নারী নির্যাতন ঠেকাচ্ছে ৯৯৯
২১ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিট। কুমিল্লার শশীদল রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহাম্মদ আলম নামে একজন ৯৯৯-এ ফোন করেন। তাৎক্ষণিকভাবে কলারকে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কানেক্ট করে দেওয়া হয়। কলার জানান, রেল স্টেশনে কাছে ধানক্ষেতে একটি মেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়েছেন। এরপরই ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের একটি দল অবিলম্বে ঘটনাস্থলে রওনা দেয়। দলটি ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের শিকার ১৭ বছরের মেয়েটিকে উদ্ধার করে ও সন্দেহভাজন ৬ জনকে আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে ৩ জনকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটি শনাক্ত করেন।
১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কক্সবাজারে বেড়াতে এসে এক অস্ট্রেলিয়ান তরুণী ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন। সমুদ্র সৈকত থেকে দূরে একটি রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন তিনি। রাতে কটেজে দুইজন ব্যক্তির সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ওই নারী চিৎকারে হামলাকারী পালিয়ে যান। পরে ওই তরুণী ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে তাৎক্ষণিকভাবেই পুলিশ সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ঐ দিনই দুই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
শুধু এই দুইটি ঘটনা নয়, ৯৯৯ এর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর অর্থাৎ গত দুই বছরে ৭৬০টি যৌন হয়রানির ঘটনায় কাজ করে জাতীয় জরুরি সেবা। এছাড়াও নারীদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করে ১ লাখ ৯৫৩টি কলের বিপরীতে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট রিসিভ করে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৪টি কল। বিভিন্ন তথ্য বা জরুরি সেবা পেয়েছেন এসব কলের ২১ শতাংশ মানুষ।
দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পুলিশের এই সেবা। তবে এর অপব্যবহারও করছে একটি চক্র। ৯৯৯ সূত্র বলছে, সেবাটি চালুর পর থেকে ১ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬২ টি ফোন কলে সেবা প্রদান করেনি তারা। কেননা এত সংখ্যক কল অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক ছিল। যা মোট কলের ৭৯ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সেবার বিষয়ে প্রচারণার অভাব রয়েছে। এই কার্যক্রমের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। এ বিষয়ে এখনো সচেতনতা তৈরি হয়নি। উন্নত বিশ্বে এমন সার্ভিসে সব ধরনের সেবা মেলে। তাই না জেনে অনেকেই ফোন করেন।
বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ শুরু থেকে এই সেবার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দুই বছর আগে ৩০ সিটও ১০০ কর্মী নিয়ে শুরু করা জাতীয় জরুরি সেবা এখন পৌনে চারশ কর্মীবাহিনী নিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হলে প্রশিক্ষিত এজেন্টরা জরুরি ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ কিংবা অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে দেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশি সেবা দিতেই প্রথমে এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন সরকার। মোবাইল ও ল্যান্ডফোন থেকে সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি কল করে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে এই সেবা নেওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের ৯২টি মহানগর এলাকার থানায় পেট্রোল ডিউটি গাড়িতে এমডিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ছয়টি মহানগর এলাকার ২০৪টি থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে টিডিএস চালু করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে সেবা নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৩০টি থানার পেট্রোল ডিউটিরত গাড়িতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এমডিটি স্থাপন এবং সব থানায় টিডিএস চালু করা হচ্ছে।