পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার সামর্থ্য নেই ২ কোটিরও বেশি মানুষের

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির লোগো, ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির লোগো, ছবি: সংগৃহীত

দেশের প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের, অর্থাৎ দুই কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার সামর্থ্য নেই। এর অন্যতম কারণ, মানুষ অতিরিক্ত পরিমাণে ভাত ও অপর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান সম্বলিত খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি কর্তৃক ‘ফিল দি নিউট্রিশন গ্যাপ’ গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং ডব্লিউএফপি পুষ্টিসম্মত খাদ্যের সহজলভ্যতা ও ক্রয় ক্ষমতার ওপর পরিচালিত বিশদ বিশ্লেষণের ফলাফল প্রকাশ করে। ডব্লিউএফপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ জানিয়েছে।

এ প্রতিবেদনে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব পায় না। কম বয়সী মেয়েরা আরো নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে, যখন তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল লিঙ্গভিত্তিক নিয়মকানুন এবং প্রথা, যেমন বাল্য বিয়ে, গর্ভধার ইত্যাদির সম্মুখীন হতে হয়।

বাংলাদেশ পরিকল্পনা অধিদফকরের সদস্য সচিব জাকির হোসেইন আকন্দ এ প্রসঙ্গে বলেন, ফিল দি নিউট্রিশন গ্যাপ বিশ্লেষণে উঠে আসা নীতিমালার সুপারিশগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। এ বিশ্লেষণটি আমাদের খাদ্যরীতি, খাদ্যের পরিবেশ এবং পুষ্টিকর খাদ্য কিনতে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতার বিষয়ে নতুন কিছু দিক নির্দেশনা দিতে পেরেছে।

গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সরকার ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে প্রশংসনীয় অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। পুষ্টি খাতে সরকারের বিনিয়োগ বিশেষভাবে ফলপ্রসূ হয়েছে; তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতার গতিও ত্বরান্বিত হয়েছে।

বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর আলফা বাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের অঙ্গীকার ও সমন্বিত পদক্ষেপ কীভাবে জনগণের জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। দারিদ্র্য এবং খাদ্য অনিরাপত্তার মত বিষয়গুলো মোকাবিলার অন্যতম কার্যকর উপায় হচ্ছে দেশের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তাকেন্দ্রিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অসুরক্ষিত পরিবার এবং জনসমাজের সদস্যদের কাছে পৌঁছানো। সরকারের বেশ কিছু পুষ্টি-সংবেদনশীল সামাজিক নিরাপত্তাকেন্দ্রিক কার্যক্রমের পরিসর বৃদ্ধিতে ও এগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ডব্লিউএফপি তার কারিগরি দক্ষতা দিয়ে সহায়তা করে চলেছে। ফলে লাখ লাখ নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।

তারপরও, শারীরিক বিকাশজনিত বিভিন্ন রোগ যেমন কম ওজন বা স্টান্টিং (৩১%) ও খাদ্য অপচয় (৮%), প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি এবং অন্যদিকে জনগণের ভেতরে ওজন এবং ক্রমাগত স্থূলতার বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রেখে বলা যায়, এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতির আরো অনেক সুযোগ রয়েছে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস উন্নয়নের জন্য প্রতিবেদনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।

নানাবিধ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য প্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানো।
পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের চাহিদা ও সরবরাহ বাড়াতে প্রচারের জন্য আরও বিনিয়োগ করা।
সমাজের সব স্তরে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠনের জন্য এমনভাবে প্রচারণা চালানো যেন বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়।
কন্যাশিশু ও নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের পুষ্টিজনিত অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো এবং এর মাধ্যমে উন্নত মানব সম্পদ (হিউম্যান ক্যাপিটাল) হিসেবে তৈরি করা।