মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কবর দিয়েছে আ.লীগ-বিএনপি: জিএম কাদের

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জিএম কাদের/ ছবি: সংগৃহীত

জিএম কাদের/ ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা মানায় না। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কবর দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি ।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে পার্টির নির্বাহী ও কেন্দ্রীয় সদস্যদের সাংগঠনিক সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে তারা যেভাবে সংবিধান সংশোধন করেছে, তাতে দেশে গণতন্ত্র চর্চার পরিবেশ নেই। দেশে আইনের শাসন নেই, সুশাসন নেই। দেশের আইন শৃঙ্খলা -পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ, জননিরাপত্তার অভাব সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মূল্যায়ন করলে এটা প্রমাণ হবে, দেশের মানুষ এখন স্বাধীনতার সুফল পাচ্ছে না।

জিএম কাদের বলেন, ১৯৯১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দলীয়করণ করেছে, যাকে স্বৈরতন্ত্র বলা যায়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয়করণে দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি করলেই চাকরি ও ব্যবসায় সুযোগ আছে, সাধারণ মানুষের কোন অধিকার নেই। হিসেব মত দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, কিন্তু যারা সরকারি দল করে তাদের আয় বেড়েছে হাজার হাজার গুণ। কিন্তু দেশের মানুষ মাথাপিছু আয়ের সুফল থেকে বঞ্চিত।

তিনি বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো। দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সৃষ্ট বৈষম্যের শিকার হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করে না, তারা রাজনীতি করে ক্ষমতা গিয়ে লুটপাট করার লক্ষ্য নিয়ে। লুটপাট করে তারা এত টাকার মালিক হয়েছে যে, ছোট খাটো নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোটি কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নামে। যারা রিকশা ভাড়া দিতে পারতো না, তারা এখন পাজেরো গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। যারা বাসা ভাড়া দিতে পারতো না, তারা অসংখ্য বাড়ির মালিক। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা কালো টাকার সাথে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ কলুষিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী যা চান, তাই পাস হয়। তার ইচ্ছের বাইরে কিছুই হয় না। তাই দেশের নির্বাহী বিভাগের সাথে আইন সভা পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আর বিচার বিভাগের প্রায় ৯৯ ভাগই রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে। তাই সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দলীয়করণের কারণে একনায়কতন্ত্র এখন স্বৈরতন্ত্র পর্যায়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় পার্টির ওপর হামলা ও মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে। অফিস দখল করেছে, গুন্ডা ও পুলিশ পাঠিয়ে সভা সমাবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। জাতীয় পার্টির ওপর বিএনপি যে অত্যাচার করেছে, আল্লাহর বিচারে তারা এখন দশগুণ বেশি ফিরে পাচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় পার্টির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে, জাতীয় পার্টিকে ভাঙনের মুখে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই জাতীয় পার্টির বন্ধু নয়।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, আওয়ামী লীগ লুটপাটের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও জাতির জনককে অসম্মান করেছে। কারণ, শুধু ভৌগলিক স্বাধীনতার জন্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। দেশে এখন আর বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। লুটপাটের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাখো-কোটি টাকা পাচার করেছে। দেশে আইনের শাসন নেই, লেখক মুশতাক কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। নির্যাতনের শিকার কার্টুনিস্ট কিশোর জেল থেকে মুক্তি পেলেও এখনো অসুস্থ।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, নির্বাহী সদস্য মফিজুর রহমান মফিজ, আবু সাঈদ স্বপন, গোলাম মোস্তফা বাবু মন্ডল, মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান চৌধুরী, মোঃ নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া প্রমুখ।