রাইড শেয়ারিং অ্যাপস চালু না করেই যাত্রীসেবা!

  • সাদিয়া কানিজ লিজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সড়কে যত্রতত্র পার্কিং অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল চালকদের, ছবি: বার্তা২৪.কম

সড়কে যত্রতত্র পার্কিং অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল চালকদের, ছবি: বার্তা২৪.কম

বর্তমানে যানজটপূর্ণ নগরীতে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকেই পছন্দের তালিকায় রাখেন উবার-পাঠাওয়ের মতো অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং অপারেটরের মোটরসাইকেল। জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এসব মোটরসাইকেল সেবায় এরইমধ্যে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম আর ঝুঁকি। ফলে ঘটছে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনাও।

অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নাম রেজিস্ট্রেশন করা থাকলেও অনেক চালক অ্যাপস চালু না করেই ভাড়া চুক্তিতে মোটরসাইকেলে সেবা দিচ্ছেন। অনেক যাত্রীও অসচেতনভাবে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য বেছে নিচ্ছেন নিয়মবহির্ভূত এসব মোটরবাইকের সাহায্য। এ ক্ষেত্রে অনেকে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সাধারণ চালকদেরকেও ভুল করে ডেকে বসেন। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় সাধারণ চালকদের।

বিজ্ঞাপন

রাইড শেয়ারিং সেবা নির্ধারিত অ্যাপসের মাধ্যমে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, কাঁটাবন, পল্টনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থানে এমন চালকদেরকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। যারা নিয়ম না মেনে ভাড়া চুক্তি করে যাত্রী সেবা দিচ্ছেন। সিএনজি-রিকশা চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে যেমন দর কষাকষি চলে ঠিক একইভাবে এসব চালকদের সঙ্গেও দরকষাকষি চলে। যার ফলে ইচ্ছেমত ভাড়া হাঁকিয়ে বসতে পারেন নিয়ম ভঙ্গকারী এসব মোটরসাইকেল চালকরা।

অ্যাপস চালু না করেই মোটরসাইকেলে অনেকে যাত্রীসেবা দিচ্ছেন এবং নিচ্ছেন

ভাড়া চুক্তিতে যাত্রী উঠানোর ফলে অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে যাত্রী বা চালকের কোনো তথ্যই সংরক্ষিত থাকে না। এতে উভয়েরই ঝুঁকি থেকে যায় বলে মনে করছেন সাধারণ চালকরা।

মোহাম্মদ আহনাফ নামে এক সাধারণ চালক বলেন, ‘কারওয়ানবাজার মোড়ে আমি একদিন মোটরসাইকেল নিয়ে আমার এক বন্ধুর অপেক্ষায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়েছিলাম। এর মধ্যে কম করে হলেও ৫-৬ জন আমাকে জিজ্ঞেস করেছে ভাই যাবেন? এটা খুবই বিব্রতকর। ঝুঁকি এড়াতে এক্ষেত্রে যাত্রী-চালক উভয়েরই সচেতনতা প্রয়োজন।’

গতবছর পাঠাও চালক মো. মিলন অ্যাপস চালু না করে মাত্র ৫০ টাকার চুক্তিতে যাত্রী তুলেছিলেন তার মোটরসাইকেলে। কিন্তু যাত্রীবেশী নুর উদ্দিন সুমন গন্তব্যে পৌঁছাতে নয়, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে গভীর রাতে মালিবাগ থেকে গুলিস্তান যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেলে উঠেন। এরপর মোটরসাইকেল যখন মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারের উপর ওঠে তখন চালকের গলা কেটে মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় সুমন।

কারওয়ানবাজার এলাকায় অ্যাপস ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশনকৃত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক বলেন, ‘আসলে অ্যাপস চালু করলে যে ভাড়া আসে তা দিয়ে আমাদের পোষায় না। দেখা গেল কারওয়ানবাজার থেকে যাত্রী উত্তরা যাবে, রাস্তা ফাঁকা থাকলে বা ডিসকাউন্ট থাকলে মাত্র ৬০-৭০ টাকা ভাড়া আসে। সে জন্যই আমরা অনেক সময় অ্যাপস চালু করি না। ভাড়া চুক্তিতে যাই।’

ভাড়া চুক্তিতে যাত্রী ওঠা-নামা করাচ্ছেন অনেকে

বিশেষজ্ঞদের মতে, যাত্রীদের সচেতনতার অভাব কিছুটা থাকলেও চালকরা বেশি অসচেতন। তারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলেই যাত্রীরা এভাবে চলাচল করার কথা চিন্তা করে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দায়িত্বহীনতার কারণেও এমন ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান ড. মো. কামরুল আহসান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা শুনেছি যে, মাঝে মাঝে রাইড শেয়ারিং যানবাহনগুলো অ্যাপসে চলে না। কিন্তু কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। এরপরও আমরা অ্যাপসভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের আহ্বায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এসব অনিয়মের বিষয়ে আমরা শুধু মুখেই বলতে পারব। এসব বিষয় সমাধান করার দায়িত্ব একমাত্র বিআরটিএর। এই অনিয়মগুলো আমাদের সকলের চোখে পড়ছে বিআরটিএর চোখে কেন পড়ছে না, তা চিন্তা করার বিষয়।’

নিসচার আহ্বায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে তাদের (বিআরটিএ) নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। তাদেরকে তো কারও অভিযোগ করার কথা নয়। তারা একটি নিয়ম করে দিলেন সেটা মানুষ ঠিকভাবে পালন করছে কিনা এটা খুঁজে বের করা তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। কেউ অভিযোগ করার পর তারা ব্যবস্থা নেবেন এটা তো হতে পারে না। তাদের দায়িত্ব তো শুধু পারমিশন দেওয়া নয়, মানুষ তা ঠিকমত পালন করছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।’

রাইড শেয়ারিং ভিত্তিক চালকদের রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি পার্কিং করে রাখার বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘বিষয়টিকেও নজরদারির মধ্যে আনতে হবে। তাদের তো পার্কিং করে রাখার কথা নয়। তারা তো চলতি অবস্থায় থাকবে। অ্যাপস চালু করার পর যাত্রী ডাকলে তারা আসবে।’

রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের মার্কেটিং এবং জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক সায়েদা নাবিলা মাহাবুব বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কেউ রাস্তায় যদি অ্যাপ চালু না করে যাত্রী ওঠায় সেক্ষেত্রে যাত্রীর বা তার কোনো ডকুমেন্ট আমাদের কাছে থাকে না। তাই আমাদের কাছে দু-একটা অভিযোগ আসলেও আমরা কিছু করতে পারি না। তবে এটার জন্য পুলিশ এবং রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া আমরা সবাইকে ইনফর্ম করছি যে, এটার ঝুঁকি কি কি থাকতে পারে।’

এসব বিষয়ে চালকদেরকে কোনো ট্রেনিং দেওয়া হয় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা চালক রাইড রেজিস্ট্রার হওয়ার আগে আমাদের এখান থেকে একটা ট্রেনিং পায়। যার মাধ্যমে সড়কের সব নিয়ম সম্পর্কে জানিয়ে থাকি এবং বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করি।’