দেশের রাজনীতিতে তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নারীদের আরো এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনীতিতে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের সততার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নারীদের সমানভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়ে সবার সহাবস্থানে একমত পোষণ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বুধবার (১১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে 'রাজনীতিতে নারী: সমতার জন্য সকলে' শীর্ষক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, 'আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। আশা করি অন্য দলগুলোও এটি করবে। আরপিও অনুযায়ী প্রতি পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে, কিন্তু আমরা এখনও তা এচিভ করতে পারিনি। অন্য দলের তুলনায় আওয়ামী লীগ নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। আমি মনে করি সংসদে সংরক্ষিত আসনে ৫০ জনের বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন নেই, তবে সাধারণ আসনগুলোতে নারীদের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। যাদের সাধারণ আসনে মনোনয়ন দিচ্ছি তাদের দয়া করে দিচ্ছি না, তারা নিজ যোগ্যতায় মনোনয়ন পাচ্ছেন'।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের আসার ক্ষেত্রে আরো অনেক প্রোগ্রেস দরকার। রাজনীতিতে আরো বেশি সততা-নিষ্ঠা আনার জন্য নারীদের আরো সুযোগ করে দিতে হবে। আমরা নির্বাচনগুলোতেও সেটি প্রয়োগে সচেষ্ট থাকব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'পুরুষ-নারীদের রাজনীতিতে সমান অধিকার বিষয়ে আমরা সেনসিটিভ আছি। কিন্তু রেসপনসিভল হওয়ার অভাব আছে। রাজনীতিতেও কিছুটা সততা থাকা দরকার। রাজনীতিতে কতটা সততা আছে, কতজন সৎ লোক বাংলাদেশে রাজনীতি করছে। সংসদে ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী। একসময় যারা রাজনীতি করতে তারা জনগণকে দিতে আসত, কিন্তু এখন কি হচ্ছে। রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় সংস্কার আনতে হবে। পয়সার জোরে অনেকে রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে এতে তারা আরো অনেক টাকার মালিক হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দাঁড়ানো অর্ধেক সন্ত্রাসী, তাদের ভয়ে ভদ্রলোকরা নির্বাচনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে মহিলাদের এগিয়ে আসতে আগে সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার। পরিবেশ যখন সবার সমমান হবে তখন বলা যাবে ইক্যুয়াল'।
তিনি বলেন, আমি সংসদে রিজার্ভ সিটের পক্ষে না, কেন মহিলাদের সরাসরি মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনে আনা হবে না। আসল হলো মাইন্ড সেট। রাজনীতিতে বড় ধরনের কলুষতা চলে এসেছে। এটার সংস্কার করা না গেলে নারীদের স্পেস কোথায় থাকবে। তাদের তো সুযোগ করে দিতে হবে। কোন দল ক্ষমতায় থেকে নারীদের জন্য কি করেছে সে তথ্যও আমার কাছে আছে। বিএনপিতে আমাদের কমিটিতে ১৩ শতাংশ নারীদের জায়গা দিতে পেরেছি। আশা করছি আগামী কাউন্সিলে আমরা ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত করতে পারব। তবে যোগ্যতা থাকলে ৬০ শতাংশ নারী কমিটিতে জায়গা পাবেন, সেখানে কোনো সীমাবদ্ধতা রাখার প্রয়োজন নেই।
এসময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, নারীর মুক্তির সঙ্গে পুরুষের মুক্তি জড়িত। নারী কোনো আলাদা সত্ত্বা না, নারীর পরিচয় মানুষ। সামাজিক মূল্যবোধের ধসকে ঠেকাতে হবে। নারীদের মুক্তির জন্য সব দলকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নারীর কর্মকাণ্ড অনেকটা নির্ভর করে। আমাদের নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। জবাবদিহিতা না থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারীরা। নইলে পাপিয়াদের উত্থান হয়। এসব উত্থান সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে। আমরা এখনো বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বাংলাদেশে নারী পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে, তাহলেই সবাই মিলে উন্নত দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারব।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক দলে ইমপাওয়ারমেন্ট দরকার। আরপিওতে সংশোধনী এনে রাজনৈতিক দলের কমিটিতে নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে আওয়ামী লীগ ২০ শতাংশ কোটা পূর্ণ করেছে। কেউ প্রশ্ন তুলেছে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়াও ইফেকটিভ পদে রাখার বিষয়ে। আমাদের সভাপতি নারী, প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে নারী আছে, যুগ্ম সম্পাদক পদে নারী, সম্পাদক মণ্ডলীতেও নারী আছেন। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ের যারা কাজ করেছেন, তাদের মধ্য থেকেও অনেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। হয়ত সবাইকে কমিটিতে আনা সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতে অন্যদেরকেও কমিটিতে সম্পৃক্ত করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) ডিআরজি পরিচালক র্যাডল ওলসন বলেন, বাংলাদেশের নারীরা অনেক বিরোধিতার শিকার হচ্ছেন। আমেরিকাতেও নারীরা অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীরা অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। তারপরও দেখেন আপনারা কতদূর এসেছেন। আপনাদের সহায়তা করতে পেরে আমরা খুশি। আপনাদের পাশে থেকে আমরা শুধুমাত্র সহায়তা করতে পারি, কিন্তু কাজগুলো আপনাদেরই করতে হবে। নারীর জয় সবার জয়।
এর আগে সম্মেলনের সাধারণ আলোচনায় আওয়ামী লীগের একজন নারী নেত্রী বলেন, বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ কমিটিতে ২০ ভাগ নারী কোটা পূরণ করেছ, সেখানে কারা আছে আমরা তা জানতে চাই। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নেতাদের স্ত্রী-বোন আর আত্মীয়রাই জায়গা পাচ্ছেন। আমরা যারা মাঠের কর্মী তারা যদি হতাশ হয়ে বাসায় বসে থাকি তাহলে নারীর সমতা কিভাবে অর্জন করব। আমরা এতো স্ট্রাগল করেও কেনো জায়গা পাচ্ছি না সেটি আমরা প্রশ্ন।
সম্মেলনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ১০০ নারী এবং পুরুষ রাজনৈতিক নেতা অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ'র চিফ অব পার্টি ডানা ওল্ডস্, ডিএফআইডি বাংলাদেশের প্রধান জুডিথ হারবার্টসন বক্তব্য রাখেন।