‘খেতাব বাতিলের এখতিয়ার জামুকা'র নেই'

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম

অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম

মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের কোনো এখতিয়ার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকার নেই বলে জানিয়েছেন ‘ফেড’ ফোর্সের ‘এ’ ও ‘বি’ কোম্পানির কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকা সভায় জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন বলেন, ‘জামুকার এগুলো কাজ না, জামুকা হলো কে ভাতা পাবে কি পাবে না, কে মুক্তিযোদ্ধা, কে মুক্তিযোদ্ধা হবে না। বীর উত্তম, স্বাধীনতার ঘোষক, জেড ফোর্সে অধিনায়ক, সেক্টার কমান্ডার, সেনাবাহিনী প্রধান, জেনারেল, প্রেসিডেন্ট … তাদের ব্যাপারে এখতিয়ার আছে। হু ইজ জামুকা? কে এদের… চিনি কেউ  এদের। কোথায় জিয়াউর রহমান, কোথায় এগুলো।’

বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, ‘কী কারণে হঠাৎ করে জামুকা একটা প্রস্তাব করলো আমার বোধগম্য নয়। জুমকা কি? মুক্তিযুদ্ধের সময় তিন ধরনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একটা হচ্ছে মিলিটারি ফোর্স, আরেকটা হলো ফ্রিডম ফাইটার, তিন নাম্বার হলো যুদ্ধের শেষ দিকে বিএলএফ নামে এটা সংগঠন গঠন করা হয়েছিলো যেটার বাংলা মুজিব বাহিনী। আমরা যারা মিলিটারি ফোর্স আমাদের কনট্রোল করে কোর নামে একটা সংস্থা আছে- সেন্টার অফিসার্স রেকর্ড অফিস। আমাদের সঙ্গে জামুকার কোনো সম্পর্ক নাই। জামুকা হলো যেমন ফ্রিডম ফাইটার তৎকালীন ছাত্র-কৃষক-যুব-শ্রমিক যারা যুদ্ধে গেছেন, ট্রেনিং করেছেন, আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে যুদ্ধ করেছেন- তাদের ভাতা, তাদের সন্মানী, তাদের সুযোগ-সুবিধা কিভাবে অধিক থেকে অধিকতর দেয়া যায় দিস ইজ দ্যা জব অব জামুকা। জুমকার কোনো এখতিয়ার নেই আমাদের মিলিটারি অফিসার যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের বিষয় কিছু বলা, সিদ্ধান্ত নেয়ার।’

তিনি বলেন, ‘জামুকা তাদের নিজস্ব বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা তাদের এখতিয়ার বর্হিভুত এবং আমাদের ‍মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী যে কথা বলেছে এটাও তার এখতিয়ার বর্হিভুত। এখন প্রশ্ন দাঁড়াল- বীর উত্তম, বীর শ্রেষ্ঠ, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক- মামা বাড়ির আবদার নাকী না ছেলের বাড়ির মোয়া। যখন চাইবেন মামার বাড়ির হারটা কেড়ে নেবেন। এটা তো আমরা যুদ্ধ করে অর্জন করেছি। জিয়াউর রহমান ঘোষণা করেছেন হি ডিকলার ওয়ার এবং নিজে যুদ্ধ করেছেন। তিনি এই মেজর হাফিজসহ সিলেট সেক্টার, সিলেট শহর মুক্ত করেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমান কল পেয়ে আমরা যুদ্ধে নেমেছি। জিয়াউর রহমান তার ফ্যামিলি ছেড়ে, বাচ্চা রেখে যুদ্ধে গেছেন। আমরাও আমাদের ফ্যামিলিকে বাঘের মুখে রেখে আমরা যুদ্ধ করেছি। ইন্ডিয়ায় এসেছি, সৈন্য নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছি আগস্ট মাসে। ৯ ডিসেম্বর আমার নেতৃত্বে বরিশাল মুক্ত হয়েছে। আমি তিনবার গুলিবিদ্ধ হয়েছি। আমাকে বীর উত্তম দিয়েছে। কেউ আমাকে এই খেতাব দয়ায় দেয়নি। এই খেতাব কেড়ে নেয়ার আপনারা কে?’

মেজর হাফিজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করি, জনগনকে আর হাস্যস্প্রদ করবেন না। এই উদ্যোগ যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে আপনি আপনার পিতাকে অসন্মান করছেন। ডোন্ট চিফ ফরগেট ইট এভাব। এই খেতাব নিলো কি গেলো- কিছু আসে যায় না, তিনি মৃত্য এখন। খেতাব নিলেও জিয়াউর রহমান জিয়াউর রহমান থাকবেন, লক্ষ-কোটি মানুষের কাছে, অনাগত ভবিষ্যতের কাছে তিনি এই দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রূপেই ইতিহাসে চিহ্নিত থাকবেন এবং জনগনের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসন তার চির অম্লান থাকবে।’

১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে তৎকালীন উপ-সেনা প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কখনো সম্পৃক্ত ছিলেন না দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তো বিচার হয়েছে। কৈ কোনো সাক্ষী, কোনো ব্যক্তি কেউ কী বলেছে যে, উনি এই ধরনের হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন বা এটা করেছেন। ওয়াট ইজ দিন।”

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌ্ধুরী, সেলিমা রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।