মহাসড়ক ঘেঁষে মডেল পাম্প, প্রকৃত সুফল নিয়ে শঙ্কা!

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মহাসড়ক ঘেঁষে মডেল পাম্প, প্রকৃত সুফল নিয়ে শঙ্কা!

মহাসড়ক ঘেঁষে মডেল পাম্প, প্রকৃত সুফল নিয়ে শঙ্কা!

সিলেট থেকে: বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ধীরে ধীরে সারাদেশে মডেল পাম্প করা হবে। পুরনোগুলো এখনই বন্ধ করা হচ্ছে না, আমরা চাই তারাও এগিয়ে আসুক।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে (ওসমানী নগরের দয়ামীর) মেসার্স হাজী মাসহুদ আলী মডেল পেট্রোল পাম্প উদ্বোধন শেষে প্রতিমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি প্রমুখ।


বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) মুজিববর্ষ উপলক্ষে কয়েকটি মডেল পেট্রোল পাম্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। দেশের প্রচলিত পেট্রোল পাম্পে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো গ্রাহকসেবার ব্যবস্থা থাকে না। কিন্তু মডেল পেট্রোল পাম্পগুলোতে সেবার সব আয়োজন থাকবে। যাত্রীরা লম্বা রাস্তা ভ্রমণ করতে গিয়ে ক্লান্ত হলে যাতে বিশ্রাম নিতে পারেন, সে ব্যবস্থাও থাকছে এতে। সাধারণত ইউরোপ ও আমেরিকার স্টেশনগুলোতে এ ধরনের ব্যবস্থা বিদ্যমান।

পাম্পের সব কাঠামো উন্নত বিশ্বের সঙ্গে মেলানো হলেও  মহাসড়ক ঘেঁষে স্থাপন করায় এর প্রকৃত সুফল নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে সাধারণত মহাসড়ক থেকে খানিকটা দূরে অ্যাপ্রোচ রোড দিয়ে পাম্পে প্রবেশ করতে হয়, যাতে করে মহাসড়কের ওপর কোন বিড়ম্বনা তৈরি না হয়। যানবাহনগুলো লম্বা অ্যাপ্রোচ রোড ধরে দূরে গিয়ে মহাসড়কে উঠে থাকে। এতে করে মহাসড়কে প্রবেশের পূর্বেই গতিসঞ্চার করায় মূল সড়কের থাকা দ্রুতগতির যানবাহনে কোন বিঘ্ন ঘটে না। কিন্তু এখানে পাম্পগুলো মহাসড়ক ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে। গাড়িগুলো আড়াআড়িভাবে সড়কে প্রবেশ করার সুযোগ থাকায় যানজটের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।


প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পেট্রোল পাম্পের নীতিমালা করা হয়েছে। শহরে কেমন হবে, হাইওয়ের পাশ কেমন হবে, গ্রামীণ এলাকায় কেমন হবে। এ জন্য আলাদা নকশা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে হাইওয়ে সড়কের পাশে ৮টি মডেল পাম্প করা হচ্ছে, তারমধ্যে ৬টি চালু হয়েছে। আমরা অনুমোদন দিয়েছি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে।

তিনি বলেন, মডেল পেট্রোল পাম্পে অনেক সুবিধা থাকবে। তেল নেওয়ার পাশাপাশি এখানে বিদ্যুতের চার্জিং স্টেশন থাকবে। দীর্ঘ যাত্রার পর গাড়ির চালকরা এখানে বিশ্রাম নিতে পারবেন। তাদের গোসলের জন্য ব্যবস্থা থাকবে।

নতুন নীতিমালায় সারাদেশে কতগুলো পেট্রোল পাম্প দরকার, একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব কত হবে তাও নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, মডেল পাম্পের জন্য জমি প্রয়োজন হবে সোয়া দুই একর থেকে আড়াই একর। এর মধ্যে হাইওয়ে ব্যবহারকারীদের সুযোগ সুবিধার জন্য বরাদ্দ থাকবে ১০ হাজার ২৫৮ বর্গফুট জায়গা। রেস্টুরেন্টের আয়তন হবে ২ হাজার ৯০৬ বর্গফুট। যার আসন সংখ্যা কমপক্ষে ৮২টি থাকতে হবে। শিশুদের খেলার জন্য ১৫০ বর্গফুট, বেবি ফিডিং এরিয়া ১০০ বর্গফুট। নামাজের জন্য ২৪০ বর্গফুট, রান্নাঘর ১ হাজার ৪৮৫ বর্গফুট, পাম্প মালিকের কেবিন ৩০০ বর্গফুট। ওয়াশরুম কক্ষের আয়তন ৬৫ বর্গফুট। এটিএম বুথ ২২৫ বর্গফুট। টয়লেট জোন হবে ১ হাজার ১৫৫ বর্গফুটের। পুরুষদের জন্য নির্ধারিত টয়লেটের আয়তন ৫৪৮ বর্গফুট (একসঙ্গে ২০ জনের ব্যবহারযোগ্য), নারীদের টয়লেট হবে ২৭০ বর্গফুটের (একসঙ্গে ৯ জনের ব্যবহারযোগ্য)। প্রতিবন্ধীদের জন্য  ৬৭ বর্গফুট এলাকা। পাম্পের কাউন্টার এবং লুব্রিকেন্ট স্টোরেজের জন্য  জায়গা, ৮ জনের অফিস কক্ষ, স্টাফ বিশ্রামের জায়গা, পাম্প ব্যবহারকারীদের জন্য মোবাইল ফোন চার্জিং পয়েন্ট ও মেডিকেল ইউনিট।


পাম্প শেডের আয়তন থাকতে হবে ১০ হাজার বর্গফুটের। যাতে একসঙ্গে ২২টি গাড়ি তেল ও গ্যাস নিতে পারবে। সার্ভিস এরিয়ায় থাকবে বাস ও গাড়ি ওয়াশিং জোন। ২২৬ বর্গফুটের টুলস রুমে থাকবে ব্যাটারি পরিবর্তন-চার্জিং ও টায়ার পাম্পিং সুবিধা। থাকবে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও। ড্রাইভার জোনের আয়তন হবে ২ হাজার ২৫৩ বর্গফুট। সেখানে ৯৪৩ বর্গফুটের রেস্টুরেন্ট, ৪৯০ বর্গফুটের কিচেন, ৩৮০ বর্গফুটের টয়লেট থাকছে। থাকবে চালকদের গোসলের ব্যবস্থা। পাম্পে ১৩টি ব্যক্তিগত গাড়ি, ২০টি বাস ও ট্রাক পার্কিং ব্যবস্থা থাকবে। ফুয়েল আনলোডিং ক্যাপাসিটি থাকবে একটি।

প্রতিমন্ত্রী তিন দিনের সরকারি সফরে সিলেট অঞ্চলে রয়েছেন। কয়েকটি গ্যাস ফিল্ডের কূপ খনন ও প্রসেস প্লান্ট পরিদর্শন, পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ উদ্বোধনসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি রাখা হয়েছে তার সফরসূচিতে। ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান কূপ কৈলাশটিলা-৮ খনন প্রকল্প পরিদর্শন, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের ডাটা সেন্টার উদ্বোধন করেন।