দোকানি ও যৌথবাহিনীর ওপর হামলার প্রতিবাদে মাঠে হেফাজত

  • স্টাফ কসেরপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হামলার প্রতিবাদে মাঠে হেফাজত/ছবি: বার্তা২৪.কম

হামলার প্রতিবাদে মাঠে হেফাজত/ছবি: বার্তা২৪.কম

চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলিতে দোকানি ও যৌথবাহিনীর ওপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হেফাজতে ইসলাম। এসময় তারা ‘আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইসকন’কে উগ্রবাদী সংগঠন উল্লেখ করে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) জুমার নামাজের পর নগরীর আন্দরকিল্লাহ মোড়ে চট্টগ্রাম মহানগর হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাজিদুর রহমান, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাশেমীসহ মহানগরের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

বিজ্ঞাপন

বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক মাওলানা সায়েম উল্লাহ বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে হিন্দু-মুসলি-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি বজায় রেখে বসাবস করতে আসছি। আমরা সংখ্যায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও কখনো বিধর্মীদের কোন মুসলমান হামলা মামলা করেনি। কিন্তু গত ১৫ বছর এই ইসকন আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের কাঁধে চড়ে এদেশে তাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছিল। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর তারা একের পর এক এদেশের মুসলমান ও প্রশাসনের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- ইসকন কোনো হিন্দু সংগঠন নয়। ইসকন সনাতনী ধর্মে বিরুদ্ধে একটা জঙ্গি সংগঠন। সনাতনীরা ইসকনকে পছন্দ করে না। ইসকন এমন সাহস দেখিয়েছে আমাদের মুসলমান ভাইয়ের দোকানে হামলা চালিয়ে, এতেও তারা থামেনি। আমাদের দেশপ্রেম সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায়, পুলিশের ওপর এসিড নিক্ষেপ করেছে। এই ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। না হয় হেফাজতে ইসলাম আরও বড় কর্মসূচি দিত বাধ্য হবে।

নগর হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা শিবলী নোমানী বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে একটি হিন্দুত্ত্ববাদ জঙ্গি সংগঠন আমাদের দেশপ্রেম সেনাবহিনীর ওপর হামলা করেছে। আমাদের মুসলিম ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করেছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেই হামলার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। হেফাজতে ইসলাম এদেশের তৌহিদী জনতার একটি হৃদয়স্পন্দন একটি সংগঠন। হাজারো শহীদের কাফেলা অরাজনৈতিক একটি সংগঠন হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। আমরা কোনো ভিনদেশী শক্তিকে ভয় পায় না। এই নতুন বাংলাদেশ জনগন রক্ত ও জীবন দিতে জানে। আমি হেফাজতে ইসলামের প্রায় সকলের মত নিয়ে বলতে চাই ইসকন সন্ত্রাসী সংগঠনকে অতিদ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জিহাদুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ইসকন শুধু বাংলাদেশের শত্রু নয়, সারা বিশ্বের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর শত্রু। আমরা দেখে আসছি ইসকন বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের রাজ্য বিস্তারের জন্য তারা রাজনীতি করে আসছে। গতকালকের হামলায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সমস্ত কর্মকাণ্ডের দায়ভার তাদের ওপর দিয়ে ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। যারা হাজারি গলিতে সেনাবাহিনী ও যৌথবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করে অনতিবিলম্বে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

হেফাজত নেতা মাওলানা মীর মোহাম্মদ রব্বানী বলেন, উদ্রবাদী আওয়ামী লীগের দালাল, ইহুদিদের দালাল ইসকন ভাইদের প্রতি আমি অনুরোধ করব, আমাদের ধাক্কানোর চেষ্টা করবেন না। আমাদের ধাক্কানোর চেষ্টা করেন আপনাদের অস্তিত্ব এখানে টিকবে না, ইনশা আল্লাহ।

হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রামের নেতা মাওলানা শহিদ বলেন, আমাদের অবস্থান পরিস্কার। হেফাজতে ইসলাম হেফাজতে ইনসান। হেফাজতে ইসলাম সুশৃঙ্খল একটি সংগঠন। আমাদেরকে বিপদে ফেলানোর কোনো প্রয়োজন নেই। সংখ্যাঘরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে আপনারা হিন্দু বৌদ্ধ আমাদের মেহমান। আপনাদেরকে নিরাপত্তা আমরা দেব। সুন্দর একটা পরিবেশকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করবেন না। মুসলমান ভাইদের নিরাপত্তার জন্য আমরা হেফাজতে ইসলাম মুরব্বিদের সঙ্গে আলোচনা করে যেকোনো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। মুসলমানের দেশে কোনো উগ্র সংগঠন বা ব্যক্তি এখানে পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করে প্রশাসন বসে থাকবেন না। যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দেবে সেখাতে তাদের ওপর আক্রমণ করা এমন দৃষ্টতা প্রকাশ করা সাহস করবেন না, সংযত হওয়ার চেষ্টা করেন। সামনে নির্বাচিত সরকার আসলে তাদের দেশ পরিচালনায় সহযোগিতা করবেন।

মাওলানা সালাউদ্দিন বলেন, আমরা এখানে আজকে কোনো দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য আসিনি। আমাদের মুসলমান ভাইদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ইসকনের দালালেরা। এর প্রতিবাদের আমরা আজ এক হয়েছি। আমরা শাপলা চত্ত্বরে রক্ত দিয়েছি, ৫ আগস্ট রক্ত দিয়েছি। ইসকনকে হঠানোর জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।

এরপর তারা আন্দরকিল্লাহ মোড় থেকে একটি বিশাল মিছিল বের করে। মিছিলে ‘বিশ্বের মুললিম এক হও এক হও, মুসলমানের ওপর হামলা কেন-জবাব চাই জবাব চাই, আমার সোনার বাংলায়-ইসকনদের ঠাঁই নাই, দিল্লি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা’ -এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা। মিছিলটি চেরাগি মোড় হয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়।