এমআরপি বই সংকটে ৪ মাসেও মিলছে না জরুরি পাসপোর্ট

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট, ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট, ছবি: সংগৃহীত

ই-পাসপোর্ট চালু করলে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) চাহিদা কমবে- এমন ধারণা থেকে চলতি বছর এমআরপি বইয়ের মজুদ কম রেখেছিল ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। তবে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় অফিসগুলোতে শুরুই করা যায়নি ই-পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া। ফলে বিভাগীয় অফিসগুলোতে জমা পড়া আবেদনের প্রেক্ষিতে পাসপোর্ট ছাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

অধিদফতরে এমআরপি সংকটের কারণে জরুরি ফি দিয়ে আবেদনের পরও নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট মিলছে না রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসেও। পাসপোর্ট ছাড়ের নিয়ম ১১ কার্যদিবসের মধ্যে হলেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে চার থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত। ফলে চিকিৎসার উদ্দেশে দেশের বাইরে যেতে যারা আবেদন করছেন, তারা বিপাকে পড়েছেন। সংকটের সুযোগে অফিস ঘিরে দৌরাত্ম্য বাড়ছে দালালদের। দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়ার আশায় দালালদের খপ্পরে পড়ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগীরা বলছেন- নিয়ম অনুযায়ী জরুরি ফি দিলে ১১ দিন এবং সাধারণ ফি দিলে ২১ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ছাড় করার কথা। কিন্তু এখন জরুরি বা সাধারণ ফি’র কোনো পার্থক্যই নেই। নির্ধারিত সময়ের পর নিয়মিত পাসপোর্ট অফিসে সকাল-দুপুর ধর্না দিতে হচ্ছে।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে- সংকটের মূল কারণ ঢাকা থেকে দ্রুত পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে না আসা। ই-পাসপোর্ট চালু ও এমআরপির মধ্যবর্তী সময় হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত তা কেটে যাবে। আর বিশ্লেষকরা বলছেন- ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসগুলোর আরো সক্ষমতা বৃদ্ধি করে শক্তিশালী করা উচিত। তাহলে সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে।

রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে প্রায় ৮০০০ পাসপোর্টের আবেদন ঝুলে আছে। নিময় মেনে নির্ধারিত সময়ে এসব পাসপোর্ট বিতরণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই প্রতিদিন বিভাগীয় অফিসে দিনে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০টি নতুন আবেদন জমা পড়ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী ঢাকা অফিস থেকে পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে আসছে না। ফলে তারা সেবাপ্রত্যাশীদের চাহিদা পূরণে সংকটে পড়েছেন।

অসুস্থ বাবার চিকিৎসার জন্য ভারতে নিতে নিজের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়ার এলাকার নাহিদ সারোয়ার। আবেদন অনুযায়ী গত বছরের ২৮ নভেম্বর তার পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা ছিল। প্রায় তিন মাস অপেক্ষার পর রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) তিনি পাসপোর্ট নিতে বিভাগীয় কার্যালয়ে এসেছিলেন।

নাহিদ জানান, বাবার চিকিৎসার জন্য অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে তিনিও ভারত যেতে চেয়েছিলেন। এজন্য জরুরি পাসপোর্টের আবেদন করেন। তিনি নির্ধারিত সময়ের দীর্ঘদিন পরও পাসপোর্ট পাননি তিনি। তার বাবার অসুস্থতা বাড়তে থাকায় বাধ্য হয়ে বিকল্প উপায়ে ভারতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে হয়েও তিনি যেতে পারেননি। এর কারণ, পাসপোর্ট হাতে না পাওয়া।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘১১ দিনের পাওয়ার কথা ছিল, অথচ সাড়ে তিন মাস পর পাসপোর্ট পেলাম। এরই মধ্যে আমার বাবা চিকিৎসা নিয়ে ভারত থেকে ফিরে এসেছেন। এই পাসপোর্ট এখন আর আমার প্রয়োজন নেই। কী করবো এই পাসপোর্ট নিয়ে!’

শুধু নাহিদ নয়, তার মতো শতশত আবেদনকারী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবেদনকারীদের বেশিরভাগই চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে চান। ভুক্তভোগীরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী- প্রক্রিয়া শেষে নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হয়। কিন্তু ৩-৪ মাস পরও এসএমএস না পেয়ে তারা অফিসে এসে ধর্না দিচ্ছেন।

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের একজন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘চলতি বছরের শুরুতে ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ মনে করেছিল- ই-পাসপোর্টের কারণে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বইয়ের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। এই কারণে এমআরপি বই মজুদও কম করা হয়। কিন্তু সারাদেশে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু না হওয়ায় এখন পাসপোর্ট বইয়ের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সহকারী পরিচালক আজমল কবির বলেন, ‘আমার অফিসে এখন প্রায় ৮০০০ পাসপোর্ট বিতরণ প্রক্রিয়া আটকে আছে। প্রতিদিনই নতুন আবেদন জমা পড়ছে ১৫০ থেকে ২০০। কিন্তু সেই তুলনায় ঢাকা থেকে প্রিন্ট হয়ে আসছে খুব কমসংখ্যক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট চালু ও এমআরপির মধ্যবর্তী সময় এখন। এই কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে এ সমস্যা শিগগিরই কেটে যাবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর রাজশাহী শাখার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, ‘সারাদেশের পাসপোর্টের মূল কাজটিই হয়ে থাকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। একারণে আবেদনকারীদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। বিশেষ করে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসগুলো আরো সক্ষমতা বাড়িয়ে শক্তিশালী করা উচিত।’