ট পাচ্ছি এদেরকে মাঠ থেকে বিদায় নিতে দেখতে পাবো না। মানুষ কে মাফ করুন। আল্লাহ আমাদের অনেক অপরাধ মাফ করে দিবেন। আমরা সবাই কম বেশি অপরাধী। কাউকে সম্মান দিলে আপনি ও সম্মানিত হবেন।’’
টানা দুই বিপিএলে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ডেরায় খেলবেন তাওহীদ হৃদয়। গেল বার খেলেছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে, এবারের তিনি খেলবেন আরেক ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের হয়ে।
শেষ কিছু দিনে দারুণ ছন্দে থাকা হৃদয় আবুধাবিতে অনুষ্ঠেয় টি-টেন লিগের আসছে আসরে খেলবেন বাংলাদেশ ব্যাটার তাওহীদ হৃদয়। তিনি খেলবেন বাংলাদেশ টাইগার্সের হয়ে, যে দলের আইকন ক্রিকেটার আবার সাকিব আল হাসান।
শুধু আইকন নয়, দলের অধিনায়কও সাকিব। এছাড়াও আরেক তারকা ক্রিকেটার রশিদ খানও আছেন একই দলে। গতকাল আবুধাবি টি-টেনের প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে হৃদয়কে দলে টেনেছে দলটা।
এই দলে সাকিব-রশিদ-তাওহীদ বাদেও লিয়াম লিভিংস্টোন, ইফতিখার আহমেদ, দীনেশ কার্তিকরা আছেন। গেল মৌসুমের দল থেকে বাংলা টাইগার্স রেখে দিয়েছে জশ লিটল, দাসুন শানাকা আর হজরতউল্লাহ জাজাইকে।
সাকিব আল হাসানকে দলে রেখেই স্কোয়াড ঘোষণা করেছিল বিসিবি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম ম্যাচে তার আর খেলা হচ্ছে না, তা আগেই জানা গিয়েছিল। এবার বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে তার বদলিও ঠিক করে দিয়েছে। তার বদলে স্কোয়াডে ঢুকেছেন বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ।
বিসিবি জাতীয় নির্বাচক প্যানেলের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন সাকিবকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি সাকিব প্রথম টেস্টের জন্য অ্যাভেইলেবল না। সাকিব তার টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে আছে। তার অভিজ্ঞতা তো আছেই, ব্যাট এবং বল দুই দিকেই পারফর্ম করতে পারে, এমন মানসম্পন্ন কাউকে পাইনি।’
সাকিবের বদলে দলে আসা হাসান মুরাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হাসান মুরাদ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করে আসছে এবং আমাদের সিস্টেমে আছে। সে আমাদের বোলিং আক্রমণে ভারসাম্য আনবে, বিশেষ করে খেলাটা যখন ঘরের মাঠের কন্ডিশনে। আমরা বিশ্বাস করি এই পর্যায়ে পারফর্ম করার ক্ষমতা তার রয়েছে।’
বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদের টেস্ট অভিষেক হয়নি এখনও। তবে বেশ কয়েকবার তিনি স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছিলেন। ২৩ বছর বয়সী মুরাদ ২০২১ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। এরপর থেকে ৩০ ম্যাচে ১৩৬টি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
প্রথম টেস্টের স্কোয়াড:
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস (উইকেটরক্ষক), জাকের আলী অনিক, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, হাসান মুরাদ।