বুড়িগঙ্গা নদীতে বাল্কহেড ডুবে চার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২ জানুয়ারি) ভোর পৌনে ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কান্দেবপুর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে লুৎফর রহমান, বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার ইলুহার এলাকার মহিবুল্লাহ, পিরোজপুরের বটবাড়ির ছোট আরজি এলাকার রাশেদ হাওলাদারের ছেলে বাবু এবং পিরোজপুরের কাউখালীর চাষেরকাঠি এলাকার আব্দুর রব তালুকদারের ছেলে মোস্তফা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোলরুমের টিম লিডার আতিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে শুক্রবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযানে যায় নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এ সময় ডুবে যাওয়া বাল্কহেড থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা মরদেহগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রাজশাহীর বিহাস চোদ্দপায় এলাকার শারমিন আক্তার। টিউশনি ফি দিয়েই গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান ‘ন্যাচারস টাচ’। সেই বাগানে আজ ৫০০’রও বেশি প্রজাতির গাছ গড়ে উঠেছে। তার স্বপ্ন, পরিশ্রম এবং সাহসের ফলে আজ এই সবুজ সাম্রাজ্য সবার নজর কেড়েছে।
শারমিনের বাগানের পেছনের গল্পটি শুরু হয়েছিল ছোটবেলায়। টিফিনের টাকা জমিয়ে কেনা শুরু করেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। পরে বিয়ে হলে স্বামীর কাছে গাছ কেনার জন্য আবদার করতেন। পড়াশোনার টিউশন ফি বাবদ কিছু টাকা প্রয়োজন হলে, তিনি তার স্বামীর কাছ থেকে বাড়তি টাকা চাইতেন। তিনি ৫ হাজার টাকা চেয়ে ১০ হাজার নিতেন, আর সেই বাড়তি টাকায় কিনতেন গাছ। কসমেটিক কেনার নামেও তিনি বাড়তি টাকা নিতেন।
শারমিন জানান, একবার ১৬ হাজার টাকা লাগবে বলে ২৫ হাজার টাকা চান। সেই বাড়তি ৯ হাজার টাকার গাছ কিনেন। এভাবেই তার গাছ সংগ্রহের শুরু।
শুরুতে শারমিনের বাগানটি ছিল সাধারণ, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিশ্রমের ফলে তা বিশাল আকারে পরিণত হয়। এখন তার নার্সারিতে ৫০০’রও বেশি প্রজাতির গাছ রয়েছে। তিনি মূলত থাইল্যান্ড থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ সংগ্রহ করেন। দেশের বড় বড় বিক্রেতাদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করেন বিভিন্ন ধরনের গাছ। তিনি জানান, তার কাছে সবচেয়ে কম মূল্যে গাছ কিনতে পারবেন ক্রেতারা। অন্য কোথাও ১০০ টাকায় গাছ পেলে, তার কাছে সেটি ৭০ টাকায় পাওয়া যাবে।
শারমিন শুধু গাছের ব্যবসা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তিনি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রেখেছেন। তার নার্সারিতে গাছ কিনলে ১০০ টাকার গাছ কিনলে উপহার পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন গাছ সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তাই আমি এখন ছাত্রদের সাহায্য করতে চাই।
শারমিন আক্তার বলেন, আমার নার্সারি ‘ন্যাচারস টাচ’ গড়ে তোলার পেছনে অনেক কষ্ট ও স্বপ্ন রয়েছে। যখন আমি টিউশনের ফি দিয়ে গাছ কিনতে শুরু করি, তখন চিন্তা করিনি যে এটি একদিন এত বড় আকার ধারণ করবে। আমি শুধু জানতাম, গাছ আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ এবং আমি চাইতাম মানুষকে এটি সম্পর্কে সচেতন করতে। আমি কখনো ভাবিনি যে, আমার সংগ্রহে ৫০০ প্রজাতির গাছ থাকবে।
গাছের যত্ন নিতে আমি নিজের হাতে কাজ করেছি এবং আমার স্বামীও আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমরা একসাথে কাজ করে গাছগুলোর যত্ন নিই, এবং আমি বিশ্বাস করি যে, এটাই আমাদের সফলতার মূল চাবিকাঠি। আমি ছাত্রদের বিশেষ সুবিধা দিতে চাই, কারণ আমি জানি, আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন গাছ কেনার জন্য কষ্ট হয়েছে। আমার নার্সারিতে আসা প্রত্যেকের জন্য আমি চেষ্টা করি যেন তারা সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো গাছ পায়।
আমার লক্ষ্য শুধু ব্যবসা করা নয়, বরং সবুজ পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তরুণদের মধ্যে গাছের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা। আমি বিশ্বাস করি, গাছ লাগিয়ে আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারব।
শারমিনের আরেকজন ক্রেতা নূর জাহান প্রভা বলেন, আমি ফেসবুক থেকে শারমিন আপুকে চিনেছি। আমার কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, তাই তাকে ছবি পাঠিয়ে সাহায্য চেয়েছিলাম। তিনি খুব সুন্দরভাবে আমাকে পরামর্শ দিলেন এবং তার বাগান থেকে গাছ নিয়ে অনেক উপকার পেয়েছি।
মাহফুজুর রহমান নামের আরেক জন ক্রেতা বলেন, শারমিন আপুর নার্সারি দেখে আমি অবাক হয়েছি। এত বড় এবং এত সুন্দর বাগান, আর এত সাশ্রয়ী দামে গাছ, যা সত্যিই অসাধারণ। আমার জন্য এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। আমি ভবিষ্যতে এখান থেকে আরও গাছ কিনতে চাই।
এগ্রোনিমা নার্সারির ক্রেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি প্রথমবার এখানে এসেছি। গাছের দাম এবং গুণগত মান দেখে আমি খুবই সন্তুষ্ট। শারমিন আপু আমাকে গাছের যত্ন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিলেন। তিনি সত্যিই অনেক সাহায্য করেন। আমি তার বাগান সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে চাই এবং ভবিষ্যতে এখান থেকে আরও গাছ কিনব।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা ফল বাতিল করে পুনরায় ফল তৈরি ও প্রকাশের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় আটক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৮ জন মুচলেকা দেওয়ায় তাদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সচিবালয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় আটক ৫৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৮ জন মুচলেকা দেওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শাহবাগ থানায় এ নিয়ে মামলা হয়েছে।
এর আগে, গতকাল বুধবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা ফল বাতিল করে পুনরায় ফল তৈরি ও প্রকাশের দাবিতে শতাধিক শিক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে তারা। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফল পুনর্মূল্যায়ন ও ফলাফলের ত্রুটি সংশোধনের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, সব বিষয়ে এসএসসির ফল অনুযায়ী এইচএসসির ফল চায় তারা। পাশাপাশি বিভিন্ন বোর্ডে তাদের ওপর হামলার বিচার দাবি আন্দোলকারীদের। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সচিবালয় না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি বলেন, সিএমপির সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে মোস্তফা কামালকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গায় ক্রমাগত বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। গত দুই মাসে শুধু সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও অনেকে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) পর্যন্ত সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু জোনে ৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী।
সরেজমিনে সদর হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের পৃথক দুটি জোন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ভর্তি করা হয়েছে সাধারণ রোগীদের। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওয়ার্ডের সাধারণ রোগীদের মধ্যে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। আরও করুণ বিষয় যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের মশারি সরবরাহ করলেও কেউই তা ব্যবহার করছেন না।
রোগীদের অভিযোগ, মশারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও এখানে কোনো নজরদারি নেই। এমনকি রোগীদের সচেতন করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগও নেই।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মামুনুর রহমান অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডে ডেঙ্গু জোন থাকলেও সেখানে সাধারণ রোগীরা শয্যা দখল করে আছেন। ফলে ডেঙ্গু জোনে শয্যা না পেয়ে বাধ্য হয়ে সাধারণ রোগীদের মধ্যে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাকে। তিনি কেন মশারি ব্যবহার করছেন না জানতে চাইলে বলেন, কেউই মশারি ব্যবহার করছে না। তাছাড়া ওয়ার্ডের ফ্লোরে চিকিৎসা নেয়ায় মশারি টাঙানোর সুযোগও পাননি। এছাড়া হাসপাতালের নার্সরাও মশারি টানানোর বিষয়ে তাদের কিছু বলেনি।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট হাসপাতালের প্যাথলজিতে প্রথম সুমন হুসাইন নামের এক রোগীর শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এছাড়া আগস্টেই মোট ৪৬টি নমুনা পরীক্ষায় দুজন পুরুষ ও এক নারীসহ তিনজনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। গত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১৫৬। এর মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৮ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারীসহ ৩১ জনের শরীরে। এছাড়া চলতি মাসে বেড়েছে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও শনাক্তের সংখ্যা। গত ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ৩১৯টি নমুনা পরীক্ষার মধ্যে ৫০ জনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
এসব বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের মশারি দেওয়া হলেও রোগীরা তা ব্যবহার করছেন না। আমরা নিয়মিত তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি।’ তিনি রোগীদের মশারি ব্যবহারে সতর্কতার বিষয়ে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মশারি ব্যবহার না করলে যেসব মশা তাকে কামড় দেবে, সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেরা সংক্রমিত হয়ে অন্য মানুষকে কামড়ানোর মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে থাকে। তাই বাড়িতে কারো জ্বর হলে এসময় অবশ্যই তাকে দিনে রাতে মশারির ভেতর রাখতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসার নেয়ার সময়ও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
হাসপাতালের ডেঙ্গু জোনে সাধারণ রোগীদের অবস্থানের বিষয়ে এই চিকিৎসা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ওয়ার্ডে রোগীর অনেক চাপ ও শয্যা শঙ্কট থাকায় রোগীরা ডেঙ্গু জোনের খালি শয্যায় জোর করেই উঠে পড়ছেন। নার্সদের ক্ষেত্রে তাদেরকে ওয়ার্ড থেকে বের করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে রোগী ও তাদের স্বজনদের সতর্ক হওয়া জরুরি। ডেঙ্গু জোনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে ভাবছি।’
হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন, ‘হাসপাতালে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য আসছেন। হাসপাতালসহ জেলাজুড়ে মশা নিধন কার্যক্রম এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’