তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি হত্যা-খুনের রাজনীতিতেই বিশ্বাস করে, খুনের রাজনীতি করে। বেগম খালেদা জিয়ার জ্ঞাতসারে তারেক রহমান ২১ আগস্ট ঘটিয়েছে। আর ১৫ আগস্ট ঘটিয়েছে জিয়াউর রহমান। এরা যতোদিন রাজনীতির মাঠে থাকবে রাজনীতির মাঠ কলুষমুক্ত হবে না, ঘৃণা এবং সাংঘর্ষিক রাজনীতি কখনো যাবে না।
সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যে এই গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হয়েছিলো। ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণে দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, তখনকার সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি এবং জঙ্গিগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সেখানে যে গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিলো সেগুলো সেনাবাহিনী যুদ্ধ ময়দানে ব্যবহার করে। এই গ্রেনেড তো সন্ত্রাসীদের কাছে থাকার কথা না। এগুলো সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন সেনা কর্মকর্তা আলামত হিসেবে একটি গ্রেনেড রেখে দিয়েছিলো। সে কেন রেখে দিলো সে জন্য তাকে সেনাবাহিনী থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কারণ অন্য সব আলামত ধ্বংস করা হয়েছিলো, হামলার স্থান পানি দিয়ে ধুয়ে দেওয়া হয়েছিলো। জননেত্রী শেখ হাসিনা সে দিন আহত হলেও সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ভাগ্যক্রম বেঁচে গেছেন, আমাদের নেতারা বঙ্গবন্ধুকন্যার চারপাশে মানবঢাল তৈরি করেছিলো। আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মী সে দিন নিহত হয়েছে, পাঁচশ’রও বেশি নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। সমগ্র পৃথিবী নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছে। কিন্তু সংসদে একটি শোক প্রস্তাব আনতে বা কোনো আলোচনাও করতে দেওয়া হয়নি, বরং হাস্যরস করা হয়েছে।
সাংবাদিকরা এ সময় ‘দেশ-বিদেশের কিছু মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠন ২১ আগস্ট বিষয়ে সরব নয়’ এ বিষয়ে প্রশ্নে মন্ত্রী হাছান বলেন, কিছু মানবাধিকার ব্যবসায়ী আছে, দেশেও আছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও আছে। কিছু মানবাধিকার সংগঠনও এটাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে। আর কিছু দেশ মানবাধিকারকে একটা অস্ত্র হিসেবে নিয়েছে অন্য দেশকে ঘায়েল করার জন্য। যারা এগুলো করে তাদের দেশে যে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, সেটি নিয়ে তো কোনো কথা হয় না। যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বা অগ্নিসন্ত্রাসের নিন্দা জানায় না, ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডকে রাজনৈতিক বিষয় আখ্যা দিয়ে কিছু বলতে চায় না, এরা আসলে মানবাধিকারকর্মী বা মানবাধিকার সংগঠন নয়, এরা মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা করে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রায় আড়াইমাস পর চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে মিছিল করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের একটি অংশ।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ২০-৩০ জন তরুণ জামালখান এলাকায় কয়েকমিনিটের মিছিল করে সটকে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন মিছিলে অংশ নেওয়া অনেকের কাছেই অস্ত্র ছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিছিলের ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। মিছিলের তিনটি ভিডিও আওয়ামী লীগের ভ্যারিফাইড পেজেও শেয়ার করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, সামনে কয়েকটি মোটরসাইকেল ধীরগিততে এগিয়ে চলছে। সেগুলোর পেছনে ২০-৩০ জনের মিছিল। তাদের বেশিরভাগেরই মুখে ছিল মাস্ক। সেখানে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে 'শেখ হাসিনার ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই'-স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের। দ্রুতই তারা মিছিলটি শেষ করে চলে যান।
মিছিলে কারা নেতৃত্ব দিয়েছেন বা কারা অংশ নিয়েছেন সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে ওই এলাকায় জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের একচ্ছত্র দাপট ছিল।
ধারণা করা হচ্ছে মিছিলে যোগ দেওয়ারা সবাই তারই কর্মী।
সরকার পতনের আগেরদিন ৪ আগস্ট সুমনের সরাসরি নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করতে দেখা যায় আসকারদীঘি পাড় এলাকায়। সরকার পতনের পর আড়ালে চলে যান এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়েছেন বলেও খবর রটেছে।
এদিকে ছাত্রলীগের মিছিলের খবর ছড়ালে ঘটনাস্থলে শিবিরের নেতাকর্মীরা যান বলে জানা গেছে।
ছাত্রলীগের মিছিল করার ঘটনায় ছাত্র-জনতার মধ্যেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তাদের অনেকেই ফেসবুকে এ নিয়ে লেখালেখি করছেন। বলছেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি চালিয়ে শিক্ষার্থীদের হত্যা করা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই সুযোগে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে তারা দেশের পরিস্থিতি পুনরায় অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে।
এই ঘটনায় কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই প্ল্যাটফর্মের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ এই ঘোষণা দিয়ে রাত ২টায় বলেন, 'খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের জন্য শহীদের রক্তরঞ্জিত রাজপথে স্লোগান দেওয়ার প্রতিবাদে শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় জামালখানে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। দলমত নির্বিশেষে সকল ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে পুনরায় নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।'
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে যারা কাজ করেছে পুলিশ- প্রশাসন তথা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদ থেকে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে জেলা ভিত্তিক সাম্য ও মানবিক সমাজ বিনির্মানে দিকনির্দেশনা মূলক যৌথ কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি বলেন, যারা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। তাই তাদেরকে বিভিন্ন পদ থেকে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়ার পরও দেশ ও বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশে যা করেছে বিএনপি তা করবে না।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানের সভাপতিত্বে যৌথ কর্মী সভায় আরও বক্তব্য দেন, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন তারেক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আবু জাহিদ ডাবলু প্রমুখ।
বাংলাদেশকে বুঝতে হলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও দর্শনকে বুঝতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের হলরুমে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডশনের সুবর্ণ জয়ন্তীতে তিনি এই কথা বলেন।
আব্দুল মঈন খান বলেন, যারা যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যায় তারা বীর উত্তম পায় না। যারা যুদ্ধের সম্মুখ সারিতে থেকে যুদ্ধ করে বীর উত্তম উপাধি পায়। জিয়াউর রহমান নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। তিনি বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও কোকো রহমানের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন।
আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকের বাংলাদেশকে বুজতে হলে জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও দর্শন বুজতে হবে। জিয়াউর সেইদিন খাল খনন করেছেন বলেই আজকে আমরা বৃহৎ আকারে বন্যা থেকে মুক্তি পেয়েছি। শহীদ প্রেসিডেন্ট বলেছেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এটি হচ্ছে একটি মালার মত। বড় ফুল হচ্ছে বাঙ্গালি। আরো ফুল রয়েছে চাকমা, বারমা, খাসিয়াসহ সকল উপজাতি ও বাঙ্গালি মিলে জাতীয়তাবাদ।
মঈন খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয় আমরা দেখেছি তিনি কিভাবে মানুষের কল্যানে কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। অনেকে বলেন তিনি সৈনিক ছিলেন। কিন্তু তিনি সৈনিক হয়েও কখনো বলে নাই সকল ক্ষমতা বন্দুকের নলের গোড়ায়।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বলেছেন ব্যক্তির চেয়েও দল বড় দলের চেয়েও রাষ্ট্র বড়। পৃথিবীর অনেক দেশের সংবিধান দেখেছি কোথাও এই শব্দ নেই। জিয়াউর রহমান এমন এক ব্যক্তি ছিলেন যারা তার সঙ্গে মতবিরোধ করতেন তাকে আরো বেশি কাছে টেনে নিতেন। রাজনীতি হচ্ছে ঐক্যর রাজনীতি। তিনি রাষ্টের দায়িত্ব নেওয়ায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ তখন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
মঈন খান বলেন, উন্নয়নের রাজনীতি বলে একটি দল লুট করেছেন। কিন্তু শহীদ প্রেসিডেন্ট বলেছেন দেশ হবে উৎপাদনমুখী। কারণ উৎপাদন ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।
মঈন খান বলেন, আমি জানিনা কোনো বিশ্ব নেতার মৃত্যতে লক্ষ লক্ষ মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে লাখ লাখ মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন।
জোবাইদা রহমান বলেন, বিগত ২৫ বছরে এই ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠেছে। মানুষের জন্য এই ফাউন্ডেশন। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন কখনো করোনায় অক্সিজেন সিলেন্ডার, কখনো বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আমি আশা করছি আগামীতে যেকোনো দুর্যোগে এই ফাউন্ডেশন কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়েদা রহমান।
লক্ষ্মীপুরে দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলার শাখার কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার(১৮ অক্টোবর) সকালে জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্মীপুর পৌরসভা উত্তর অঞ্চলের ব্যানারে শহরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে এ কর্মী সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সকাল ৭টা থেকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কর্মীরা সম্মেলনে যোগ দেন।
লক্ষ্মীপুর শহর জামায়াতের আমির আবুল ফারাহ নিশানের সভাপতিত্বে সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের ঢাকা মহানগরী উত্তর সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিম।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের আমির এসইউএম রুহুল আমিন ভূঁইয়া, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সভাপতি মমিন উল্যাহ পাটওয়ারী, শহর সেক্রেটারী জহিরুল ইসলাম, জামায়াত নেতা মনজুরুর আলম মিরন,সামছুল আলম, নাছির উদ্দিন ও মাসুদুর রহমান প্রমুখ।
জামায়াত সূত্র জানায়, বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের গুম-হত্যা ও নির্যাতনের কারণে লক্ষ্মীপুরে জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্য কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারেনি। এ সময়ে গোপনেই সংগঠনের কাজ এগিয়ে নিতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার বিতাড়িত হওয়ার পর দেশে এখন একটা স্থিতিশীল নিরাপদ পরিবেশ বিরাজ করছে। এতে ১৭ বছর পর লক্ষ্মীপুর পৌর জামায়াতের প্রকাশ্যে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।