বিএনপি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী: তথ্যমন্ত্রী

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী: তথ্যমন্ত্রী

বিএনপি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি মানবাধিকারের কথা বলতে পারে না কারণ তারা নিজেরাই চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছেন, রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে দলকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে তারা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিলো, এখনো করছে।’

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতর সম্মেলন কক্ষে উপমহাদেশের স্মরণীয় রাজনীতিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে আহমেদ ফিরোজ গ্রন্থিত ‘সোহরাওয়ার্দী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন। গ্রন্থকার, তথ্য অধিদফতরের সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার খালেদা বেগম এবং মো. আবদুল জলিল মোড়ক উন্মোচনে অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকরা আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করা। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করা হয়েছিলো। সেটি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে হয়েছিলো। এরপর বাংলাদেশে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে ১৯৭৭ সালে নির্বিচারে সেনা ও বিমান বাহিনীর অফিসারদেরকে বিনাবিচারে হত্যা করা।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শুধু নামের মিল থাকায় মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় সে চিৎকার করে বলছে- আমি সেই ব্যক্তি নই, আমি সেই ব্যক্তি নই, কিন্তু কে শোনে কার কথা। এমনও ঘটেছে, ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পরে রায় হয়েছে। অল দিজ আর ডকুমেন্টেড। জিয়াউর রহমানের এডিসি ছিলেন যিনি এখন কানাডায় থাকেন, তিনি নিজে বলেছেন, এই মৃত্যুদন্ডের ফাইলগুলো জিয়াউর রহমান সকালবেলা নাস্তার সময় স্বাক্ষর করতেন। বিদেশ যাত্রাকালে প্লেনে ওঠার আগে সিঁড়িতেও মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেছেন। এভাবে মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে।’

সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাদের গ্রেনেড হামলায় ২২ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ২ জন অজ্ঞাত পরিচয় নিহত, ৫শ’ জন আহত হয়েছিলো আর সেই হামলার পর যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হয়েছিলো সেটির রিপোর্ট ছিলো গাঁজাখুরী। আর এই হত্যাকান্ড নিয়ে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বেগম খালেদা জিয়াসহ তার সংসদ সদস্যদের হাস্যরস, এগুলো চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন।’

বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ নিয়ে প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি বলতে চোরাগোপ্তা হামলা করে গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানো আর মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করা। তারা তাদের সন্ত্রাসীদের নামিয়েছে, নেশাখোরদের টাকা দিয়ে এগুলো করাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে দিনমজুরকে সারাদিনের ৮০০-১০০০ টাকা মজুরির জায়গায় ২০০০ টাকা ধরে দিয়ে বলে এটা মেরে দিয়ে আসো। এগুলো দুস্কৃতিকারীদের কাজ। বিএনপি-জামায়াত এ দুটি সংগঠন এখন দুস্কৃতিকারী সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা দুস্কৃতিকারীদের দমন করতে বদ্ধপরিকর।’

আওয়ামী লীগের জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন এবং জাতীয় পার্টি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত ১৪ দলীয় জোটগতভাবেই আমরা নির্বাচন করবো। আমাদের কাছে শরিকদের সবসময় গুরুত্ব আছে, সে জন্য জোটগতভাবে আমরা নির্বাচন করছি। আমাদের এককভাবে নির্বাচন করার শক্তি, ক্ষমতা, সমর্থন আছে কিন্তু শরিকদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বিধায় আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আর জাতীয় পার্টি প্রায় ৩শ’ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। তারা যেভাবে নির্বাচন যুদ্ধে নেমেছে সে জন্য তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। জাতীয় পার্টির সাথে ২০০৮ সালে আমরা জোটগতভাবে মহাজোট গঠন করেছিলাম, গতবারও তারা আমাদের সাথে ছিলো, এবারও সেটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

সোহরাওয়ার্দী ছিলেন রাজনীতির ধ্রুবতারা

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে ‘সোহরাওয়ার্দী’ গ্রন্থমোড়ক উন্মোচনকালে গ্রন্থকার আহমেদ ফিরোজ এবং কথাপ্রকাশ প্রকাশনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ দেশের রাজনীতির আকাশে একজন ধ্রুবতারা। তিনি শুধুমাত্র অবিভক্ত বাংলার এবং পাকিস্তানেরও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তা নয়, তিনি দেশ বিভাগের সময় বাংলা এবং আসাম নিয়ে একটি স্বাধীন দেশ রচনার চেষ্টা করেছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আজীবন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছেন, গণতন্ত্রকে যারা হরণ করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন। দেশ বিভাগের পর যখন পাকিস্তানের ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীভূত হলো এবং বাঙালিরা বঞ্চিত হচ্ছিল, তখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সেটির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনেক ভূমিকা ছিলো উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনে যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব তিনি হচ্ছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও শ্রমিকদের সাথে নিয়েই তার রাজনীতি শুরু হয়েছিলো। তার ওপর পশ্চিম পাকিস্তানে পার্লামেন্টের সামনে আক্রমণ হয়েছিলো, অপদস্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু কোনো কিছুর কাছেই তিনি কখনো মাথানত করেননি। আমৃত্যু গণতন্ত্রের জন্য তিনি আপোষহীন ছিলেন। আজকে তার এই ৬০তম শাহাদৎবার্ষিকীতে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

৮০ পৃষ্ঠার ‘সোহরাওয়ার্দী’ গ্রন্থে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জন্মপরিচয়, ছাত্রজীবন, বৈবাহিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, জীবনের শেষ দিনগুলো, মৃত্যু ও জীবনপঞ্জী গ্রন্থিত হয়েছে। বইটির গ্রন্থকার কবি, গল্পকার ও গবেষক আহমেদ ফিরোজের ১০টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কসহ প্রায় বিশটি গ্রন্থ রয়েছে। তিনি ৪টি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছেন।