দেশে নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে: কৃষক ফেডারেশন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বিশ্বের ক্ষুধা সূচক-২০২৪ অনুযায়ী এ বছর ক্ষুধা নিবারণের সক্ষমতায় ১২৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩ ধাপ পিছিয়ে ৮৪তম অবস্থানে রয়েছে। সূচক মতে বাংলাদেশ এখন মাঝারী মাত্রার ক্ষুধা মোকাবেলা করছে। এক কথায় দেশে নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি কমরেড বদরুল আলম।

সোমবার (২১অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন আয়োজিত সমাবেশ, মানববন্ধন ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ মন্তব্য করে তিনি।

বিজ্ঞাপন

বদরুল আলম বলেন, জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান যে লক্ষ্য নিয়ে প্রতি বছর বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি। বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার ছলে খাদ্যহীনতা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। আজও সারা বিশ্বে ৭৫ কোটি মতান্তরে ১০০ কোটি মানুষ প্রতিদিন ক্ষুধার্ত থাকে। বিশ্বের ৪৫০ কোটি মানুষ পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পায় না। এ মানুষের ৫০ শতাংশ অবস্থান করছে এশিয়া মহাদেশে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ তরফে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নিবারণ কল্পে ২০০০ সালে ১৫ বছর মেয়াদী সহাস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য' ঘোষণা করা হয়েছিল। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় ২০১৫ আবার ১৫ বছর মেয়াদী অর্থাৎ ২০৩০ সাল পর্যন্ত 'স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য' ঘোষণা করা হয়। আজ ২০২৪ সালের শেষ পর্যায়। বাকী ৫ বছরে লক্ষ্য পূরণ হওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই। এ সব কিছু নির্দেশ করে বিশ্বের নীতিনির্ধারকরা সমাধানের সঠিক রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না অথবা সচেনভাবে বিশ্বের জনগণকে ধোকা দিচ্ছে। অথবা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতার প্রশ্ন নিয়ে জনগণের সাথে নিছক তামশা করছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এ মূহুর্তে এক কঠিন সময় পার করছে। প্রায় আড়াই মাস আগে একটি সরকারের পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও জনজীবনে স্বস্তি আসেনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে নাভিশ্বাস এনেছে। বেশির ভাগ মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না। খাদ্য ক্রয়ের সক্ষমতা না থাকার কারণে মানুষ অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে স্বাস্থ্যহানী ঘটাচ্ছে। অভিমূল্যে খাদ্য কিনতে গিয়ে চিকিৎসা খরচ মেটাতে পারছে না। অথচ খাদ্য ও চিকিৎসা দুটোই জনগণের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার।

তিনি বলেন, প্রায় ২২ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে তাদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা মারাত্মক পর্যায়ের। তাদের জন্য যে সামাজিক সুরক্ষাজাল রয়েছে তা এ অবস্থা হতে উত্তরণে মোটেই যথেষ্ট নয়। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য টেকসই কৃষি ব্যবস্থা তথ্য পরিবেশ-বান্ধব চাষাবাদ (যগ্রোইকোলজি) প্রবর্তন ও জমি এবং পানির উপর জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আগ্রোইকোলজি অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি। বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্র কৃষক ও পারিবারিক কৃষককে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে খাদ্য সার্বভৌমত্বের নীতি-কৌশল দেশে দেশে উন্নয়ননীতিমালায় সংযুক্ত ও বাস্তবায়ন করা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের ক্ষুধা সূচক-২০২৪ অনুযায়ী এ বছর ক্ষুধা নিবারণের সক্ষমতায় ১২৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩ ধাপ পিছিয়ে ৮৪তম অবস্থানে রয়েছে। সূচক মতে বাংলাদেশ এখন মাঝারী মাত্রার ক্ষুধা মোকাবেলা করছে। এক কথায় দেশে নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে বলা যায়।

এ অবস্থা হতে বেরিয়ে আসার জন্য দেশের সরকারকে দেশের সক্রিয় কৃষক সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট পথনকশা বের করা আহবান জানান তিনি।

এসময় সংগঠনের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়:

১। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফকে আমাদের খাদ্য ব্যবস্থা হতে হাত গুটাতে হবে
২। আমাদের খাদ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য বিশ্বের ধনি দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
৩। কৃষি জমি অন্য কাজের জন্য রূপান্তর বন্ধ করতে হবে
৪। জমি ও পানির অধিকার জনগণকে এখনই ফিরিয়ে দিতে হবে
৫। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে, স্থানীয় উৎপাদনকে সহায়তা করতে হবে
৬। রপ্তানির উদ্দেশ্যে এক ফসলি চাষাবাদ বন্ধ করতে হবে
৭। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে
৮। পরিবেশ-প্রতিবেশ বান্ধব চাষাবাদের ধরণ চালু করতে হবে
৯। ক্ষুধা-দারিদ্র্য নিরসনে খাদ্য সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে

মানববন্ধনে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি কমরেড বদরুল আলমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি প্রবীন শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইন, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান, সহ-সভাপতি রেহেনা বেগম, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভানেত্রী লাভলী ইয়াসমিন, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামীম আরা, বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির সহ-সভাপতি ডা. সামসুল আলম, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান নয়ন, ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম আক্তার, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভানেত্রী সালেহা ইসলাম শান্তনা ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সালমা আক্তার, ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন দুলাল, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু মিয়া, বাংলাদেশ ছাত্র সভা গঠন প্রক্রিয়ার আহবায়ক লিডিয়া আহমেদ সিলভাসহ প্রমুখ।