ভোট চাইতে গিয়ে ‘পীরের বংশধর’ পরিচয় সামনে আনলেন মনজুর

  ভোট এলো, এলো ভোট
  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভোট চাইতে গিয়ে ‘পীরের বংশধর’ পরিচয় সামনে আনলেন মনজুর

ভোট চাইতে গিয়ে ‘পীরের বংশধর’ পরিচয় সামনে আনলেন মনজুর

 

চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) আসনে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম। এই আসনে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল ভোটযুদ্ধের আভাস মিলেছে। দুই প্রার্থীও একে অপরের বিপক্ষে নানা অভিযোগ-অনুযোগ তুলে মাঠ গরম রেখেছেন। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে এসেও প্রতিপক্ষের তোলা নালিশের জবাব দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলম।

বিজ্ঞাপন

তবে ইশতেহার ঘোষণার সময় মনজুর আলমকে একটি বিষয় বারবার সামনে আনতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ইশতেহার ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নিজের পীর বংশের পরিচয়টা বারবার টেনেশেন মনজুর আলম।

মোহাম্মদ মনজুর আলম চার পৃষ্টার একটি লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শোনান। সেই বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার সম্মানিত এলাকাবাসীর সদয় জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, আমরা হযরত মনছুর আলী শাহ (র.) এর বংশধর। চট্টগ্রাম পীর আউলিয়াদের পূণ্যভূমি। এ অঞ্চলে বসবাসরত সকল মানুষ যাতে নিঃস্বার্থভাবে সেবা পায় এই আমার অঙ্গীকার।’ এই বক্তব্যটি লিখিত বক্তব্যে পুনরায় ‘হাইলাইট’ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করতে গিয়েও পীর বংশের কথা বারবার সামনে এনেছেন মনজুর আলম।

মনজুর আলমের বারবার পীর বংশ পরিচয় সামনে আনার বিষয়ে অনেকেই বলছেন, চট্টগ্রামের মানুষ ধর্মভীরু। চট্টগ্রামকে বারো আউলিয়ার পূণ্যভূমিও বলা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলের মানুষ পীরভক্তও। সেজন্য ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়তো পীর বংশের পরিচয়টি সামনে এনেছেন মনজুর আলম।

মতবিনিময় সভায় নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন মনজুর আলম। তিনি ২০টি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

পাশাপাশি কদিন আগে ২০০৭ সালে বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী জরুরি অবস্থায় এম মনজুর আলমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। সেই প্রশ্নের জবাব দেন মনজুর আলম। তিনি বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনে কার কী ক্ষতি করেছি, মহিউদ্দিন বাচ্চুর কোনো ক্ষতি করেছি কি না সেটা খুঁজে বের করুক।’

গত মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওয়ান-ইলেভেনে এম মনজুর আলমের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি বলেছিলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনে মনজুর আলমের ভূমিকা চট্টগ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়ে বেদনার দাগ কেটেছিল।’ তবে মনজুরের ভূমিকা কী ছিল সেটা খোলাসা করেননি বাচ্চু।

ওয়ান-ইলেভেনে ভূমিকা নিয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চুর করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মনজুর বলেন, ‘উনি বলেছেন ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে। ওয়ান-ইলেভেনে আমি দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছি। আপনারা সাংবাদিক ছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ছিলেন মাঠে। আমার দ্বারা কার ক্ষতি হয়েছে, উনার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না খুঁজে বের করুক।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনকে কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে সাবেক এ সিটি মেয়র বলেন, ‘১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শুরু হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর থেকে প্রচারনা কার্যক্রম চালাচ্ছি। কিছু কিছু জায়গায় আমি হয়রানির শিকার হয়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগে নালিশ করেছি। নালিশের মাধ্যেমে আমরা এগুলো সুরাহা পাচ্ছি। আশা করছি আগামী ৭ জানুয়ারি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

দান করার পর বিনিময় চান নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর এমন অভিযোগের বিষয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বিনিময় কেন চাইব। উনার কাছেওতো কিছু চাইনি। আমি ১০৩টি প্রতিষ্ঠান করেছি। আমাকে কে বিনিময় দেবে? আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছি। আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, আমি মানুষের স্বার্থে দান করছি।’

জেতার পর আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যখন স্বতন্ত্র একদম স্বতন্ত্র থাকতে চেষ্টা করবো। কোথায় যাব সেটির কোনো ঠিকানা নাই। আমার ঠিকানা হবে জাতীয় সংসদ।’

নির্বাচিত হলে সংসদে গিয়ে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল আইন ও সাংবাদিকদের নিবৃত্ত করার যে আইন সেগুলো নিয়ে কি ভূমিকা থাকবে এমন প্রশ্নে সাবেক এ কাউন্সিলর বলেন, ‘আগে পার্লামেন্টে যেতে দিন। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমি কারও আজ্ঞাবহ নই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদে গিয়ে দেশের পক্ষে মানুষের স্বার্থে কথা বলব।’