জলবায়ু ক্ষতি মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না বাংলাদেশ: টিআইবি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু ক্ষতি মোকাবিলায় যে ক্ষতিপূরণ বাংলাদেশের পাওয়া উচিত তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

এ পর্যন্ত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) থেকে বাংলাদেশের জন্য ৮৫ মিলিয়ন ডলার ছাড় হলেও তার সম্পূর্ণ অর্থ পাওয়া যায়নি। অথচ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দরকার। কিন্তু প্যারিস চুক্তিতে এ বিষয়ে লিগ্যাল এগ্রিমেন্ট না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ) একটি দুষ্ট চক্র তৈরি করে অর্থ ছাড়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়। স্পেনের মাদ্রিদে আসন্ন ‘কপ-২৫ জলবায়ু সম্মেলন: জলবায়ু অর্থায়নে দূষণকারী শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতির বাস্তব অগ্রগতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি।

অনুষ্ঠানে টিআইবি বলে, প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবে বাংলাদেশ কার্বন গ্যাস কমানোর যে শর্তে আবদ্ধ হয়েছে তাও ঠিকমতো পালন করছে না। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৩০টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে। যার ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন গ্যাসের মাত্রা বাড়াতে বাংলাদেশ সহায়ক হবে। যদিও বাংলাদেশ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কম বলা হচ্ছে, তবুও সার্বিক পারিপার্শ্বিক ক্ষতি বিবেচনায় এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২৬ টাকা করে পড়বে বলে দাবি টিআইবির। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৩০টিতে উন্নীত করা হলে বায়ুমণ্ডলে ১১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিকটন অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসৃত হবে। ফলে কার্বন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে দেশের জনগোষ্ঠীকে চরম হুমকির মুখে ফেলবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ১১ শতাংশ স্থলভাগ হারাবে দেশ। চার ও পাঁচ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ঝুঁকি ১৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে।

জার্মান ওয়াচের বরাতে টিআইবি বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় দুই হাজার ৮২৬ দশমিক ৬৮ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। টাআইবির গবেষণায় দেখা গেছে বন্যার কারণে পরিবার প্রতি গড়ে ২১০ ডলার ক্ষতি হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর গড়ে ৩ হাজার ৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ প্রতি বছর জিডিপির অতিরিক্ত শূন্য দশমিক ৩০ প্রবৃদ্ধি অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আলাদা তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে টিআইবি থেকে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বিবিধ বিমা এবং বন্ডকে প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছায় দেওয়া কিস্তি থেকে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অনুদান ভিত্তিক অভিযোজন তহবিল প্রদানের মূল নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিমা এবং বন্ড ভিত্তিক কার্যক্রম পরিকল্পনা মুনাফায় আগ্রহী ব্যক্তিমালিকানাধীন সংস্থার প্রসারে সহায়ক হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের কাছ থেকে বিমার কিস্তি আদায়ের কারণে তাদের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে এবং ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের উপর আরও আর্থিক চাপ বাড়বে।

কপ-২৫ বাংলাদেশের জন্য উত্থাপনযোগ্য সুপারিশ তুলে ধরে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দূষণকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নীতি বিবেচনা করে ঋণের বদলে শুধু অনুদান নিশ্চিত করতে হবে। জিসিএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও সহজে সরবরাহে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো মিলে দাবি তুলতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে চাহিদা মাফিক জলবায়ু অনুদান ভিত্তিক তহবিল প্রদানে রোডম্যাপ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।’

এছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিশ্রুত সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের স্বার্থে অবিলম্বে রামপাল, তালতলি ও কলাপাড়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন, ভারত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু তারাই বাংলাদেশে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে বিনিয়োগ করছে। এর ফলে তাদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বাংলাদেশ কাজে লাগাচ্ছে।’

নিজেদেরকেও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা বিদুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে নই। তবে পরিবেশ রক্ষায় যেন আমরা কোনোভাবে পিছিয়ে না যাই। পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় তার নিশ্চয়তা দিয়ে বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণ হোক।’