পন্তের সঙ্গে প্রতারণা করা ক্রিকেটার আটক

  • স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা ২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মৃণাঙ্ক সিং, বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রতি মোহ তার। ব্যয়বহুল রেস্তোঁরাতে খেতে এবং পাঁচ তারকা হোটেলে থাকার বাসনা ছিল মৃণাঙ্কের। বিলাসবহুল জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষা পূরণে অভিনব পরিকল্পনাও ছিল এই তরুণ ক্রিকেটারের।

নিজেকে একজন আইপিএল ক্রিকেটার হিসাবে পরিচয় দিতেন তিনি। মূলত নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য নিজেকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত করেছিলেন। এই মিথ্যাচারের ফলে যদি তাকে কখনও ধরা পড়তে হয় তবে তার জন্য একটি বিকল্প পরিচয় ও পরিকল্পনাও ছিল তার।

বিজ্ঞাপন

হরিয়ানা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের সাবেক এই ২৫ বছর বয়সী ক্রিকেটার, একাধিক বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্টের সঙ্গে ভারতের উইকেটকিপার-ব্যাটার ঋষভ পন্তের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন।

২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলেছেন তিনি, এই দাবিটি করে মানুষের মনে এমন একটি ধারণা তৈরি করেছিলেন যে তিনি ‘জনপ্রিয়’। এই কৌশলটি তাকে নারীদের প্রভাবিত করতে, ব্যয়বহুল রেস্তোঁরাগুলোতে খাবার খেতে এবং বিল পরিশোধ না করে পাঁচ তারকা হোটেলে থাকতে সহায়তা করেছিল।

২০২২ সালে তিনি দিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলে এক সপ্তাহ অবস্থান করেছিলেন। প্রায় ৭ লাখ ২৮ টাকা বিল বকেয়া রেখেই ওই বিলাসবহুল হোটেল ছেড়ে চলে যান এবং কর্মীদের বলেছিলেন যে তিনি একজন ক্রিকেটার এবং অ্যাডিডাস এই অর্থ প্রদান করবে। হোটেলের কর্মীরা তাকে বিশ্বাস করেছিলেন। পরবর্তীতে বকেয়া পরিশোধের জন্য হোটেলটি বেশ কয়েকবার তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তিনি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছিলেন, এক পর্যায়ে তিনি তার ফোনটিও অফ করে ফেলেন।

মৃণাঙ্ক জানত যে পুলিশ তাকে অনুসরণ করছে, তাই তিনি তার অবস্থান সম্পর্কে কোনও চিহ্ন না রাখার জন্য তার ফোনটি বন্ধ রেখেছিলেন। তিনি তার পরিচিতদের বিশ্বাস করিয়েছিলেন যে তিনি দুবাইতে থাকেন। ঘটনার প্রায় এক বছর পর ২৫ ডিসেম্বর হংকংয়ে পালানোর চেষ্টা করার সময় দিল্লি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিসে তাকে আটক করা হয়।

ধরা পড়ার পর সেই বিকল্প পরিচয়টিকে সামনে নিয়ে আসেন। নিজেকে কর্ণাটকের আইপিএস অফিসার বলে দাবি করেন তিনি। কর্ণাটক পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অলোক কুমার বলে নিজের পরিচয় দেন এবং গ্রেপ্তার এড়াতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ডেকে বলেন, দিল্লি বিমানবন্দরে অবৈধভাবে আটক তার ছেলে মৃণঙ্ক সিংকে সহায়তা করার জন্য তাদের সহায়তা প্রয়োজন।

এরপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। যদিও সে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল এবং দাবি করেছিল যে তার বাবা অশোক কুমার সিং ৮০’র দশকের শেষের দিকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছিলেন। বর্তমানে এয়ার ইন্ডিয়ার ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছেন এবং দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিযুক্ত রয়েছেন।

এছারাও পুলিশ জানতে পেরেছে যে, সে ২০২০-২০২১ সালে ঋষভ পন্তের সঙ্গে প্রায় ২ কোটি ১৪ লাখ টাকার প্রতারণা করেছিল। তার অন্যান্য ভুক্তভোগীদের মধ্যে ক্যাব ড্রাইভার, যুবতী মহিলা, বার, রেস্তোঁরা ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এই প্রতারকের ৪০ হাজারেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে। যেখানে তিনি তার ‘নকল’ বিলাসবহুল জীবনযাপনের ছবি শেয়ার করতেন।

পুলিশ তার ফোন স্ক্যান করে এবং মহিলাদের সাথে তার বেশ কয়েকটি আপত্তিকর ছবি খুঁজে পায় এবং জানায় যে তার ফোনে অপরাধমূলক প্রমাণ খুঁজে পাওয়া গেছে। যার মধ্যে তিনি মাদক কেনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পুলিশ আরও জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা আছে।

প্রতারক মৃণাঙ্ক সিং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক শেষ করে রাজস্থানের ওপিজেএস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদে এমবিএ করেছেন। জানা গেছে তার পরিবার তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে কারণ সে তারপরিবারের অবাধ্য এবং তার উপর পরিবারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ও আস্থা নেই। অভিযুক্তকে দু'দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।