পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ঢাকা-কলকাতা!

  ‘স্বপ্ন ছুঁয়েছে’ পদ্মার এপার-ওপার
  • মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকা-কলকাতা!

পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকা-কলকাতা!

চালু হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমবে কলকাতার। বাণিজ্যিক লাভের আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে ভোগান্তি কমবে যাত্রীদেরও। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে গাড়ির দীর্ঘ লাইন, প্রতিকূল আবহাওয়া, ফেরিতে ওঠার বিড়ম্বনা সব মিলেয়ে যাত্রীরা পরিত্রাণ পাবে এমন হয়রানি থেকে। পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে একবারে সরাসরি বেনাপোল ইমিগ্রেশনে- এমন স্বপ্ন দেখছেন ভারতগামীরা।

প্রতিদিন গড়ে ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচল করে ছয়টি পরিবহনের ৩০টি যাত্রীবাহী বাস। এসব যানবাহনে প্রতিদিন গড়ে যাতায়াত করেন প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি ও ভারতীয় পর্যটক। এদের কেউ চিকিৎসা নিতে যান, কেউ ব্যবসা ও বেড়ানোর কাজে।

বিজ্ঞাপন

এক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে প্রবেশ করেন। যাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই থাকেন কলকাতায়। পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে যাতায়াতে সময় বাঁচবে প্রায় ৪ ঘণ্টা। এমনটা হলে কলকাতায় আসা বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যাও দ্বিগুণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ কারণে সবাই উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছেন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিকে।

পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-কলকাতা যাতায়াত করা বাসগুলো পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট রুট ব্যবহার করে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হলেও এই বাসগুলোকে আপাতত এই রুটেই ব্যবহার করতে হবে। কারণ এই রুটের পারমিট নেওয়া। তবে ঢাকা-খুলনা-কলকাতার বাস পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াত করবে।


বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) অনুমতি নিয়ে শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস ঢাকা-কলকাতা রুটে সরাসরি পরিচালনা করে থাকে।

পদ্মা সেতুর রুট ব্যবহার প্রসঙ্গে শ্যামলী এন আর ট্র্যাভেলসের জেনারেল ম্যানেজার জীবন চক্রবর্তী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঢাকা-কলকাতা যে রুট ব্যবহার করে বাস চলাচল করছিল সেভাবেই চলবে। অর্থাৎ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে বাস চলবে, কারণ এই রুটে আমাদের পারমিট নেওয়া। অন্যদিকে ঢাকা-খুলনা-কলকাতার বাস পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। যদি পরবর্তীতে কোন পরিবর্তন আসে সেটা জানানো হবে।

এদিকে পদ্মা সেতুর রেললাইন চালু হলে ট্রেল চলাচলেও আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। কারণ পদ্মা সেতুর ওপরের তল দিয়ে চলবে যানবাহন। নীচের তল দিয়ে চলবে ট্রেন। রেলপথের কাজ শেষ হলেই এই পথ দিয়ে চলাচল করবে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস। আর মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগবে ঢাকা থেকে রেলপথে কলকাতা পৌঁছতে।


বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এটি দেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে।

দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির উপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরটিতে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় এ সেতু।

পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। খরস্রোতা পদ্মা নদীর উপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে স্বপ্নের এ সেতু। ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।