পাঠক হৃদয়ে বেঁচে আছেন হুমায়ুন আহমেদ

  ‘এসো মিলি প্রাণের মেলায়’
  • কানজুল কারাম কৌষিক, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

‘পৃথিবীতে ফিনিক ফোটা জোছনা আসবে। শ্রাবণ মাসে টিনের চালে বৃষ্টির সেতার বাজবে। সেই অলৌকিক সঙ্গীত শোনার জন্য আমি থাকব না। কোনো মানে হয়.....!’

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের এই লেখাটিতে বোঝা যায় তিনি আক্ষেপ করে বলছেন, একদিন তাঁর মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হবে কিন্তু পৃথিবী তার স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে। এর কোন মানে হয় না। কিন্তু বাংলা ও বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলার ২০২৪ এ এসে মনে হয় হুমায়ুন আহমেদ যেন এখনো পৃথিবীর বুকেই আছেন স্বশরীরে। প্রায় এগারো বছর হলো নন্দিত লেখক হুমায়ুন আহমেদকে ছাড়া বইমেলা হচ্ছে। কিন্তু এখনো পাঠক হৃদয়ে বেঁচে আছেন হুমায়ুন আহমেদ। বাঙালি পাঠকরা এখনো খুঁজে বেড়ান তাদের প্রিয় হুমায়ুন আহমেদকে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র লক্ষ করা যায়।

অন্যপ্রকাশ, কাকলী, অনন্যা, অবসর, মাওলা ব্রাদার্স, অন্বেষাসহ বেশ কিছু প্রকাশনীতে নতুন বই এলেও বহু বছর ধরে বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের বই। এইসব স্টলগুলো সাজানো হয়েছে হুমায়ুন আহমেদকে কেন্দ্র করেই। স্টলগুলোতে যে দিকে হুমায়ূনের বই রাখা, পাঠকদের ভীড় যেন সেদিকেই বেশি।

কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশক এ কে নাছির আহমেদ বার্তা ২৪.কমকে বলেন, অন্যবার দেখা যায় মেলা জমতে দুই সপ্তাহ লেগে যায়। তবে এবার প্রথম দিকে মেলা জমে গেছে। আমাদের প্রকাশনীতে এখনো বিক্রিতে শীর্ষে হুমায়ুন আহমেদ। শরৎচন্দ্র চট্টোপধ্যায়ের বই যেমন এখনো পাঠক খুঁজে ঠিক তেমনই হুমায়ুনের আহমেদের বইও পাঠক খুঁজে খুঁজে কিনছে। এর একটা কারণ হতে পারে পাঠকের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা, সহজ ভাষায় লিখতে পারার গুণ। 

অনন্যা প্রকাশনীতে হুমায়ুন আহমেদের বই সংগ্রহ করছিলেন সুলতানা শারমিন। তিনি বার্তা ২৪.কমকে বলেন, অন্যান্য লেখকের বইও পড়া হয়, তবে হুমায়ূন আহমেদের লেখাগুলো সহজ ও সুখপাঠ্য। তার চরিত্রগুলোকে দিয়ে তিনি অকপটে কথা বলিয়ে নিয়েছেন। আর গল্পগুলো যেন মনে হয় আমাদের মধ্যবিত্তদের যাপিত জীবনের গল্প। আমরা খুব সহজে তার লেখার সাথে রিলেট করতে পারি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ ইশতিয়াক রাহুল হুমায়ুন আহমেদের 'অপেক্ষা' বইটি সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় তিনি বার্তা ২৪.কমকে বলেন, হুমায়ুন আহমেদের লেখায় মধ্যবিত্ত শহুরে জীবনের সুনিপুণ চিত্র ফুটে ওঠে। মনে হয়, আমি নিজেই এই বইয়ের একটি চরিত্র। যার কারণে হুমায়ুন আহমেদের বই আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষিত ও মুগ্ধ করে।

অন্যপ্রকাশ প্রকাশনী থেকে হুমায়ুন আহমেদের প্রায় ১১৬টি বই বেরিয়েছে। তাই হুমায়ুন আহমেদের বই কেনা উপলক্ষ্যে তাদের প্যাভিলিয়নটিতে পাঠকের ভিড় লেগে থাকে সবসময়। অন্যপ্রকাশের এক বিক্রয় প্রতিনিধি সানজানা জেবিন জানান, হুমায়ুন আহমেদের সব বই'ই অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে। বৃদ্ধ থেকে তরুণ সকলই হুমায়ুন আহমেদের বই কিনছে। অনেকের হয়তো হুমায়ুন আহমেদের সব বই পড়া শেষ কিন্তু সংগ্রহে নেই, তারাও সংগ্রহের জন্য কিনছে। এর মধ্যে মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, দেয়াল, বাদশাহ নামদার, বৃষ্টিবিলাসসহ কিছু বইয়ের চাহিদা তুলনামূলক ভাবে বেশি।

হুমায়ুন আহমেদের ২৭টি বই প্রকাশ করেছে অন্বেষা প্রকাশনী। প্রকাশনীটির প্রকাশক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, হুমায়ুন আহমেদের নতুন কোন বই প্রকাশিত না হলেও আগের মতোই রয়েছে বই বিক্রি। বিশেষ করে তরুণ পাঠকদের কাছে হুমায়ুনের আবেদন একটুও কমেনি। এর একটা কারণ হতে পারে, হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের চরিত্রগুলো। হিমু, শুভ্র, মিসির আলী যেন আমাদের যাপিত জীবন থেকেই নেওয়া।

মাওলা ব্রাদার্স এর দায়িত্বরত বিক্রয়কর্মী তামিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, হুমায়ুন আহমেদের ২/৩ টা বই আমাদের স্টলে আছে। পাঠক তো ভুল করে এখনো জিজ্ঞেস করে বসেন স্যারের কোন নতুন বই বেরিয়েছে কি না। তিনি জানান, প্রিয়তমেষু, আমরা কেও বাসায় নেই, দূরে কোথায়, নীল অপরাজিতা বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে আমাদের স্টলে।