বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জেরে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কর্মী নুরে আলম স্বাধীনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে পৌর ছাত্রলীগের নেতা সারোয়ার হোসেন এ্যানিসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে আহত নুরে আলমের পিতা বিএনপির কর্মী শাহজাহান মিয়া বাদী হয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
বিজ্ঞাপন
মামলার প্রধান আসামি পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সারোয়ার হোসেন এ্যানির পিতা আনোয়ার হোসেন ও ২নং আসামি সারোয়ার হোসেন এ্যানি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে রেলওয়ে পার্কিং এলাকায় ছাত্রদল কর্মী নুরে আলম স্বাধীনকে একা পেয়ে এ্যানি ও তার পিতা আনোয়ার হোসেন ধরে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করে মাথায় মারাত্মক জখম করে। স্থানীয় লোকজন রক্তাত্ত অবস্থায় নুরে আলমকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
শায়েস্তাগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) দীলিপ কান্ত নাথ মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আসাতিদের ধরতে ঘটনার পর থেকেই পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে চলছে অবাধে মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব। মৎস্য অধিদফতর যে ট্রলারের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেন সেই ট্রলারের চালকের নেতৃত্বে টাকার বিনিময়ে জেলেদের মাছ ধরতে সহযোগিতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকশ মাছ ধরার ডিঙ্গি নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো নদী।
অভিযোগ রয়েছে, ইলিশ রক্ষা অভিযান দলের মধ্যে কিছু অসাধু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করেই অবাধে ইলিশ নিধন করছেন জেলেরা। ওই অসাধু ব্যক্তিরা বিশেষ সুবিধা নিয়ে প্রশাসনের অভিযানে নামার খবর জেলেদের কাছে পৌঁছে দেয়। এতে জেলেরা সর্তক হয়ে যান। অভিযান শেষে পুনরায় নদীতে জাল নিয়ে নামেন তারা। তবে নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যেসব জেলেরা মাছ শিকার করছেন তারা অধিকাংশই মৌসুমি জেলে বলে দাবি করেছেন প্রকৃত জেলেরা।
ইলিশ মাছ ধরার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের একাধিক টিম নদীতে অভিযান চালায়। এসব অভিযানে দ্রুত গতির ট্রলার ও স্পিড বোট ব্যবহার করা হয়। এসব ট্রলারের যারা মাঝি থাকেন তারাই জেলেদের কাছে অভিযানের সংবাদ পৌঁছে দেন। এমনকি অভিযানে থাকা মাঝিরা ইলিশ মাছ ধরা এবং বিক্রির সাথেও জড়িত রয়েছেন। তাদেরই একজন নলছিটি মৎস্য অধিদফতরের ট্রলার চালক গৌতম ও ঝালকাঠি মৎস্য বিভাগের ট্রলার চালক সুমন মাঝি। তাদের ট্রলার নিয়ে মৎস্য কর্মকর্তা অভিযানে নামেন।
অভিযোগ রয়েছে, গৌতম ও সুমন জেলেদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অভিযানে নামার সংবাদ জেলেদের কাছে ফাঁস করে দেন। গৌতম ধরা ইলিশ মাছ বিক্রি ও পাচারের সাথেও রয়েছে। যেসব জেলেরা তাদের ম্যানেজ করেন, তারা তাদের অবস্থান জানেন। ফলে অভিযান শুরু হলে ট্রলার চালক ওই জেলেদের মাছ ধরার স্থানে ট্রলার নেন না।
ট্রলার চালক গৌতম ও সুমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের সাথে মৎস্য কর্মকর্তারা থাকেন। আমরা কোনো জেলেদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে খবর দেই না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
নলছিটি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রমনী কুমার মিস্ত্রি বলেন, অভিযানে নামলে কেউ মোবাইল করার সুযোগ থাকে না। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে অভিযানে একই ট্রলার চালক রাখা হয়েছে কেনো? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গৌতমের ট্রলারের গতি বেশি হওয়ার কারণে তাকেই নেয়া হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ট্রলার চালকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদেরকে বাদ দেয়া হবে।
লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহী ১৫৭ জন আটকে পড়া অনিয়মিত বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ভোর ৪টা ২৫ মিনিটে বুরাক এয়ারের (ইউজেড ০২২২) একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে এদের বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্যাবাসনকৃত অসহায় এ সব বাংলাদেশি নাগরিককে বিমানবন্দরে অবতরণের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর কর্মকর্তাবৃন্দ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান।
প্রত্যাবাসিত বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই সমুদ্র পথে অবৈধভাবে ইউরোপ গমনের উদ্দেশ্যে মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় ও সহযোগিতায় লিবিয়ায় অনুপ্রবেশ করেন। তাদের অধিকাংশই লিবিয়াতে বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
দেশে ফেরত আসার পর এই ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে আর যেন কেউ লিবিয়াতে না যায় এ বিষয়ে তাদেরকে সচেতন হওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সবাইকে আহ্বান জানান।
আইওএম-এর পক্ষ থেকে লিবিয়া থেকে প্রত্যাবাসনকৃত প্রত্যেককে ছয় হাজার টাকা, কিছু খাদ্য সমগ্রী উপহার, মেডিক্যাল চিকিৎসা ও প্রয়োজনে অস্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপলি এবং আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)এক সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে (এলজিইডি) দায়িত্বরত প্রকৌশলী ইকবাল কবিরের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। তবে ঘুষ গ্রহণের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তোভোগীরা।
২০২৩ সালে ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয় ইকবালের। সেই থেকে আলোচিত সমালোচিত হন তিনি। ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরালের পর তদন্ত শুরুর কথা শুনলেও কোন তথ্য দিতে পারেননি তার কর্তৃপক্ষ। একটি অফিস সূত্র দাবি করে যে, তদন্ত নামমাত্র শুরু হলেও অনৈতিক সুবিধার মধ্যে তা ফাইলবন্দি রয়েছে।
এদিকে ঘুষের টাকাসহ ভিডিও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লেও তার কোন প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগীরা। বরং ভিডিও ধারণকারীকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন ইকবাল কবির।
গণমাধ্যমে নাম প্রকাশে না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা জানান, পাবনার ঈশ্বরদী এই প্রকৌশলীর বাড়ি। সেখানে তিনি ঠিকাদারদের দিয়ে বস্তায় বস্তায় ইলিশ মাছ 'উপহার' পাঠাতে বাধ্য করেন। তিনি ৫ আগষ্টের পর সাধারণ ঠিকাদারদের আ'লীগ পন্থী বলে চালিয়ে দিয়ে বিল আটকে দিচ্ছেন। আবার যে পরিমাণ ঘুষ দাবি করছেন তা পেলে ফাইল ছেড়ে দিচ্ছেন। তিনি এতটাই বেপরোয়া যে তার বদলী রাজাপুর হওয়ার পরও টাকার জোরে তা থামিয়ে নলছিটিতেই থেকে গেছেন। কারন এই ছোট উপজেলায় দুর্নীতি দমন কমিশন বা অন্য তেমন কারও নজর সহজে পড়েনা।
এদিকে ভাইরাল সেই ৪৪ সেকেন্ডের ঐ ভিডিওটি আবারও আলোচনায় আসে এবং নতুন করে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে ইকবাল কবিরের বিচার চান অনেকে। ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, নিজ দফতরের চেয়ারে বসে থাকা প্রকৌশলী ইকবাল কবিরকে অপর পাশ থেকে কিছু টাকা দিচ্ছে। টাকাটা টেবিলে রাখার কিছুক্ষণের মধ্যে হাতে নিয়ে পকেটে রেখে দেন ইকবাল কবির।
এ বিষয়ে ইকবাল কবিরকে ফোন দিলে তিনি কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি এবং হোয়াটসঅ্যাপে তাকে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
তদন্তের বিষয় জানতে ঝালকাঠির এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরে লিখিতভাবে জানতে চাইলে তার কোন উত্তর এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত হাতে আসেনি প্রতিবেদকের।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন টাঙ্গাইলের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান কিসলু (৫৮)।
সোমবার (২১ অক্টোবর) রাতে নাগরপুর সদর নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে নাগরপুর থানা পুলিশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতারকৃত আসাদুজ্জামান খান কিসলু নাগরপুর উপজেলার বেকড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বেকড়া গ্রামের মৃত. সাত্তার খানের ছেলে।
অভিযোগ ও পুলিশ জানায়, গত ৪ আগস্ট নাগরপুর বাজারে শান্তিপূর্ণভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনকালে একটি সন্ত্রাসী দল ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। হামলার ঘটনায় তাইজুল ইসলাম নামের এক ছাত্র ৬৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৭০/৮০ জনের নাম উল্লেখ করে নাগরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
নাগরপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।