তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করায় সিগারেট কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সিগারেট কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি/ছবি: সংগৃহীত

সিগারেট কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি/ছবি: সংগৃহীত

দেশের সিগারেট কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার স্বার্থে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। দেশের সরকার যখন জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক ব্যবহার কমানোর জন্য কাজ করছে, একই সময়ে তামাক কোম্পানিগুলো আইনভঙ্গ করে কিশোর, তরুণ ও যুবকদের ধূমপানে আকৃষ্ট করতে নানা অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তরুণদের ধূমপানে আসক্ত করার অপচেষ্টাকারী সিগারেট কোম্পানিকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ৫০টি তামাক বিরোধী সংগঠন।

সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষাভ সমাবেশে এই দাবী জানান বক্তারা। দেশের ৫০টি তামাক বিরোধী সংগঠন সম্মিলিতভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

তামাক বিরোধী সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে চিকিৎসা ব্যয়ের ‘৭০ শতাংশ’ মানুষ তার নিজের পকেট থেকে ব্যয় করে। তামাক ব্যবহারজনিত নানা রোগের চিকিৎসা খরচ যোগাতে গিয়ে প্রতিবছর দেশের প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। দেশে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো ভয়ংকর অসংক্রামক রোগ বেড়েই চলেছে। যার অন্যতম প্রধান কারণ তামাক ব্যবহার।

তামাকের ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরে বক্তারা বলেন, দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, ১৫ লক্ষাধিক মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে। এমতবস্থায় রোগ ও মৃত্যু কমিয়ে আনতে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত তরুণদের মধ্যে ধূমপান, ভেপিংসহ সকল নেশা দ্রব্যের ব্যবহার কমানো।

বক্তারা আরো বলেন, তামাক কোম্পানি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করে বিক্রয়স্থলে বিজ্ঞাপন প্রচার; স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ধূমপানের স্টল বা দোকান ও বিজ্ঞাপন বুথ স্থাপন ও রেস্টুরেন্ট ধূমপানের স্থান তৈরি করে দিয়ে কিশোর, তরুণ ও যুবকদের ধূমপানে আকৃষ্ট করছে। একই সাথে তারা খুচরা দোকানদারদের ‘আইন ভঙ্গ করে বিজ্ঞাপন প্রদানে’ উৎসাহী করছে, কিশোর তরুণদের জন্য ভেপিং মেলার আয়োজন করছে। সরকার নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দামে সিগারেট বিক্রি করে বিপুল কর ফাঁকি দিচ্ছে তামাক কোম্পানি। এ সবই তারা করছে তাদের মুনাফার স্বার্থে। সিগারেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ থাকলেও বিদ্যমান আইনের দুর্বলতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।

সিগারেট কোম্পানি মিথ্যাচার করছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, তারা সরকার ও আইনকে তোয়াক্কা করছে না। তারা সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে ‘আইন সংশোধন করলে, সরকার রাজস্ব হারাবে’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ ২০০৫ সালে তামাক থেকে রাজস্ব ছিল ২৮৮৮ কোটি টাকা ২০২১ সালে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। বক্তারা বলেন, ২০০৫ সালে দেশে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন এবং ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। ২০০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত তামাকখাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ১১ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দেশে তামাক ব্যবহার প্রায় ১৮% কমে গেছে (গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভের তথ্য)। অতএব এটা পরিষ্কার যে তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে রাজস্ব বাড়ে এবং রোগ ও মৃত্যু কমে।

বক্তারা আরো বলেন, দেশে বিড়ি কোম্পানিতে শ্রমিক নিয়োজিত আছে মাত্র ৬৫ হাজার আর দেশের ৯৫ শতাংশ বাজার দখলে রাখা সিগারেট কোম্পানির প্রতিবেদন অনুসারে তাদের কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র ২০০০ জন। অথচ তারা ৭০ লক্ষ লোক কাজ হারাবে বলে সিগারেট কোস্পানি অপপ্রচার চালাচ্ছে।

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে সম্মিলিত শ্লোগান ধ্বনিত হয়। পাশাপাশি কফিন মিছিল, তামাক কোম্পানির প্রতিকী কুশ পুত্তলিকা প্রদর্শন করা হয়। দেশের তরুণদের নেশাগ্রস্ত করার অপচেষ্টাকারী, অপপ্রচারকারী, আইন লঙ্ঘনকারী সিগারেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমাবেশ থেকে জোর দাবী জানানো হয়।

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী এবং প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহমেদ এর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর পরিচালক সীমা দাস শিমু, এইড ফাউন্ডেশন এর প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, উন্নয়ন সমন্বয় এর হেড অব প্রোগ্রাম শাহীন উল আলম, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বজলুর রহমান, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কারিগরী পরামর্শক আমিনুল ইসলাম সুজন, ডাস্ এ-র টিম লিড আমিনুল ইসলাম বকুল, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী জনাব শরিফুল ইসলাম, কনজুমারন এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর তথ্য কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ। বিক্ষোভ সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন তামাক বিরোধী জোট (বাটা) এর দপ্তর সম্পাদক এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান।