আ.লীগ নেতাদের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে ফাঁসানো হলো অস্ত্র দিয়ে!
জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে নিহত কলেজছাত্র তানভীর ছিদ্দিকীর চাচতো ভাই কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা যুবদল নেতা জিয়াউর রহমানকে জিয়াকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এমন অভিযোগ তোলেন তারা। কর্মসূচিতে পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ছাত্র-জনতাও অংশ নেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়ারা বলেন, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তারেক বিন উসমান শরীফের ইন্ধনেই জিয়াকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
মানববন্ধনে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর ফুফি খায়রুন্নেছা রুবি বলেন, ‘যুবদল নেতা জিয়াকে গ্রেফতারের পেছনে আরও ইন্ধন দিয়েছে শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি উসমান গণি। তার সে সময়ের রাজনৈতিক সহযোগী, বন্ধু ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের অনেকে বর্তমানে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। এই মাফিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মী ও জুলাই অভ্যুত্থানের বিপ্লবীদের নিধনের ঘৃণ্য মিশনে নেমেছেন তিনি।’
তানভীর সিদ্দিকীর চাচা কামরুল হাসান রুবেল বলেন, ‘৫ ও ৬ই আগস্ট বা তারও পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে মহেশখালী থানায় হামলা কিংবা পুলিশের অস্ত্র লুটের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কক্সবাজার মডেল থানা, ঈদগাও থানা এবং চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও থানায় উত্তেজিত জনতার হামলার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের সেই উত্তাল সময়ে জিয়া মহেশখালী অবস্থান করছিলেন। এমতাবস্থায় তার কাছে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের তথাকথিত দাবি কীভাবে যুক্তিসঙ্গত হতে পারে?’
কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রশাসন যেভাবে তাকে একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করলো তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে তাহলে কেন তিনি দুটি অস্ত্র এবং তাজা বুলেট নিয়ে নিঃসংকোচে নিজের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন?’
শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর দাদা মো. শফি বলেন, ‘গতমাসে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর পরিবারকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। যা সারাদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই জিয়া। তার তত্ত্বাবধানে হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। তখন সেখানে প্রশাসনের লোকজন, বিশেষ করে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ, পুলিশ ও এবং স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন। তখন কারো মনে হলো না জিয়া একজন দুর্ধর্ষ ডাকাত! সেলুকাস! পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার জেলার ডিসি মহোদয়ও শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ও তার সঙ্গে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য ঘুণাক্ষরেও টের পাননি জিয়া ভয়ংকর ডাকাত!’
আসলে জুলাই বিপ্লবের স্টেকহোল্ডারদের বিবৃত সতর্কবার্তাই সঠিক। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও দোসরদের অর্থনীতির খুঁটি অনেক শক্ত। তারা বিগত পনেরো বছর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জবরদখল, দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় তৈরি করেছে। তারা ইতোমধ্যে সেই টাকা দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এসব খুনিরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জুলাইয়ের বিপ্লবীদের নিধনের মিশনে নেমেছে। প্রশাসনের নাকে৷ ডগায় বসেই তারা এসব অপকর্ম করছে।
শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর পিতা বাদশা মিয়া বলেন, ‘স্বৈরাচারের পতন হয়েছে আজকে প্রায় সাড়ে তিনমাস হতে চললো। শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার একজন আসামিকেও প্রশাসন গ্রেফতার করেনি। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, শহীদ তানভীর, আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ প্রায় দেড় হাজার শহীদের আত্মদান কি তবে ব্যর্থ হবে? আমরা এটা হতে দিতে পারি না। প্রয়োজনে দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এই স্বাধীনতা আমরা রক্ষা করবো।অবিলম্বে জুলাইয়ের হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর জিয়ার বিরুদ্ধে করা সকল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা-বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার করে তাকে মুক্তি দিতে হবে।’
শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচা মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সাবেক ছাত্রদল নেতা রবিউল হাসান কর্নেল, আরকান শাহরিয়ার, মো. কাজল, শ্রমিক দল নেতা সরওয়ার আলম, চট্টগ্রাম যুব ক্যাবের সভাপতি মো. আবু হানিফ, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির নেতা নিয়াজ উদ্দিন দিনার, সৈয়দ সোহরাব সাহল, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল, হাজেরা তজু কলেজের শিক্ষার্থী আফসানসহ অসংখ্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ জনগণ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন।