চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের একটি বাসার ছাদ থেকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর চকবাজার এলাকার দেবপাহাড়ে তার পৈত্রিক বাসা থেকে চকবাজার থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
নাজনীন সরওয়ার কাবেরী কক্সবাজারের রামুর বাসিন্দা। তিনি কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমলের বোন। কাবেরীর বাবা ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীও ছিলেন সাবেক সাংসদ ও রাষ্ট্রদূত।
স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, রাত ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে একদল নেতাকর্মী কাবেরীর বাসার সামনে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ প্রথমে বাসার ভেতরে ঢোকে, এরপর ছাদে গিয়ে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে। কাবেরীকে চকবাজার থানায় নিয়ে যাওয়ার পর দেবপাহাড় এলাকায় একদল আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দিয়ে মিছিল করে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা তিনি বলেন, রাত ১১টার দিকে তাকে আমরা হেফাজতে নিয়েছি। তাকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হবে। সেখানে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
রংপুরের মিঠাপুকুরের আট্পুনিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফায়ার ফাইটার সোহানুজ্জামান নয়ন। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১১টায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে ৯টার পরে নিজ বাড়িতে পৌঁছায় সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের মরদেহ।
বেলা আড়াইটায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। প্রথম জানাজায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাতে কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্স যখন গ্রামে ঢোকে। তাকে এক নজর দেখার জন্য অ্যাম্বুলেন্স-এর পিছে ছুটেন হাজারো গ্রামবাসী। পুরো বাড়ি জুড়ে তৈরি হয় আহাজারি, কান্নার রোল। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা মরদেহ নামানোর পর তাকে একনজর দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। পরে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। এ সময় তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয় ।
রাত সাড়ে ১০টায় বাড়ির পাশের একটি মাঠে আয়োজন করা হয় জানাজার। এখানে নয়নের বাবা আক্তারুজ্জামানসহ স্থানীয় লোকজন এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন। এ সময় তুলে ধরা হয় কীভাবে মারা গেল নয়ন। বলা হয় রাষ্ট্রীয় কাজে থাকার সময় ট্রাক চাপায় এই মৃত্যুর ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। উল্লেখ করা হয় এরইমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এই দোয়া কামনা করেন বক্তারা।
পরে নামাজে শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার জানাজা এবং দাফন কাজে হাজারো মানুষ অংশ নেন। তার রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠানে কান্নার রোল পড়ে।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে যখন আগুন লাগে। প্রায় সোয়া ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ১৯ ইউনিট।
সচিবালয়ের আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী রংপুরের সোহানুজ্জামান নয়নের (২৪) বাড়িতে শোকের মাতম। বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ফায়ার কর্মী হিসেবে যোগদান করলেও স্বচ্ছলতা ফেরানোর আগেই লাশ হয়ে ফিরল নয়ন।
জানা গেছে, গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টায় সচিবালয়ের আগুন নেভানোর জন্য অন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর সঙ্গে কাজে যোগ দিয়েছিলেন সোহানুজ্জামান নয়ন। এ সময় হঠাৎ বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। দ্রুত তাকে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয় না নয়নকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ফায়ার কর্মী সোহানুজ্জামান নয়নের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের আট পনিয়া গ্রামে।
নয়নের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষক আখতারুজ্জামানের এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে নয়ন ছোট। ছোট বেলা থেকে তার ফায়ার সার্ভিসে কাজ করার স্বপ্ন ছিল। বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ২০২২ সালে যোগদান করেন ফায়ার কর্মীর চাকরিতে। নয়নের মূল কর্মস্থল ছিল সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশনে। সেটি ঢাকার তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে সংযুক্ত ছিল। দরিদ্র পরিবারে স্বপ্ন পূরণের একমাত্র ভরসার মৃত্যুতে নিভে গেল আলো। পরিবার,আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বইছে শোকের মাতম। তার মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকাজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। শেষ বারের মত একনজর দেখতে দূর- দুরান্ত থেকে বাড়িতে এসে ভিড় করছেন স্বজনরা।
নিহত নয়নের বাবা আখতারুজ্জামান জানান, দরিদ্র পরিবারে খুব বুকভরা স্বপ্ন নিয়া খুব কষ্টে মানুষ করছি সন্তানকে। নয়নের অনেক স্বপ্ন ছিল এই চাকরিকে ঘিরে। উচ্চপদ আর পরিবারের অভাব মুছতে চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করছিল। চাকরির বয়স কেবল ২ বছর, শুরুর আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
স্বপ্ন পূরণের আগেই ঝড়ে গেল নয়নের প্রাণ। ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিবারের অভিযোগ, আগুন নেভানোর সময় পুরো এলাকা যদি সুরক্ষিত রাখা হতো তাহলে এই দিন দেখতে হতো না। তারা ঘাতক ট্রাক চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলার অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয়রা।
ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে স্থানীয় রঞ্জু মিয়া নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়ে প্রতারিত হয়েছেন হাবিব উল্লাহ (৩২) ও মো. শাহজাহন (২২)। সম্পর্কে তারা দুজন মামা-ভাগ্নে। বর্তমানে সৌদি আরবে আরেক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা।
পরিবারের কাছে ভিডিও কলে প্রবাসে বন্দি জীবনের বর্ণনা জানিয়ে নিজেদের উদ্ধার ও দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের নান্দাইলের গাঙ্গাইল ইউনিয়নের পাঁচগয়েমপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী আকবর ছেলে হাবিব উল্লাহ ও গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. শাহজাহান ১০ লাখ টাকা দিয়ে গত ১৩ নভেম্বর সৌদি আরবে যান। বাংলাদেশ থেকে রঞ্জু মিয়া নামের এক ব্যক্তি তাদের পাঠালেও ওই দিন সৌদি আরবের রিয়াদে পৌঁছানোর পর দুজনকে রিসিভ করেন সেখানকার দালাল আলম মিয়া। গত কয়েক দিনে ঘুরেফিরে ওই এলাকার তিনটি জায়গায় রাখা হয়েছে তাদের। বিদেশে পাঠানো ব্যক্তির কথামতো কোনো ধরনের কাজ পাননি তারা।
কোনো ধরনের কাজ না পেয়ে তারা দেড় মাস ধরে আটক থাকা অবস্থায় শুধুই ডালের পানি দিয়ে ভাত খেয়ে জীবন পার করছেন। পরিবারের লোকজন এ অবস্থার কথা শুনে ও মোবাইলে দৃশ্য দেখে পাগলপ্রায়। বিদেশে পাঠানো দালাল রঞ্জু মিয়াও এখন লাপাত্তা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ভিডিও কলে কান্নায় ভেঙে পড়ে শাহজাহান তার পরিবারকে বলেন, ‘আমি বাঁচতে চাই। দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করো।’
শাহজাহান আরও বলেন, তারা দেড় মাস ধরে আটক রয়েছেন রিয়াদের সোলাই-১৫ এলাকায়। হয়তো নির্ধারিত সময়ের পর এখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে।
পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, বিদেশে নেওয়ার আগে দালাল রঞ্জু মিয়া জানিয়েছিলেন, যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা বেতনের কাজ পাবেন। কিন্তু সৌদিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। এ অবস্থায় রঞ্জুকে খোঁজ করে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ফোন করলেও তিনি ধরেন না।
সৌদিতে থাকা প্রতারণার শিকার শাহাজানের স্ত্রী শরমিন জানান, স্বামীর মোবাইলে ভিডিও কল দেন। স্ত্রীকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়ে শাহজাহান বলেন, 'আমি বাঁচতে চাই, দেশে যাওয়ার তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করো।'