মাঠের সাকিব ভোটের সাকিব!

  ভোট এলো, এলো ভোট
  • রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাঠের সাকিব ভোটের সাকিব!

মাঠের সাকিব ভোটের সাকিব!

মাগুরা ২ আসন থেকে: গল্পের শুরুটা মাগুরা জেলার ঐতিহাসিক নোমানি ময়দানে। আর কাঠের ব্যাট আর স্কচটেপ টেনিস বল দিয়ে। ভালো খেলতেন বলে শৈশব-কৈশোর থেকেই ডাক পড়ত বিভিন্ন শহর থেকে। ভাড়া করে নেওয়া হত তাকে।

পথ চলার শুরুতেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও দ্রুতগতির বোলিং ছিল তার ক্রিকেট খেলার ধরণ। ইসলামপুর পাড়া ক্লাব দলে (মাগুরা ক্রিকেট লীগের একটি দল) খেলার সুযোগের প্রথম দিনের সত্যিকারের ক্রিকেট বল দিয়ে করা প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে৷

বিজ্ঞাপন

২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় দল, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক। এরপর দেশের গণ্ডি পেরুতে বেশি সময় নেননি ক্রিকেটের জন্য জন্ম নেওয়া বিস্ময় বালক। বিশ্বের বড় বড় ক্রিকেট তারকাকে টপকিয়ে হয়েছেন নম্বর ওয়ান অলরাউন্ডার। ক্রিকেট দিয়েই দেশকে দিয়েছেন অনন্য সম্মান।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন বলছি দেশের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসানের কথা। ২২ গজ থেকে বিশ্ব মঞ্চে যেমন কুড়িয়েছেন সম্মান, তেমনি দেশের মিডিয়ায়ও ছিল তার অবাধ বিচরণ। বছরের বেশির ভাগ সময় সাকিবের কাটত বিজ্ঞাপনের কাজে লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনে। সেখানেও কুড়িয়েছেন সম্মান।

তবে এবার সব গণ্ডি পেরিয়ে রাজনীতিতে পা রেখেছে সাকিব আল হাসান। দেশের পোস্টার বয় এখন রাজনীতিবিদ, ক্ষণ গুনছেন মেম্বার অফ পার্লামেন্ট অর্থাৎ এমপি পদের। ইতোমধ্যেই মাঠের সাকিব থেকে হয়ে উঠেছেন রাজনীতির সাকিব।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ফাত্তা বার্তা২৪.কম’কে বলেন, সাকিব তার বন্ধু সুলভ আচরণে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাথে মিশে গেছেন। সে বিশ্ব অলরাউন্ডার তার সাথে সকলেই একত্রে হওয়ার ঘোষণা দিয়েই কাজ করছে নেতা কর্মীরা। রাজনীতিতে নতুন হলেও তার চলাফেরা আর নেতৃত্ব দানের দক্ষতায় সে এগিয়ে যাবে।

সাকিবকে স্বপ্নের মানুষ উল্লেখ করে স্কুল শিক্ষক পরিমল ঘোষ বলেন, সাকিব এখন আমাদের স্বপ্নের মানুষ। এই এলাকায় তার আগমন অবশ্যই মঙ্গল ময়। যদি সে রাজনীতিতে বাকি জীবন সঁপে দেয়, সে ভালো কিছু করবে আশা করি।

মাগুরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, অল্প দিনেই সাকিব তার আচরণ দিয়ে সকলের মন জয় করেছে। জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল নেতা কর্মী এবং সহযোগী সংগঠনের সকলকে সাথেই নিয়ে কাজ করছে। ভোটের মাঠে সে একদম সবাইকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তার রাজনৈতিক আচরণ বেশ ভালো।

ক্রিকেটের অভিষেকে দীর্ঘ পরিশ্রম আর অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলেও রাজনীতির অভিষেকে করতে হয়নি তেমন পরিশ্রম। রাজার মতোই নেমেছেন রাজনীতির মাঠে, শেখ হাসিনার হাত ধরে রাজনীতির প্রস্তুত সোনার গালিচায় পা রেখেছেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে আকাশ থেকে যেন মাটিতে নেমে এসেছেন সাকিব। নিজ জন্মভূমির উন্নয়নের স্বপ্ন নিয়ে ভোট আবেদনে ঘুরছেন মাগুরা ১ আসনের  গ্রাম থেকে গ্রামান্তর।

মাঠ, পথ-প্রান্তরে থামতেই মনে হচ্ছে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা এসেছেন মাগুরায়। তাকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই মাগুরা বাসীর। যেখানেই যাচ্ছেন দু হাত ভরে মানুষের ভালোবাসা কুড়াচ্ছেন এই ২২ গজের যোদ্ধা।  

মঘী ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দা শাপলা বেগম বলেন, সাকিবকে এতদিন টিভিতে দেখতাম। সে এখন আমাদের কাছে আসছে। তার বড় বড় মানুষের সাথে পরিচয় সে তার রাজনীতি দিয়ে আমাদের অনেক কাজ করে দিতে পারবে। আমাদের এলাকার উন্নয়ন হবে।

মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কবীর হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে আমার এলাকায় সাকিবের বেশ জনপ্রিয়তা এসেছে। অল্পদিনের রাজনীতিতে সে অনেকটা এগিয়ে গেছে। আগামী নির্বাচনে সে বিপুল ভোটে জয় পাবে।

শেখ হাসিনার হাত ধরে রাজনীতির প্রস্তুত করা গালিচায় পা রাখলেও, বাস্তবে মাঠের রাজনীতিতে একদম শিশুই বলা যায় সাকিবকে। বাহুর নৈপুণ্য দিয়ে বিশ্ব সেরা হলেও রাজনীতিতে নৈপুণ্য দেখাতে প্রয়োজন দীর্ঘ সময়।

২০১৮ সাল থেকেই রাজনীতির মাঠে নামার চেষ্টা ছিল সাকিবের, সেই চেষ্টা পূরণ হলো ২০২৩ এসে। তবে রাজনীতির মাঠে নামলেও এখন তার বড় চ্যালেঞ্জ কতটা সময় বের করতে পারবেন রাজনীতির জন্য। সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার অভ্যাসটাও বা পূর্ণতা পাবে কতদিনে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার রাজনীতির।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন গুলো এখন সাকিবের চলার পথ মসৃণ করলেও, পরের পথ টা হবে আঁকাবাঁকা আর ঢালু, সাথে পাহাড়ি খাদ তো থাকবেই। সব কিছু উপেক্ষা করে ক্রিকেটের সাকিব থেকে হয়ত একদিন রাজনীতির সাকিব হয়ে উঠবে, যেভাবে হয়েছিল বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার।