বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকছেই!
ক্ষমতাসীন মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ সরকারের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছে বিএনপি। সম্প্রতি সেই চেষ্টা অনেকটাই সফল বলে বিএনপি ও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা বিভিন্ন ফোরামে বলে আসছিলেন। কিন্তু জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বাঁধে বিপত্তি।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমন্বয়ক ড. কামাল ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী জোরালোভাবে জামায়াত ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম এই দুই উদ্যোক্তার আপত্তি যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াত ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকতে পারে না। তাদের নিয়েও কোনো ঐক্য নয়। যদিও জামায়াতে ইসলামী সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে জামায়াত ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে জামায়াতের উপস্থিত প্রতিনিধি জানান, তাদেরকে পাশ কাটিয়ে যদি ঐক্য হয় তাতেও রাজি আছে দলটি।
বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে জামায়াতে ইসলামী প্রধান বাধা হলেও আন্দোলন ও ভোটের মাঠে তাদের গুরুত্ব কম নয়। সেটা বিবেচনায় নিয়ে জামায়াতকে সঙ্গেই রাখতে চায় দলটি।
রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকারের উদ্দেশ্যে বেশকিছু দাবি জানিয়েছে দলটি। একইসঙ্গে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তারও একটা ফিরিস্তি ঐ জনসভায় তুলে ধরা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে পরোক্ষভাবে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়েই যে বিএনপি পথ চলবে তা স্পষ্ট।
জনসভায় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশ্যে পরোক্ষভাবে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপি ঐক্যের জন্য সবসময় প্রস্তুত। এই আন্তরিকতাকে কেউ দুর্বলতা ভাববেন না। লোক নেই, জন নেই, বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করে অনৈক্যের সুর বাজালে জনগণের কাছে ধিকৃত হবেন। সেই কারণেই গণতন্ত্রের দাবিতে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে যারা রাজপথের আন্দোলনে আসবে তারাই আমাদের বন্ধু। সে যদি শয়তানও হয়। সুতরাং গণতন্ত্রের স্বার্থে যারা লড়াই করবে, বিএনপি তাদেরকে না করতে পারবে না। আমরা সবাইকে নিয়ে ঐক্য চাই।
একই সভায় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, এখন একটা আওয়াজ উঠেছে জাতীয় ঐক্য হবে। হবে কিনা হবে আল্লাহই জানেন। সরকার বহু চেষ্টা করছে যাতে ঐক্য না হয়। হলে ভালো, না হলে ক্ষতি নেই। যাই হোক, ঐক্য হোক না হোক বিএনপিকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা অন্য কোনো দিকে তাকাতে রাজি নই।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকের যে ঐক্য- এই ঐক্যে মানুষের মধ্যে একটি আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছে। একটি চেতনা এবং শক্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই ঐক্যের ডাক দিয়েছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার উক্তি, ঐক্যেই মুক্তি। গণতন্ত্রের মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই; জনগণের মুক্তি চাই।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার আওয়ামী লীগ ও জামায়াত মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করেছিল সেই প্রসঙ্গ তোলেন।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য শেখ হাসিনা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন। তার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ছিল। আজকে জামায়াতকে তাদের পক্ষে নেয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যার জন্ম এদেশে হয়েছে- যার ভোটার তালিকায় নাম আছে সে ভোট দিতে পারবে যে দলেই হোক না কেন।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বার্তা২৪.কমকে বলেন, সকল দলের নিজস্ব একটা রাজনীতি আছে। যেমন আমাদের ২০ দল তো আর এক দল না। বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য দলেরও রাজনীতি আছে। যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ারও নিজস্ব রাজনীতি আছে। সেখানে সবাই একমঞ্চে আসতে পারলে ভালো। কোনো অসুবিধা নাই। না আসতে পারলে যার যার অবস্থান থেকে কমন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করবো। সেজন্য প্রথম চেষ্টা হচ্ছে সকলে একটা প্লাটফর্মে বসা। সেটা যদি না হয় কারো অসুবিধা থাকে। তাহলে সে তার অবস্থান থেকে আন্দোলন করবে অসুবিধা নেই। কর্মসূচি একই থাকবে।