দুঃস্বপ্ন বিদায়ের মিশনে টাইগারদের সামনে পাকিস্তান চ্যালেঞ্জ
ঘরের মাঠে দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আসর শুরু হতেই যেন ফর্ম হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। অচেনা এক দলে পরিণত হয় তারা। নিজেদের সেরাটাই উগড়ে দিতে পারেনি।
তাইতো সুপার টুয়েলভে কোনো জয়ই ধরা দেয়নি। হার আর ফর্মহীনতার বৃত্ত যেন আটকে পড়েছিল দেশের ছেলেরা। সেই ব্যর্থতার গল্পের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার পালা আজ। বাজে পারফরম্যান্সের খোলস ভেঙে জয়ের ধারায় ফেরার সুযোগ। ভেঙে যাওয়া আত্মবিশ্বাসটা জোড়া লাগানোর পালা। দুঃস্বপ্নটা ঝেটিয়ে বিদায় করার নতুন মিশন। সেই লড়াইয়ে টাইগারদের সামনে প্রতিপক্ষ আজ পাকিস্তান।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে আজ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ক্যাপ্টেন বাবর আজমের টিমের সঙ্গে তাদের লড়াই শুরু দুপুর ২টায়। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার হবে টিভির পর্দায়।
টিভিতে দেখার সঙ্গে মাঠের গ্যালারিতে বসে জমজমাট খেলা উপভোগ করতে পারবেন ভক্ত-সমর্থকরা। লাল সবুজের জার্সিধারীদের উজ্জীবিত করতে, ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করতে গ্যালারিতে সরব উপস্থিতি থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের। এদিক থেকে বাড়তি প্রেরণা খুঁজে নিতে পারবেন দেশের ক্রিকেটাররা।
বিশ্বকাপে টাইগাররা খারাপ খেললেও হতাশ নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লাসগো, লন্ডন ও প্যারিস সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার এই কথায় অনুপ্রেরণায় খুঁজে নিয়েছেন ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই অনুপ্রেরণা মাঠের লড়াইয়ে আজ তাদের চাঙ্গা রাখতে ভালোই কাজে দিবে।
কিন্তু শক্তিশালী পাকিস্তানের সামনে আজ তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ। সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব আল হাসান হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নিয়ে আগেই দর্শক হয়ে বসে আছেন। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছেন না সেই অনেকদিন ধরে। তিনিও ফিট নন। আর মুশফিকুর রহিমকে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সামনে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে দলের বাইরে রাখা হয়েছে এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানকে। দলে নেই লিটন দাস, সৌম্য সরকার ও রুবেল হোসেন।
যে কারণে বাংলাদেশ দলে সিনিয়র ক্রিকেটার বলতে এখন কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তরুণদের নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের জন্য তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
দলে সিনিয়র ক্রিকেটার না থাকলেও চিন্তিত নন ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ, ‘এটা ঠিক যে এটা খুবই নতুন একটা দল, তরুণ খেলোয়াড়। অভিজ্ঞতা সব সময় সহায়তা করে, যেহেতু সাকিব নেই, মুশফিক নেই, হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে...। তবে অস্বস্তি ওরকম কখনো বোধ করি না। ওরা থাকলে পরামর্শ সব সময়ই কাজে আসে এবং ওদের সাথে আমি খুব ওপেনলি শেয়ার করতে পারি এবং ওরাও ওদের মতামতগুলো শেয়ার করে।’
বিশ্বকাপ মিশনে যাওয়ার আগে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করেছিল টাইগাররা। সঙ্গে সিরিজ ছিনিয়ে নিয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। তার আগে জিম্বাবুয়ে সফর থেকে টেস্ট ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে আনে। টানা তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের সেই সুখস্মৃতি টাইগারদের নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে উৎসাহ যুগিয়ে যাবে।
তাইতো বিশ্বকাপে নিজেদের ভরাডুবি নিয়ে ভাবছেন না মাহমুদউল্লাহ। মনোযোগ রাখতে চান কেবল পাকিস্তান সিরিজে, ‘বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। দৃষ্টি রাখছি এই টি-টোয়েন্টি সিরিজে। এই তিনটা ম্যাচে আমরা দলের জন্য কতটুকু ভালো অবদান রাখতে পারি ব্যক্তিগতভাবে ওটাই মুখ্য বিষয় এবং ওটায় নজর দিচ্ছি। কারণ যে জিনিসগুলো আগে হয়ে গেছে সে জিনিস নিয়ে চিন্তা করলে বরং নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, আমরা ইতিবাচকভাবে চিন্তা করছি সবকিছু। তারপরও আমি বলব অবশ্যই সিরিজটা চ্যালেঞ্জিং হবে৷’
কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যদের প্রতিপক্ষ আজ শক্তিশালী পাকিস্তান। বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার রয়েছে তাদের দলে। বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের মত ব্যাটসম্যানের সঙ্গে শাহীন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলী ও হারিস রউফের মতো তারকা পেসার রয়েছে তাদের দলে। উইকেট যেমনই হোক না কেন ছেড়ে কথা বলবে না তারা। তবে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে রয়েছে তারকা ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান।
পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলতে তারা অভ্যস্ত। যে কারণে টার্নিং উইকেট ও মন্থর উইকেট দিয়ে তাদের মোকাবেলা করাটা বেশ কঠিনই হবে। পাকিস্তানকে পরাস্ত করতে হলে লাগবে লাগসই মাঠের কৌশল আর দক্ষতা।
পরিসংখ্যানে অবশ্য পাকিস্তানই এগিয়ে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২টি টি-টোয়েন্ট খেলে জিতেছে মাত্র দুটি। বাকি ১০ ম্যাচ জিতে নিয়েছে পাকিস্তান।