রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ

স্কুল কমিটি নিয়ে ব্যস্ত সভাপতি, ইউপি ভোটে সম্পাদক

  • হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ছবি: সংগৃৃহীত

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ছবি: সংগৃৃহীত

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদী কমিটি সাড়ে পাঁচ বছর পেরিয়েছে। জেলার ছয় উপজেলায় ও ১২ পৌরসভাতে দিতে পারেনি সম্মেলন। এরই মধ্যে মহা ধুমধামে বিয়ে করেছেন সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মিরাজ। বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী। আর সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব স্থানীয় এক প্রভাবশালী বিএনপি নেতার মেয়েকে গোপনে বিয়ে করেছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে এলাকায়।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব খান ও সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মেরাজের বিরুদ্ধে। খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ- দিনভর সংগঠনের গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকেন জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেই কোনো আগ্রহ। অথচ তারা এখনো বহাল তবিয়তে জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদক পদে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৭ মে হাবিবুর রহমান হাবিব ওরফে হাবিব খানকে সভাপতি ও মেরাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছর মেয়াদী রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে এ কমিটি দিয়েই চলছে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম। তারা গত পাঁচ বছরে মাত্র তিনটি ইউনিটের সম্মেলন দিতে পেরেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রলীগের সভাপতি প্রভাব খাটিয়ে পুঠিয়া উপজেলার আল ইনসানিয়া ইসলামীয়া একাডেমি নামের একটি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম বাঘা উপজেলার কিশোরপুর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

সভাপতি স্থানীয় সালিশ দরবার ছাড়াও থানায় তদবির ও টেন্ডার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন অধিকাংশ সময়। আর সাধারণ সম্পাদক করছেন বালু মহালের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। সবশেষ বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।

এদিকে, দীর্ঘদিন জেলা শাখার কমিটি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, 'কমিটি না হওয়ায় ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে। কমিটি হলে নতুনরা নেতৃত্বে আসবে, তখন ছাত্রলীগ আরও শক্তিশালী হবে। নিয়মিত কমিটি না হওয়ায় তরুণ নেতারা কাজ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অনেকেই নেতৃত্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।'

পদপ্রত্যাশী আরেক নেতা বলেন, 'সভাপতি সব সময় পুঠিয়া থানায় তদবির, নিজ এলাকার গ্রাম্য সালিশ-দরবার, টেন্ডার নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। সাধারণ সম্পাদক বালু মহালের কোটি টাকার ব্যবসা করছেন। তাদের দুজনের কেউই সংগঠনে সময় দিতে পারেন না। দুই জনই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত।'

জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'স্কুল কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছায় আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, এজন্য সভাপতি হয়েছি। আমি নিজে থেকে এ দায়িত্বে আসিনি। তাছাড়া আমি দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। এখন ছাত্রলীগ ছেড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের রাজনীতি করতে চাই।'

তিনি বলেন, 'পাঁচ বছর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আছি আর কতদিন থাকব? চাইলে আমার বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখতে পারতাম কিংবা আরও পরে বিয়ে করতে পারতাম কিন্তু তা করিনি। দীর্ঘদিন কমিটি হয় না। এজন্য ধুমধাম করে বিয়ে করেছি। বিয়ের কারণে হলেও আমাকে অব্যাহতি দিয়ে তরুণদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়া হোক এটাই চাই।'

সভাপতি হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব খান বলেন, 'স্কুলটি আমার বাড়ির পাশে হওয়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে সম্মান দিয়ে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি নিজের প্রভাব খাটিয়ে দায়িত্ব নেইনি।'

বিয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমার বিয়ের খবরটি এলাকার মানুষের ছড়ানো গুজব। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমি বিবাহিত, তাহলে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেব।'

নতুন করে কমিটির বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিুবর রহমান ওরফে হাবিব খান বলেন, 'আমি চাই, দ্রুত কমিটি হোক। কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কমিটির বিষয়ে অবহিত করেছিলাম। সেপ্টেম্বর মাসে সম্মেলন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন হওয়ায় তা সম্ভব নয়। আমরা নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সম্মেলন দেওয়ার ব্যবস্থা করব।'

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'দু-দিন হলো আমরা নেতৃত্বে এসেছি। কিছুদিন সময় লাগবে সবকিছু গুছিয়ে উঠতে। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে, মেয়াদ শেষ হওয়া ইউনিটগুলোর দ্রুত কমিটি করা। যেহেতু রাজশাহী জেলা ও মহানগরের কমিটির মেয়াদ দীর্ঘদিন আগেই শেষ হয়েছে, তাই এই ইউনিটগুলোর কমিটি আগে করার চেষ্টা করব।'