৩ দিন ধরে চাল-ডাল নেই স্কুটিচালক শাহনাজের

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মানুষ আশা দেখাতে পছন্দ করে। সে আশায় বুক বাঁধি আমরা অসহায়রা। কিন্তু দিন শেষে সে আশা বা প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় না। অনাহারে মুখ লুকিয়ে থাকতে হয় আমাদের।

দেড় বছর আগে স্কুটি হারিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে পাওয়ার মাঝের সময়গুলোতে অনেকেই আমার পাশে থাকার কথা বলেছিলেন। দায়িত্ব নিয়েছিলেন মেয়েদের এবং আমার পরিবারের। কিন্তু আজ যখন ঘরের বাহিরে বের হতে পারছি না, তখন দুই মেয়ে নিয়ে অনাহারে জীবন কাটাতে হচ্ছে আমাদের।

বিজ্ঞাপন

এভাবে বার্তা২৪.কম-কে নিজের অবস্থা সম্পর্কে জানিয়েছেন স্কুটি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা জীবন যুদ্ধের সংগ্রামী নারী শাহনাজ আক্তার পুতুল। ২০১৯ সালে ১৫ জানুয়ারি স্কুটি চুরি হয়ে যাওয়ার পর যার দিকে পুরো দেশ মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।

শাহনাজ বলেন, ২৬ তারিখ পর থেকে রাস্তায় আর স্কুটি বের করতে পারিনি। মূলত আমি দিন এনে দিন খাই। যে কটা টাকা জমা ছিল তা দুইদিন খেয়েছি। তাছাড়া মেয়েদের টিউশনির টাকা দিয়েছি। তারপর থেকে ঘরে কোনো চাল ডাল নেই। ধার করে বা হাত পেতে নেব সেই অবস্থাতেই আমি নেই। এখন আল্লার দিকে তাকিয়ে আছি। সবকিছু যত দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমার জীবন চলতে থাকবে, না হলে আমার আর কোন পথ নেই।

শাহনাজ আক্তার পুতুলের ছিনতাই হওয়া স্কুটি ফিরে পাওয়ার প্রায় দেড় বছর হতে চললো। এখনো তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন এই স্কুটি চালিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের চালক বৃদ্ধি হওয়ায় উপার্জন কিছুটা কমে গেছে তার। তবে স্কুটি চালিয়ে শহর চষে বেড়ানোর নেশা বা পেশা কোনটাই দমেনি তার। স্কুটি চালিয়েই সংসার চালানোর পাশাপাশি দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন সংগ্রামী এই মা।

তিনি বলেন, এখনো এই শহরের মানুষ বদলায়নি। এখন নারী হয়ে রাস্তা-ঘাটে যখন স্কুটি চালাই, মানুষ নিয়মিত টিজ করে আমাকে। আগে চুপচাপ থাকতাম। এখন আর থাকি না। প্রতিবাদ করি। তাতে কি! এসব করে কত জনকে আমি পরিবর্তন করবো?

এর আগে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি ঢাকায় তখন অনেক কিছু ছাপিয়ে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের একজন স্কুটিচালক ও তার স্কুটি চুরির গল্প নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আর ঘটনার কেন্দ্রে ছিলেন শাহনাজ আক্তার নামের এই নারী। সেসময় একটি লাইন দিয়েই বোধহয় তিনি সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিলেন- ‘আমার বাইকে চড়তে আপনার আপত্তি নাই তো?’