‘এক কাপ চা-ও পাইলাম না, প্রার্থীও চিনি না —ভোট দিমু কারে?’

  ভোট এলো, এলো ভোট
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

‘এক কাপ চা-ও পাইলাম না, প্রার্থীও চিনি না —ভোট দিমু কারে?’

‘এক কাপ চা-ও পাইলাম না, প্রার্থীও চিনি না —ভোট দিমু কারে?’

‘আগে ভোট আঁইলে প্রার্থীরা খোঁজখবর নিতো। চা-র দোকানে আইয়া, চা খাওয়াইতো। কি ভোট অয় অখন! প্রার্থীই চিনি না। প্রার্থীদের দেখি শুধু পোস্টারে। প্রার্থীই যদি না চিনি ভোট দ্যাবো কারে? আগে দ্যাখতাম প্রার্থীরা বাড়ি আইসা হাতেপায়ে ধরতো। অখন বাড়ি আসা তো দূরে থাক, চিনিই না কাউরে!— ভোট কারে দিমু।’

এভাবেই মনের ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন সূত্রাপুর ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকার চা দোকানী হামিদ মিয়া।

বিজ্ঞাপন

হামিদ মিয়া বলেন, আগে নির্বাচনে সব প্রার্থীদের এলাকার মানুষ চিনতো। প্রচারণার সময় প্রার্থীরা চা দোকানে আসতো। এক জায়গায় দাঁড়ালে অনেক মানুষ জড়ো হতো। সবাইরে চা খাওয়াইতো। নেতা চায়ের বিল দিতো। ভোটের  একটা আমেজ হইতো। এখন প্রার্থীদের দেখা যায় শুধু পোস্টারে। ভোট নিয়ে চায়ের দোকানে এখন আলোচনাও হয় না।


এদিকে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) শেষ হচ্ছে প্রার্থীদের প্রচারণা। এর দুইদিন পর আগামী ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে না আসায় কিছুটা নিরুত্তাপ পরিবেশ। তবে শেষ মুহূর্তে কিছুটা হলে নির্বাচন জমজমাট ও অংশগ্রহণমূলক করতে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এখন তাদের কাছে ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিটাই চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে নিয়মিত জনসংযোগ করে যাচ্ছেন নৌকার প্রার্থীরা। পাড়া-মহল্লা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, বাসা-বাড়িতে ভোটারদের কাছে হাজির হচ্ছেন তারা। শেষ মুহূর্তে ভোট কেন্দ্রে এসে সশরীরে ভোট দেয়ার আহ্বান ও প্রতিশ্রুতি নিচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা।

রাজধানী জুড়ে একক প্রচারণায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও নৌকার কয়েকজন প্রার্থীর। অন্যান্য দলের প্রার্থীদের ব্যানার-পেস্টুন দেখা মিললেও প্রচারণা ও জনসংযোগ নেই বললেই চলে।

ঢাকা মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা মনির হোসেন। ৪০ বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। আগে মুগদা এলাকায় ছিলেন। এবারের মতো নির্বাচনী পরিবেশ দেখেননি তিনি। ঢাকার ভোটার হলেও কোন প্রার্থী বা তার সমর্থক ভোট চাইতে আসেননি।

‘আগে এলাকাগুলোতে ভোটের সময় দোকানে প্রার্থী চা ফ্রি দিত। পরে তারা দোকানদারের টাকা পরিশোধ করতেন প্রার্থী। একটা উৎসব উৎসব ভাব ছিল- এখন তা নেই। যামুনে ভোট দিতে- ব্যালট দেখে সিল মারমু।’


ঢাকা জেলার ৫টি ও মহানগরের ১৫টি আসন রয়েছে। এই ২০টি আসনে মোট প্রার্থী ১৫৬ জন। তার মধ্যে ঢাকার ১৯টি আসনে নৌকার প্রার্থী আছেন। ১৬টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রার্থী দিয়েছে ‘আম’ প্রতীকের ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আছেন ১৩টি আসনে।

এরপর তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের ১১টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ছড়ি প্রতীকের ১১টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) টেলিভিশন প্রতীকে ১০টি, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের প্রার্থী আছেন ৬টি আসনে। এছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশেরও প্রার্থী আছে ঢাকায়। কিন্তু বেশিরভাগ প্রার্থীই ঢাকার ভোটারদের কাছে অচেনা।

ঢাকা-১৪ আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মোঃ মাহমুব মোড়ল বলেন, আমরা ছোট দল তাই অন্যান্য দলের চাইতে আমাদের প্রচারণাও কম। আমি চেষ্টা করেছি আমার নির্বাচনী এলাকার সকল মানুষের কাছে যেতে। আমি সবার সাথে যোগাযোগ করেছি এবং ভালো সাড়া পেয়েছি।

ঢাকা-৯ আসনের গণফ্রন্টের প্রার্থী তাহমিনা আক্তার বলেন, আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী মানুষের কাছে গিয়েছি, প্রচারণা করেছি। তবে সব জায়গায় তো যাওয়া সম্ভব না। যতটুকু পেরেছি মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চেয়েছি। আমি যে অবস্থায় নির্বাচন করছি এটা কঠিন একটা জায়গা। তাও আমি সাহস করে এগিয়ে এসেছি, মানুষের কাছে আহ্বান করেছি আমাকে ভোট দেয়ার।