জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, `বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র অনেকবার চেষ্টা করেছে গণতন্ত্র ধ্বংস করতে, চিরস্থায়ী হতে। কিন্তু কেউ পারেনি। হানড্রেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোনো জায়গা নাই।'
সোমবার (১৩ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর স্মরণে এক নাগরিক শোক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, 'এখন আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি, কিন্তু স্বৈরতন্ত্রের আলামত চারদিকে। নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এখানে উপস্থিত সবাই ঐক্যের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। স্বৈরতন্ত্র অনেকবার চেষ্টা করেছে এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে, চিরস্থায়ী হতে। কিন্তু কেউ পারেনি। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে হানড্রেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিতে পারি, বাংলাদেশের স্বৈরতন্ত্রের কোনো জায়গা নাই।’
সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে এই সংবিধান প্রণেতা বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আমি শিক্ষকতা করি, তখন থেকে তাকে জানি। আজকে আমি মোটেও নিরাশ নই। কারণ মাহফুজ উল্লাহকে শ্রদ্ধা জানাতে সব মহলের লোক এখানে একত্রিত হয়েছেন। তাকে সম্মান জানাচ্ছেন কেন? কারণ তিনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন, সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। যখন উচিৎ কথা বলা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তখন তিনি উচিৎ কথা বলেছিলেন।’
একই সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তার স্মৃতির স্মরণ করতে গিয়ে বক্তব্যের শুরুতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ফখরুল বলেন, ‘তার (মাহফুজ উল্লাহ) সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এতো ঘনিষ্ঠ ছিল, যে তিনি আমার পাশে থাকবেন না এটা কখনো ভাবিনি। তিনি চলে যাওয়ার কিছুদিন আগে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস ইন্সটিটিউশনে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সেখানে মাহফুজ উল্লাহ বিএনপির কঠিন সমালোচনা করেছিল। এটাই ছিল তার সবচেয়ে বড় গুণ। সত্যকে সত্য বলতে কখনো সে দ্বিধা করেননি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'সে ছাত্র জীবন থেকেই অত্যন্ত সমাজ সচেতন ও রাজনীতিক কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীকালে রাজনীতিতে না থেকে সাংবাদিকতায় আসে। এই পেশায় থেকে সে চেষ্টা করেছে এই সমাজের পরিবর্তনের। চেষ্টা করেছে কীভাবে এই রাষ্ট্রকে কল্যাণমূলক করা যায় তার জন্য কাজ করতে। চেষ্টা করেছে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে।'
ঢাবির সাবেক উপচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহ এমন একটি সময় তাকে আমরা হারিয়েছি, যখন তার সত্যতা, স্বচ্ছতা, সাহসিকতা জাতির খু্ব প্রয়োজন ছিল।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা আর নেই। যেখানে ভোটাধিকার থাকে না, সেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকে না। পেশাজীবী, আইনজীবী আর সাংবাদিকরা যদি দলীয় কর্মী না হতেন তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো।'
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। সাংবাদিক হিসেবে পরিবেশ সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছিলেন। অন্য সবকিছু বাদ দিয়েও তিনি ছিলেন একজন বরেণ্য সাংবাদিক।’
জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘দেশে দুঃসময় চলছে। এই সময় মাহফুজ উল্লাহকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল। দেশে কোনো রাজনীতি নেই। সত্য কথা বলে বেঁচে থাকা যায় না। প্রতিদিন শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, কিন্তু বিচার হচ্ছে না। সাংবাদিক মরে যাচ্ছে, বিচার হচ্ছে না। পুলিশকে কিছু করা যায় না। কারণ, পুলিশকে দিয়ে ভোট চুরি করা হয়েছে।’
শোক সভায় তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাবি আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদাত হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবির, সহ বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।