শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলে আবেদন করবে ডিএমপি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলে আবেদন করবে ডিএমপি

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলে আবেদন করবে ডিএমপি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্টের পর দীর্ঘ সময় জেলে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিনে বেরিয়েছেন। বের হবার পরই নানা ধরনের অপরাধ, অপকর্মসহ আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে জড়ানোর তথ্য পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে কারাগার থেকে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলে আবেদন করবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে এতথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পলায়নে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপরই আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্তত ছয়জন জামিনে মুক্তি পান। তাদের বেশির ভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গত ১৫ আগস্ট দুপুরে মুক্তি পান আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক পুরস্কার ঘোষিত ২৩ সন্ত্রাসীর অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন। ১৬ আগস্ট রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার-৪ থেকে জামিনে মুক্তি পান শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকার অন্যতম ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল। কারামুক্তির পর এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন।

এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুও কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক কার্যক্রম ও তাদের ওপরে পুলিশের আদৌ কোনো নজরদারি আছে কি-না? জানতে চাইলে নিজে পুলিশে কর্মরত থাকাকালে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা স্মরণ করে দিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সতর্ক রয়েছে ডিএমপি। আদালত কর্তৃক জামিনে জেল থেকে বের হয়েছে। তাদের প্রতি নজরদারি রাখা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় জেলে থাকার পরও তাদের মধ্যে কোনো সংশোধন নাই, এটা খুবই দুঃখজনক। বয়স হলেও জেল থেকে বের হয়ে সেই আগের মতো চাঁদাবাজি, দলাদলি শুরু করে দিয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাচ্ছি। জেল থেকে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের অপকর্মে জড়াচ্ছেন। আমরা জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করবো।

তিনি বলেন, দেখতেছি, ক’দিন আগেও দেখলাম বেনজীরের ক্যাশিয়ার খ্যাত জসিম জামিন পেয়েছেন। পত্রিকায় নিয়মিত খবর হচ্ছে সুব্রত, পিচ্চি হেলাল ও ইমনসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে। আধিপত্য নিয়ে তারা বিরোধে জড়াচ্ছেন। নানা অপকর্মে জড়ানোর তথ্য পাচ্ছি। রেকর্ড হচ্ছে, মামলা হচ্ছে। আমরা পেলেই ধরে ফেলবো। কাউকে ছাড় দেবো না। আপাতত আমরা তাদের জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করবো।

খুনের ঘটনাকে যদি ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে মিলিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয় তাহলে তা মানুষের মধ্যে পেনিক সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। আমরা চাই বস্তুনিষ্ঠ সত্য সংবাদটা প্রকাশ পাক। খুনের ঘটনা কিন্তু সব ছিনতাইকারিদের হাতে হচ্ছে না। অনেক হাজারো কারণ আছে খুনের। তারমধ্যে হয়তো একটা কারণ ছিনতাই।

গুন্ডাপান্ডা বা অপরাধীরা নিজেদের মধ্যেও অন্তঃকোন্দলে মৃত্যুর ঘটনাও কাম্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা নিজেরা মারামারি করছে সেখানে প্রোঅ্যাকটিভ পুলিশিং দরকার। আমরা এধরনের ঘটনাকে উৎসাহিত করতে পারি না। এটার কারণে সমাজে নিরাপত্তাহীনতাবোধ তৈরি হতে পারে।

তিনি ক্রাইম রিপোর্টারদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেন, আমি আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাই, আমার কলিগরা কি ধরনের অসুবিধা তৈরি করছে জানান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল, সহ-সভাপতি উমর ফারুক আল হাদী, সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ্, যুগ্ম সম্পাদক নিয়াজ আহমেদ লাবু, অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ মাহমুদ খান, দপ্তর সম্পাদক ওয়াসিম সিদ্দিকী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিহাল হাসনাইন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মানিক, প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক জসীম উদ্দীন, আইন ও কল্যাণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, আন্তর্জাতিক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ মিজান, নির্বাহী সদস্য জিয়া খান, ইমরান রহমান, মোহাম্মদ জাকারিয়া।

ডিএমপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী; যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম; উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ও উপ-পুলিশ কমিশনার (সদরদপ্তর ও প্রশাসন) শাহ মো. আব্দুর রউফ; মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. জাহাঙ্গীর কবির।