মনোমুগ্ধকর শারজাহ সমুদ্র সৈকত

  • শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

রোলা বাজার (শারজাহ) থেকে: সাগর বেষ্টিত শহর শারজাহ। এখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অত্যাধুনিক সুউচ্চ অট্টালিকা যেমন কাছে টানে। তেমনি আরব সাগরের মনোরম সমুদ্র সৈকত মুহূর্তেই বিষণ্ণ মন ভালো করে দেয়। 

আরব সাগর
আরব সাগরের মনোরম বিচ মুহূর্তেই বিষণ্ণ মন ভালো করে দেয়

কাছ থেকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না সমুদ্র সৈকত এতোটা পরিপাটি হতে পারে। শারজাহ শহরে ঘুরতে এসেছেন কিন্তু সমুদ্র সৈকতে যাননি এমন লোক পাওয়া কঠিন। একবার সেখানে গেলে ফিরে আসতেই মন চাইবে না। এখানকার সমুদ্র সৈকতে কোনো হৈচৈ নেই। সে কারণে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় পাবেন অনেক। আবার মনের অজান্তে কবিতার লাইন কিংবা কোনো প্রেমের গান গুনগুন করে গাইতেও পারেন। এর অন্যতম কারণ মনে হয়েছে এখানকার সমুদ্র সৈকতে একটি কাগজের টুকরাও দেখা যাবে না। আর সমুদ্র সৈকতের পাশের সড়ক দিয়ে হাঁটতে থাকলে শুধু দেখতেই মন চাইবে। রাস্তার দুই ধারে খেজুর গাছ আর সবুজ ঘাসের মধ্যে নানা জাতের ফুলগাছ দিয়ে সাজানো।

বিজ্ঞাপন
দুবাই বার্তা২৪

রাস্তার দুই ধারে খেজুর গাছ আর সবুজ ঘাসের মধ্যে নানা জাতের ফুলগাছ দিয়ে সাজানো 

শারজাহ শহরের আল জুবায়ের এলাকা থেকে কয়েকজন বাঙালি ভাইদের সঙ্গে বের হই। শারজাহ মূল শহরের ভেতরেই রোলাবাজার নামক একটা জায়গা রয়েছে। যেটা মূলত বাঙালি পাড়াই বলা হয়। কেননা এখানে ৮০ শতাংশ দোকান, মার্কেটের মালিক বাঙালি। রোলাবাজার এলাকা দিয়ে হাঁটলে যেসব লোকের দেখা মিলবে তার অধিকাংশই বাঙালি। আর এই রোলাবাজার থেকে উত্তর দিকে ৫ মিনিট হাঁটলেই দেখা মিলবে আরব সাগরের। রোলাবাজার বরাবর যে সমুদ্র সৈকতটা তার নাম শারজাহ সমুদ্র সৈকত।

আর সমুদ্র সৈকত দিয়ে পূর্ব দিকে হাঁটতে থাকলে দেখা মিলবে হোটেল র‍্যাডিসন ব্লু শারজাহ। তার ঠিক পাশেই সুসজ্জিত একটি মসজিদ। মসজিদের বাইরেই রয়েছে পানির জন্য একটা ঘর। সেখান থেকে চাইলে পথিকরা পানি পান করতে পারবেন আবার ওযুরও সুব্যবস্থা রয়েছে।

শারজাহ মসজিদ
শারজা সমুদ্র সৈকতের পাশের মসজিদ

মসজিদের আগেই সমুদ্র সৈকতের দক্ষিণ পাশে রয়েছে শারজাহ মিউজিয়াম অব ইসলামিক সিভিলাইজেশন। বিশাল আকৃতির এই মিউজিয়ামে ইসলামি নিদর্শনের অনেক কিছুই রয়েছে। মিউজিয়ামে ঢুকতে আপনাকে ১০ দিরহাম দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। চাইলে এখানেও ঘণ্টা খানেক সময় কেটে যাবে।

শারজাহ দুবাই
শারজা মিউজিয়াম অব ইসলামিক সিভিলাইজেশন

শারজাহ শহরের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে এখানে যতই ঘুরবেন ক্লান্তি আসবে না। কেননা এখানকার পরিবেশ আপনাকে ফুরফুরে করে তুলবে। সমুদ্র সৈকত দিয়ে পূর্ব দিকে অনেক পথ হাঁটলে একেবারে শেষ মাথায় পাওয়া যাবে আজমান সমুদ্র সৈকত। আজমান সমুদ্র সৈকতের পাশে দাঁড়ালে দুই চোখের দৃষ্টি যতদূর যাবে শুধু নীল জল আর সাগরে ঢেউ ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না।

সমুদ্র সৈকতের পাশ দিয়ে যে রাস্তার সৌন্দর্যের কথা বলছিলাম সেটার আর একটু বর্ণনা না দিলেই না। এতো পরিষ্কার রাস্তা হাত থেকে কাগজের টুকরা বা টিস্যু পেপারটা ফেলতেও লজ্জাবোধ করবে। এরকম চকচকা ঝকঝকা রাস্তায় কে ফেলবে? অতো মানুষ নেই তারপরেও হাঁটার পথ ও রাস্তার পাশের গাছের পরিচর্যা করার জন্য লোক রয়েছে।

দুবাই শারজাহ
সুপ্রিম কাউন্সিল অব ফ্যামিলি অ্যাফেয়ার্স

হাঁটতে হাঁটতে এক পাকিস্তানি শ্রমিকের সাথে পরিচয় হয়। রাওয়ালপিণ্ডি থেকে এসেছেন সাব্বার আব্বাস মালিক গোলাম নামের ওই শ্রমিক। গত ১২ বছর ধরে একই কাজ করছেন আব্বাস। তার কাজ প্রতি ৮ ঘণ্টা পর পর সবুজ ঘাসে পানির ফোয়ারা ছাড়া। এভাবে প্রতিদিন পরিচর্যা করেন তিনি।

সমুদ্র সৈকত ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলবে শারজাহ লেডিস ক্লাব, সুপ্রিম কাউন্সিল ফর ফ্যামিলি অ্যাফেয়ার্স। আর একটা কথা এখানকার সমুদ্র সৈকতে কক্সবাজার বা পাতায়া সমুদ্র সৈকতের মতো মানুষের ভিড় পাবেন না। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা সকাল-বিকেল নিয়ম করে সমুদ্র সৈকতের পাড় দিয়ে হাঁটেন। যারা হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত তাদের জন্য খেজুর গাছের ছায়াতলেই রয়েছে বসার সুব্যবস্থা। তাই শুরুতেই বলেছিলাম আরব সাগরের সমুদ্র সৈকত যে কারো বিষণ্ণ মন ভালো করে দেবে।