খুলনায় শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের রাতে বিষাক্ত মদ পান করে সর্বমোট ৯ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। মাঠে নেমেছে তদন্ত কমিটি।
জানা যায়, মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) গভীর রাতে মদ খেয়ে খুলনার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ অবস্থায় তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ জনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন, নগরীর গ্যালাক্সির মোড়ের সুজন শীল (২৬), গল্লামারীর প্রসেনজিৎ দাস (২৯), তার আপন ভাই তাপস (৩৫), ভৈরব টাওয়ারের রাজু বিশ্বাস (২৫) ও রূপসা রাজাপুর এলাকার পরিমল, অমিত শীল, ইন্দ্রানী বিশ্বাস, দীপ্ত সাহা, হাজী মহসিন রোডের মনোজিত বিশ্বাস (৫৫)।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘দশমীর রাতে মদ পান করে যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, তারা কেউই সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান থেকে মদ কেনেনি। এ ঘটনায় আরো কয়েকজন অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি আছে। প্রাথমিকভাবে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মদ খেয়ে যারা মারা গিয়েছেন আমরা তাদের বাড়িতে গিয়েছি, পরিবারের সাথে কথাও বলেছি। যারা অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি আছে তাদের সাথেও কথা বলেছি। কিন্তু তারা কেউই মদ প্রাপ্তির উৎসের কথা স্বীকার করেননি। কেউ কেউ বলেছে, যারা মারা গেছে- তারাই মদ নিয়ে এসেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে বিষাক্ত স্পিরিটের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে মদ তৈরি করে বিক্রি করা হয়েছে। যে কারণে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়। রূপসা, গল্লামারীসহ কয়েকটি এলাকা থেকে এ মদ সরবরাহ হয়েছে। তবে মদের দোকানের উৎস এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: খুলনায় মদ পানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা: শফিউজ্জামান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম কে বলেন, ‘অতিরিক্ত মদ পানের ঘটনায় যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সবারই পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে মৃত্যু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনও মৃত্যুর কারণ হতে পারে আবার বিষাক্ত কিছু পান করার জন্যও হতে পারে। তবে চূড়ান্ত পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছেনা। চূড়ান্ত রিপোর্ট পেতে এক থেকে তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে।
নাগরিক প্রতিনিধি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সম্পাদক অ্যাড. কুদরত ই খুদা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘খুলনার পুলিশ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নির্জীব। এদের গাফিলতির কারণেই এই ৯ জনের প্রাণ ঝরে গেল। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো কার্যক্রমই দৃশ্যত নয়। অনতিবিলম্বে পুলিশ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর মিলে কার কার মদ বিক্রির লাইসেন্স আছে আর কারা অবৈধভাবে মদ বিক্রি করছে তাদের তালিকা তৈরি করে অভিযান চালানো উচিত। নির্জীব অবস্থা থেকে বেড়িয়ে প্রশাসনের তৎপরতাই পারে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে। এর সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলেই অন্যায় কমতে পারে।
উল্লেখ্য, দুর্গাপূজার উৎসবে অতিরিক্ত মদ পান করে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় ৯ জনের মৃত্যু হয়।