পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে গণসংযোগ ও সাংগঠনিক কাজে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে সহায়তা করতে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। ২২ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়, যা প্রকাশ্যে আসে রোববার (২৭ অক্টোবর)।
চিঠিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু ও সদস্য সচিব স্নেহাংশ সরকার কুট্টিকে জানানো হয়, নুরুল হক নুর বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ কারণেই পটুয়াখালী-৩ আসনে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সংগঠনের সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশ সরকার কুট্টি জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীদের অবহিত করা হয়েছে। এছাড়াও থানা, উপজেলা, পৌরসভাসহ অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকেও নির্দেশনাটি দ্রুত জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. হাসান মামুনের শক্ত অবস্থান থাকলেও নুরুল হক নুরও ওই আসনের অধিবাসী হওয়ায় আগামী নির্বাচনে তাকে জোটের মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মো. হাসান মামুন বলেন, "জোটের নেতাদের সমর্থন দিতে কেন্দ্র থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক কাজ করা যায়।"
সন্ত্রাসী, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, কিশোর গ্যাং, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির বিরুদ্ধে চলমান বিশেষ অভিযান জোরদার করার জন্য পুলিশের সব ইউনিট প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) এক বিশেষ বার্তায় এ নির্দেশ দেন আইজিপি।
দেশব্যাপী চলতি ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী, গুরুত্বপূর্ণ হত্যা মামলার আসামিসহ অন্যান্য মামলার আসামিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
চলমান অভিযানে অপরাধপ্রবণ এলাকা অর্থাৎ ক্রাইম জোনে কম্বিং অপারেশন পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্টের পাশাপাশি অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশি টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মোবাইল পেট্রোল ও মোটরসাইকেল পেট্রোল টিম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এলাকায় ১৫০টি স্থায়ী ও মোবাইল চেকপোস্ট কার্যকর রয়েছে। ৩০০টি মোটরসাইকেল টিম এবং ২৫০টি টহল টিম কার্যকর রয়েছে। এছাড়া, দেশব্যাপী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।
বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে লিপ্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধেও মামলা, গ্রেফতারসহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যা চলমান রয়েছে।
চলমান বিশেষ অভিযানে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, ডাকাত ২০০ জন; তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ১৬ জন; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে হামলাকারী ১ হাজার ১৪০ জন; মাদকদ্রব্য উদ্ধার সংক্রান্তে ১ হাজার ১৪৪ জন এবং অবৈধ অস্ত্রধারী ৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় প্রাচীন কাল হতে ব্যবহৃত নানা উপকরণ সংরক্ষণের লক্ষে প্রদর্শনী ও সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকালে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম জেলেখালী গ্রামে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম, সবুজ সংহতি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এসব উপকরণ লবণাক্ততা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আধুনিক পণের চাপে এখন বিলুপ্তির পথে।
প্রদর্শনীতে ২০টি স্টলে বিলুপ্তপ্রায় এসব ঐতিহ্যবাহী পণ্য ও কৃষি উপকরণ সংরক্ষণ ও টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে প্রদর্শন করেন স্থানীয় জনগোষ্ঠী।
এসব উপকরণের মধ্যে ছিল লাঙল, জোয়াল, লাটি, ঠুষি, মই, পাখে, নিড়ানি, দা, কুড়াল, বটি, কাশি, হামান দিস্তা, শিল, নোড়া, পোলো, ঝুড়ি, বাজারা, খারা, হুঁকা, সাবল, ডোল, চাঙারি, মেঠে, কলস, পিতলের বিভিন্ন উপকরণ, হারিকেন, টেমি, ঝাতি, বিভিন্ন ধরনের জাল, পূজার সামগ্রী, কাস্তে, ছেমত, হাসো, দোড়া, পাটের বস্তা, চালন, কুলো, কলকে, বাটি, কাসার জিনিস, ঢেঁকি, দাঁড়িপাল্লা, বিচলি কাটার বটি, ঘণ্টা, তামার পয়সা, বাবুই পাখির বাসা, লাউয়ের খোল, পিঁড়ি, রেডিও, টর্চ লাইচ, মাটির ব্যাংক, রুটির তাবা, পিঁড়ি, ধামা, হরিণের শিংসহ হাজারো উপকরণ।
এসময় তারা জানান, পূর্বে জীবন-জীবিকা, জ্ঞান, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে এ সকল উপকরণ ব্যবহৃত হতো। কালের পরিক্রমায় সেগুলো আজ রূপকথার গল্প হয়ে গেছে। এগুলোর ব্যবহার কমলেও তা সংরক্ষণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
প্রদর্শনী পরবর্তী সংলাপে স্থানীয় কৃষক ভূধর চন্দ্র মণ্ডলের সভাপতিত্বে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ নিদর্শন টিকিয়ে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মুন্সিগঞ্জ ইউপি সদস্য দেবাশিষ মন্ডল, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাছুম বিল্লাহ, কৃষানি লতা রানি মন্ডল, এসএসএসটির আহ্বায়ক প্রকাশ মন্ডল, গৌতম সরদার, শিক্ষার্থী জবা মন্ডল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, কালের বিবর্তনে উপকূলীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এসব বিলুপ্ত হচ্ছে। এসব দুর্বলতাকে পাশ কাটিয়ে আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গ্রামীণ নিদর্শন ধরে রাখতে হবে।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের অনেকেই এক রকম ভয়ে দূরত্ব তৈরি করে রাখেন। তবে তাদের মধ্যে কিছু মানুষের অপরাধ প্রবণতার কারণে প্রায়ই এ জনগোষ্ঠীর পুরো অংশকেই এক কাতারে ফেলা হয়, যা একেবারেই অন্যায়। সব মানুষ এক নয়। অনেকেই আছেন, যারা সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখছেন, সৎপথে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, তাদের ভালো দিকগুলো মানুষের কাছে সেভাবে উঠে আসে না। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন 'দিনের আলো হিজড়া সংঘের' রাজশাহী শাখার সহ-সভাপতি মিস প্রিয়া।
প্রিয়া বলেন, আমাদের অনেকেই রাস্তাঘাটে মানুষদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করেন। তবে এটা বোঝা উচিত যে, সবার কাছে সবসময় টাকা নাও থাকতে পারে। তাহলে কেন তাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা নিতে হবে? এই ধরনের আচরণ মানুষকে আঘাত দেয়, যা খুবই দুঃখজনক।
মানবিক বিপর্যয়ে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন উল্লেখ করে প্রিয়া বলেন, বঙ্গবাজারে যখন অগ্নিকাণ্ডের মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তখন আমরা ২২ লাখ টাকা সাহায্য দিয়েছি। দেশের বিভিন্ন জেলায় যখন বন্যার তাণ্ডব চলছিল, তখন আমরা শুকনো খাবার ও প্রায় ৬ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পাঠিয়েছি। এসব সহায়তা আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যে থেকেই করা হয়।
তিনি জানান, সমাজে আমরা অনেক ভালো কাজ করে থাকি। অনেকে আর্থিক অসুবিধার কারণে বিয়ে দিতে না পারলে, আমরা পাশে দাঁড়াই। মাদরাসা, মন্দির বা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রয়োজনে সহায়তা করি। আমরা মানুষের সেবায় ভালো কাজ করতে চাই। কিন্তু আমাদের এই ইতিবাচক দিকগুলো কেউ দেখে না, বরং খারাপটাই তুলে ধরা হয়। এটা খুবই কষ্টের।
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনুরোধ থাকবে যেন কেউ কোন অপরাধে যুক্ত না হন। বরং, সৎপথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিজেদের সংসার চালান। সমাজের অংশ হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে সবার সঙ্গে ভালোভাবে চলার, এবং আমাদের ভালো দিকগুলোকে তুলে ধরার মাধ্যমে মানুষের মনোভাব পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করা উচিত।
সমাজের সচেতন মহল বলছেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা সৎপথে জীবন পরিচালনা অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণার কারণ হতে পারে। সমাজে তাদের ইতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরতে পারলে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব বদলাতে সহায়ক হবে।
প্রিয়া দীর্ঘ তিন বছর ধরে রাজশাহীর পদ্মা গার্ডেন মুক্তমান এলাকায় গোলাপ ফুল, চকলেট বিক্রি করেন। পাশাপাশি সেখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই তিনি তার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে সুখের সংসার চালান।