ঢাকা, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটনে একই তাপমাত্রা!
ঢাকায় যখন সন্ধ্যা সাতটা বেজে ছাব্বিশ মিনিট, নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে তখন সকাল আটটা ছাব্বিশ মিনিট। গোলার্ধের ব্যবধানে দিন ও রাত্রির তারতম্য হলেও তাপমাত্রায় হেরফের নেই। নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের বাংলাদেশের তাপমাত্রা আর উত্তর গোলার্ধের যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুটি শহরের তাপমাত্রা চলছে সমানে সমানে।
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে আঠারো ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মতোই ছিল ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা। ঢাকাতেও তখন ছিল ঠিক একই তাপমাত্রা। (রাত বাড়লে সে তাপমাত্রা আরও কমেছে।) নিউইয়র্ক সফররত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হোসাইন কবির বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি তুলনামূলক তাপমাত্রার একটি ছবিও পাঠিয়েছেন।
তাপমাত্রার এই তথ্য জলবায়ু পরিবর্তনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। সচরাচর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের তাপমাত্রা হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেটা যে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে, তাপমাত্রার রেকর্ড থেকে সেটা বোঝা যাচ্ছে। আমাজনে বা অস্ট্রেলিয়ায় আগুন, দুবাইয়ে প্রবল বন্যা ইত্যাদি ঘটনাও ঘটছে। এতে মরুভূমি অঞ্চলের আবহাওয়ার রকমফের পরিষ্কার হচ্ছে। বস্তুত বিশ্ব আবহাওয়া ব্যবস্থাই উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। যে দেশে যেমনটি হওয়ার কথা নয়, তেমনটিই হচ্ছে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্ষেত্রে।
সম্ভবত এ কারণেই গেল ২০১৯ সালের ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার হয়েছে 'ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি'। জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ু দূষণ, পানির স্তর হ্রাস, পরিবেশ বিপর্যয় ইত্যাদি বৈশ্বিক এজেন্ডা সকল দেশেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
বাংলাদেশেও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার রূপ-চরিত্র প্রবলভাবে বদলে যাচ্ছে। গরমে অস্বাভাবিক উষ্ণতার মতো শীতেও তীব্র হিমপ্রবাহ সঞ্চারিত হচ্ছে। রেকর্ড ভেঙে কমছে তাপমাত্রা। কুয়াশার ঘনত্ব ও ব্যাপকতা অনেকাংশে বেড়েছে। বেড়েছে সুতীব্র শীতল বায়ুর প্রবাহও।
আবহাওয়া বিভাগ চলতি মাসে একাধিক শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে। মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টির কথাও বলা হয়েছে। শীতে অচিন্তনীয় বৃষ্টি এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাংলায় হাল্কা-কোমল শীতের ঐতিহ্য ইতিমধ্যেই লুপ্ত হয়ে প্রবল শীত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের সর্বত্র।
হিমালয়-সংলগ্ন উত্তরাঞ্চলে শীত আরও ভয়ংকর থাবা বিস্তার করে চলেছে। উত্তর জনপদে এই শীতের দিনগুলো মূলতঃ কুয়াশায় মোড়ানো। রোদের দেখা মিলছে কালেভদ্রে। রাতে শীতার্ত শিশির ঝরছে টুপটাপ বৃষ্টির মতো।
জলবায়ু পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেঞ্জ বলে যে কথাগুলো এ যাবতকালে বিশেষজ্ঞদের সেমিনার ও বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচিত হতো তা সম্ভবত দোর গোড়ায় এসে পড়েছে। বাংলাদেশ আর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের তাপমাত্রা একই সমান্তরালে চলার ঘটনাটি সে প্রমাণবহ। চরম ভাবাপন্নতা যেভাবে প্রকাশিত হচ্ছে আবহাওয়ায়, তাতে গরম ও শীত উভয়টিই মাত্রা ছাড়িয়ে সহ্যের সীমা অতিক্রম করছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে যে গরম ও শীত ছিল চেনা ও সহনীয়, তা-ও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এবারে শীতের তীব্রতায় সে পরিবর্তন আরও বাস্তব ও কঠিনভাবে উপলব্ধি করছে মানুষ।