দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই আসছে পেঁয়াজের বড় চালান

  • ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ

দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ

দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ঘাটতি থাকায় ইচ্ছা মতো দাম বাড়িয়েছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, প্রতিদিনই দেশের বাজারে আসছে আমদানি করা পেঁয়াজ। আর মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দেশের বেশ কয়েকটি বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মিশর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজের বড় চালান আমদানি করছে। দু'একদিনের মধ্যেই এসব পেঁয়াজের বড় চালান দেশে পৌঁছাবে। তখন দাম কমে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, বড় চালান বাজারে আসলে পেঁয়াজের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। এছাড়া নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দাম কম ও সহজ পরিবহনের কারণে ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। তবে ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যায় পেঁয়াজের ক্ষতি হওয়ায় দাম বেড়েছে। ফলে সম্প্রতি রফতানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের নূন্যতম আমদানি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। আর গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। পাশাপাশি মিশর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। সম্প্রতি মিয়ানমারও পেঁয়াজের আমদানি মূল্য বাড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সাথে কয়েকবার বৈঠক করেছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া নিয়মিত আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বাড়াতে এবং নৈতিকতার সাথে ব্যবসা করার অনুরোধ করা হয়েছে। এরপরও কোনও ব্যবসায়ী অবৈধ পেঁয়াজ মজুদ, কৃত্রিম উপায়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা ও স্বাভাবিক সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি দেশ থেকে বড় কিছু চালান আসছে। দু'একদিনের মধ্যেই চালানগুলো দেশে আসবে। এরপর পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। তখন টিসিবির ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি জোরদার করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা সবকিছুই তদারকি করছি। বাজারগুলোতেও অভিযান অব্যাহত আছে। তবে শিগগিরই দাম কমে যাবে বলে আশা করছি।’

এদিকে আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার কমানো জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে। স্থল ও নৌ বন্দরগুলোতে আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও এলসির মাধ্যমে মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বন্দরে খালাস করা হচ্ছে। ফলে আমদানি করা পেঁয়াজ এবং দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি বাজারে বিক্রিত পেঁয়াজ দ্রুত সারাদেশে পৌঁছে যাচ্ছে।

দেশে পেঁয়াজের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রয় করছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।

দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের ১০ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং চারটি টিম প্রতিদিন ঢাকা শহরের বাজারগুলো মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ও প্রতিটি জেলা প্রশাসন জেলার বাজারগুলোতে মনিটরিং জোরদার করেছে। ঢাকার শ্যামবাজার ও চট্রগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতো বড় পাইকারি বাজারগুলোতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।