তিনি সরকারি কর্মচারী ও প্রার্থী, আবার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাও!

  ভোট এলো, এলো ভোট
  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

তিনি সরকারি চাকরি করেন। সেই চাকরির কথা গোপন করেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হয়েছেন প্রার্থী। গল্পটা এখানেই শেষ নয়। সেই তিনি আবার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাও।

এই 'অলরাউন্ডার' ব্যক্তিটি হচ্ছেন চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রাম নগরের আংশিক) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

সরকারি কর্মচারী হয়েও আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। আবার একই আসনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের তালিকায়ও রয়েছে তার নাম। তবে সালাউদ্দিনের দাবি, তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।

কিন্তু সালাউদ্দিনের কর্মস্থল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তিনি গত নভেম্বর মাসেও বেতন তুলেছেন। অর্থাৎ মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময়ও তিনি সরকারি চাকরিতে ছিলেন।

চট্টগ্রাম-৪ আসন থেকে রকেট প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারি হিসেবে কর্মরত আছেন। ২০১১ সালে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন সালাউদ্দিন। তখন থেকেই তিনি সেখানে কর্মরত রয়েছেন।

সীতাকুণ্ড উপজেলার মোট ৯২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী রোববার। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের একটি তালিকা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকায় স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে রকেট প্রতীকের (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নামও রয়েছে। তবে বিষয়টি জানার পর ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে গত রোববার চিঠি দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় সালাউদ্দিন নিজেকে ওষুধ ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়েছেন। সরকারি চাকরির বিষয়টি তিনি গোপন করেছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বিষয়টি ধরা পড়েনি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তালিকায় ত্রুটিবিচ্যুতির কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। পরে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। সেখানেও তার প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ বহাল থাকে। পরে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান। গত শুক্রবার আদালতের আদেশের কপি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেন তিনি। পরদিন শনিবার সালাউদ্দিনকে রকেট প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

সনাক-টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি আইন-১৯৭২ এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়ালে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে-"কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত অবস্থায় কোনোভাবেই সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে হলে তাকে অবশ্যই চাকুরি থেকে অব্যাহতি নিতে হবে।" কিন্তু ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে তালিকায় তার নাম থাকার অর্থ হচ্ছে- তিনি এখনো সরকারি কর্মচারী। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে-এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সঙ্গে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার পর থেকে আজ পর্য়ন্ত এই প্রক্রিয়ায় জড়িত সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তারে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।'

তবে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন বলেন, 'আমি ২০১২ সালে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি থেকেও অব্যাহতি নিয়েছি।'

তবে সালাউদ্দিন নভেম্বর মাসে বেতন তুলেছেন জানিয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, 'তিনি নভেম্বর মাসে কিছুদিন অনুপস্থিত ছিলেন। তবে বেতন তুলেছেন। চাকরিতে না থাকলে কীভাবে বেতন তুললেন। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের তালিকাটি আরও দুই মাস আগে পাঠানো হয়েছে। তখনতো সালাউদ্দিন প্রার্থী হননি। এরপর তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।'

নুর উদ্দিন আরও বলেন, 'সালাউদ্দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৩ নভেম্বর তাকে শোকজ করা হয়। বিষয়টি তখন সিভিল সার্জন কার্যালয়কেও জানানো হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৮ ডিসেম্বর আবারও তাকে শোকজ করা হয়। তিনি কোনো জবাব দেননি। এর মধ্যে অবশ্য তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। পরে গত শনিবার তিনি প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন জেনে আবারো সিভিল সার্জন কার্যালয়কে জানানো হয়েছে।'

সরকারি চাকরি থেকে অবসের তিন বছর পর নির্বাচন করা যায় জানিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি চাকরি থেকে অবসরের তিন বছর পর নির্বাচন করতে পারবেন। সেখানে সরকারি চাকরিতে থেকে নির্বাচন করার প্রশ্নেই আসে না। সরকারি বিধি ভঙ্গ করে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এ ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর তাকে শোকজ করেছি। তবে তিনি কোনো জবাব দেননি। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।'

সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, 'স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাপ্ত তালিকা থেকে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে ভোটগ্রহণের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।'