ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত ১৭ অক্টোবর পদ্মায় বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে ভারতীয় জেলেদের মা ইলিশ শিকারকে কেন্দ্র করে বিজিবি-বিএসএফ গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে চারঘাট সীমান্তে চলছে কড়াকড়ি। নদীতে মাছ শিকারে নামতে সাহস পাচ্ছেন না জেলেরা। খুব কম দেখা মিলছে ভারতীয় জেলেদেরও। তবে পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা থেমে নেই!
তারা রুট বদল করে চারঘাটের পার্শ্ববর্তী পদ্মার বাঘা সীমান্তে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে মা ইলিশ। অথচ প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকারের সামান্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে কোনমতে পেট চালাচ্ছেন পদ্মা নির্ভর অধিকাংশ মৎস্যজীবী। তবে যারা লাভের আশায় ইলিশ শিকারে নদীতে নামছেন, অভিযানে ধরা পড়ে মূল্যবান জাল, মাছ খোয়ানোর পাশাপাশি মামলা ও জরিমানার মুখোমুখি হচ্ছেন।
স্থানীয় মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, পদ্মার জলসীমায় ঢুকে ভারতীয় জেলেরা অবাধে ইলিশ শিকার করছে। স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তাদের অভিযানের গতিবিধি সম্পর্কে বিএসএফ এর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে নদীতে মাছ ধরতে নামে। পদ্মার বাঘা উপজেলার মধ্যে বাংলাদেশ-ভারতের জলসীমা প্রায় ২৬ কিলোমিটার। বিজিবি সদস্যদের নিয়ে মৎস্য কর্মকর্তারা একদিকে অভিযানে গেলে, অন্যদিকে নদীতে জাল ফেলতে নেমে পড়ছে ভারতীয় জেলেরা। তারা বিকেল ৪টা থেকে ৫টা একদফা জাল পাতছে। সন্ধ্যায় তা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ফের রাতে আবার জাল পাতছে। ভোর হওয়ার আগে সুযোগ বুঝে এসে তুলছে জাল। এখন ইলিশও উঠছে বেশ।
উপজেলার সরেরহাট মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে ভারতের জেলেরা আমাদের সীমানার মধ্যে এসে মাছ ধরছে। বিএসএফ এর কিছু সদস্য তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেন। তারা মাছ ধরছে, বিক্রি করছে। অথচ আমরা নৌকা ডাঙ্গায় তুলে ঘরে বসে আছি।’
বাঘার পলাশি ফতেপুর চরের জেলে শহিদুল হক, গাওপাড়া গ্রামের নুর হোসেন, মুক্তার হোসেন, জহুরুল হক, আলাইপুর-কিশোরপুর গ্রামের মিলন হোসেন, আলেখ আহম্মেদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জাননা, প্রজনন মৌসুমে আইনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা পদ্মায় ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু ভারতীয় জেলেরা নির্বিঘ্নে পদ্মায় এসে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব দেখে দেখে অনেকে রাগে-ক্ষোভে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে নদীতে নামছে। গত কয়েক দিনে তারা ধরাও পড়েছে।
উপজেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্র জানায়, গত ১৩ দিনে ১৪টি অভিযান পরিচালনা করে ৫০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল এবং প্রায় দুই মণ ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। তবে তা সবই স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে। ভারতীয় জেলেদের ধরা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে বাঘা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, চারঘাটে বিজিবি-বিএসএফ এর গোলাগুলির আগে ভারতীয় জেলেদের দেখা গেলেও এখন আমরা তেমনটা দেখছি না। নিষেধাজ্ঞা চলা বাকিদিনগুলোতেও অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। স্থানীয় কিংবা ভারতীয় জেলে যারাই হোক না কেন আইন অমান্য করলে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।
এদিকে, রাজশাহী জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক রবিউল করিম জানান, গত ৯ অক্টোবর থেকে বুধবার (২৩ অক্টোবর) পর্যন্ত পদ্মার জলসীমায় ১৩০টি অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ১৪৩ কেজি ইলিশ মাছ ও সাড়ে ৪ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। জেলেদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয় ১৯ হাজার টাকা। মামলা দায়ের করা হয়েছে ১০টি।
তার দাবি- অভিযানকালে ১৭৫টি মাছ ঘাট, ৮২১টি বাজার এবং ৭৬০টি আড়ত পরিদর্শন করে কোথাও ইলিশ পাওয়া যায়নি। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।