বন্যা কবলিত জেলায় যত ক্ষতি

  বন্যা পরিস্থিতি
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বন্যা/বার্তা২৪.কম

ছবি: বন্যা/বার্তা২৪.কম

টানা বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশের আট জেলার ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় প্লাবিত ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশের ৫ কিলোমিটার এলাকা। ফলে বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার যান চলাচল।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এসব জনগণের জন্য জেলা ভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। আট জেলায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০ টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দিতে মোট এক হাজার ৫৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন লোক এবং ৭ হাজার ৪৫৯টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব।

কোন জেলায় কত ক্ষতি?

ফেনী

ফেনী জেলার ৬টি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত। পানি বন্দি ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। বন্যার পানিতে ডুবে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২০ হাজার মানুষ। ৭৬টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ ৪২ লাখ এবং ত্রাণ কার্য (চাল) ১ হাজার ৪০০ টন ও শুকনা খাবার ৩ হাজার প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

নোয়াখালী

নোয়াখালী জেলার ৮টি উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দী পরিবার সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯০০ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১৯ লাখ ৮০ হাজার জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ৩৮৮টি৷আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৩৬ হাজার ১১৫ জন ও আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ৪ হাজার ৭১৪টি। ৮৮টি মেডিকেল টিম চালু। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ ২৫ লাখ টাকা এবং ত্রাণ কার্য (চাল) ১ হাজার ৬০০ টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম

বন্যায় চট্টগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দী পরিবার সংখ্যা ৩৫ হাজার ৭৫০ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ২৩৯টি৷ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারীর সংখ্যা ১ হাজার ৭২৫ জন এবং ৬২টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ১৩৭টি মেডিকেল টিম চালু। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ ১৫ লাখ টাকা এবং ত্রাণ কার্য (চাল) ১ লাখ ৬০০ টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি

বন্যায় খাগড়াছড়ি জেলার ৮টি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দী পরিবার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৫২২ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ৭১ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ৯৯টি। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারীর সংখ্যা ৯ হাজার ১৩ জন এবং আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১ হাজার ৮৩৪টি। মেডিকেল টিম চালু ১৮টি৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ত্রাণ কার্য (চাল) ৮০০ টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লা

বন্যায় কুমিল্লা জেলার ১২টি উপজেলার ১২৪টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬১টি। দুর্যোগকবলিত জনসংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ জন। ৫৮৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৪ হাজার ৩০২ জন এবং গবাদিপশুর সংখ্যা ৬৬৭টি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ ২৫ লাখ টাকা এবং ত্রাণ কার্য (চাল) ১ হাজার ৬০০ টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

জেলার ২টি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ পানিবন্দী পরিবার সংখ্যা ১২শ’ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪ হাজার ৯৯১ জন। নিহত হয়েছেন ১ জন। ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র আশ্রয় গ্রহণকারীর সংখ্যা ৪৮ জন। মেডিকেল টিম চালু আছে ৬টি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ ১৫ লাখ টাকা এবং ত্রাণ কার্য (চাল) ১ হাজার ৬০০ টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজার জেলার ৬টি উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দী পরিবার সংখ্যা ২২ হাজার ৫৭৭ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ৬৬৭ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ১৬টি। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারীর সংখ্যা ৪ হাজার ৩২৫ জন এবং আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১৮২টি। মেডিকেল টিম চালু আছে ৩১টি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ত্রাণ কার্য (চাল) ১ হাজার ৮৫০ টন ও শুকনা খাবার ১ হাজার প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ

বন্যায় হবিগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পানিবন্দী পরিবার সংখ্যা ৮ হাজার ২৪০ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ১১৬টি। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারীর সংখ্যা ১৪০ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ ২৫ লাখ টাকা এবং ত্রাণ কার্য (চাল) ১ হাজার ৯০০ টন ও শুকনা খাবার ৩ হাজার প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।