খুলনায় গণধর্ষণের পর বাবাসহ হত্যা, ৫ আসামির ফাঁসি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, খুলনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এক্সিম ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা ও তার বৃদ্ধ বাবা, ছবি: সংগৃহীত

এক্সিম ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা ও তার বৃদ্ধ বাবা, ছবি: সংগৃহীত

খুলনায় এক্সিম ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষনের পর তার বাবা ইলিয়াছ আলীকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ৫ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে খুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৩নং ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ মহিদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে এ মামলাটি পরিচালনা করছেন স্পেশাল পিপি এড. ফরিদ আহমেদ। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তার জন্য ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষে এড. কাজী সাব্বির আহমেদ, এড. মোমিনুল ইসলাম, এড. তসলিমা খাতুন, এড. কুদরত ই খুদা।

বিজ্ঞাপন

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, খুলনা নগরীর লবণচরা থানাধীন বুড়ো মৌলভীর দরগা রোডের বাসিন্দা শেখ আব্দুল জলিলের ছেলে সাইফুল ইসলাম পিটিল (৩০), তার ভাই মো. শরিফুল (২৭), মো. আবুল কালামের ছেলে মো. লিটন (২৮), অহিদুল ইসলামের ছেলে আবু সাইদ (২৫) ও মৃত সেকেন্দারের ছেলে মো. আজিজুর রহমান পলাশ (২৬)। এদের মধ্যে শরিফুল ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/16/1563268750618.JPG
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টফোর.কম

 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের মামলায় ২২ জন ও গণধর্ষনের মামলায় ২৮ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ২ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা রয়েছে। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৩নং ট্রাইব্যুনালে মামলাটির যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শুরু হয়। মামলার তদন্ত চলাকালে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৫ জনের মধ্যে ৪ জন গ্রেফতার হয়।

এছাড়াও গ্রেফতার করা হয় পিটিলের স্ত্রী আসমা খাতুন, নোয়াব আলি গাজী ও আসলাম মিস্ত্রি নামের একজন সন্দেহভাজনকে। তাদের মধ্যে লিটন ও সাঈদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।

তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে বলে, ‘ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন অফিসে আসা-যাওয়ার পথে আসামিরা কু-প্রস্তাবসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করতেন। এর প্রতিবাদ করায় ঘটনার দিন রাতে বাড়ির দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে ৫ আসামি। এরপর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পারভীনের বাবাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পাশের রুমে থাকা পারভীনকে ৫ জন মিলে গণধর্ষণের পর হত্যা করে সেফটি ট্যাংকির মধ্যে বাবা ও মেয়ের মরদেহ ফেলে দেয়। পরে ঘরে লুটতরাজ চালিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/16/1563268830192.JPG
আসামিদের কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে জানা যায়, কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে উত্যক্ত করতেন এলাকার কয়েকজন বখাটে সন্ত্রাসী। তাদের উত্যক্তের প্রতিবাদের কারণে ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষনসহ হত্যা ও তার পিতা ইলিয়াস চৌধুরীকেসহ হত্যা করা হয়। নগরীর লবণচরা থানাধিন ব্যুরো মৌলভীর দরগা এলাকার ৩নং গলির ঢাকাইয়া হাউজ এ.পি ভিলা নামের বাড়িতে ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নৃশংস এ খুনের ঘটনা ঘটে। বাবা- ও মেয়েকে হত্যার পর বাড়ির ভেতরে সেফটি ট্যাংকির মধ্যে লাশ ফেলে দেয় খুনিরা। পরে তারা ওই ঘরের টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় লবনচরা থানায় পারভীন সুলতানার ভাই রেজাউল আলম চৌধুরী বিপ্লব বাদী হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলা দায়ের করেন। পারভীন সুলতানাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের অভিযোগে ২২ সেপ্টেম্বর আরও মামলা দায়ের হয়। ২০১৬ সালের ৯ মে হত্যাকাণ্ডের ও একই বছরের ২৪ মার্চ গনধর্ষণের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মোঃ কাজী বাবুল ওই ৫ জনকে অভিযুক্ত করে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।