সাভারে অস্বাস্থ্যকর খাবার হোটেলের হিড়িক

  • মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাভার এলাকার একটি খাবার হোটেল

সাভার এলাকার একটি খাবার হোটেল

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই। এসব এলাকায় বসবাসরত বেশির ভাগ মানুষ স্বল্প আয়ের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জীবিকার তাগিদে তারা এসব এলাকায় এসে পাড়ি জমিয়েছেন।

অস্বচ্ছল এসব মানুষ হরহামেশা কম মূল্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হোটেল-রেস্তরাঁয় খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেন। মূলত দরিদ্র মানুষের অভাব-অনটনের সুযোগ নিয়ে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অস্বাস্থ্যকর খাবার হোটেল। যেখানে খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন অনেকেই।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের পাশে ফুটপাতে নোংরা পরিবেশে গড়ে উঠেছে বিপুলসংখ্যক খাবার হোটেল। আর এসব হোটেলে নির্দ্বিধায় খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছেন রিকশাওয়ালা, দিনমজুর ও পোশাক কারখানার অসংখ্য শ্রমিক।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশিত হয় সাভারের অনেক হোটেলে

আশুলিয়ার এরকম একটি খাবার হোটেলে মাসিক চুক্তিতে খাবার খাওয়া পোশাক শ্রমিক সুমন বার্তা২৪.কমকে বলেন, সকাল ৮টার আগে কারখানায় পৌঁছাতে হয়। ছুটির কোন টাইম-টেবিল নাই। তাছাড়া সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় রান্না করতে ভালো লাগে না। তাই বাধ্য হয়ে এসব খাবার খেতে হয়। প্রথম প্রথম এসব খাবার খেয়ে সমস্যা হতো, তবে পরে সয়ে গেছে। প্রতি মাসে ২ হাজার ৮শ’ টাকার বিনিময়ে তিন বেলা খাবার এখান থেকেই খাচ্ছি।

বগুড়ার জয়পুরহাট থেকে ধামরাইয়ে এসে রিকশা চালান সানোয়ার। তিনি ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকার হোটেল রিজিক নামের একটি খাবার হোটেলে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৫/৭শ’ টাকা আয় হয়। এর মধ্যে ৩৫০ টাকা রিকশার জমা দিতে হয়। ভালো হোটেলে খাবার খেলে বাড়িতে কোন টাকা পাঠাতে পারব না। তাই এসব হোটেলই আমাদরে ভরসা।

সাভারের হোটেল ব্যবসায়ী কালাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার সরবরাহের। আমরা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী, তাই স্বল্প আয়ের মানুষের খাবার সরবরাহ করি। ভালো জায়গায় হোটেল দিতে গেলে অনেক টাকা লাগে। এত টাকা নাই তাই রাস্তার পাশে ছোট করে হোটেল ব্যবসা করছি। আর আমাদের হোটেলের খাবার আমরাও খাই। খারাপ খাবার হলে তো আমরা খেতাম না। কাউকে জোর করেও খাবার খাওয়াচ্ছি না। যার ইচ্ছে সে খাবে, যার ইচ্ছে হবে না সে খাবে না।

সাভার এলাকার একটি খাবার হোটেল

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা খাবার খেলে অবশ্যই স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। এসব খাবার খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, আলসার পর্যন্ত হতে পারে। এর মধ্যে হেপাটাইটিস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। সেজন্য রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করা উচিত।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের (ভূমি) উপ-কমিশার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজোয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা অপরাধ। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এসব খাবার সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।