সিএবি-এনআরসি বিরুদ্ধে পথে নামলেন মমতা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কলকাতা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ছবি: সংগৃহীত

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ছবি: সংগৃহীত

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএবি) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বিরোধিতায় রাস্তায় নামলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে টানা তিনদিন মিছিল করবেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি এই আইন পশ্চিমবাংলায় লাগু হতে দেবেন না। শুধু তাই নয়, রাজ্যের মানুষের কাছে সর্বধর্ম সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন মমতা মিছিল শুরু করেন ভারতীয় সংবিধানের প্রাণপুরুষ বিআর আম্বেদকারের মূর্তির পাদদেশ থেকে। মিছিল রেডরোড থেকে শুরু হয়ে মেয়োরোড হয়ে গান্ধীমূর্তি ছুঁয়ে জওহরলাল নেহরু রোড ধরে ধর্মতলা দিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে মিছিল শেষ হয় জোড়াসাঁকোয়।

বিজ্ঞাপন

সেখানে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এটা আমাদের সবার দেশ। বিজেপি ক্ষমতায় এসে নিজেকে কি সবার উঁচু মনে করছে? কিন্তু মনে রাখবেন এই দেশ আমাদের সবার। আমরা কি ভোট দেই না? আমাদের কি ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড নেই? তাহলে কেনো ভয় পাচ্ছেন? মনে রাখবেন আমরা স্বাধীন দেশের সবাই নাগরিক। আমরা সাচ্চা হিন্দুস্তানি।

আমার কাছে প্রমাণ আছে বিজেপির কাছ থেকে টাকা খেয়ে অন্যরাজ্য থেকে লোক এসে অশান্তি ছড়াচ্ছে পশ্চিমবাংলায়। কিন্তু আমি কাউকে ছাড়বো না। এসব বরদাস্ত করবো না। বিজেপি চাইছে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা বাধাতে। পশ্চিমবাংলায় আমি তা হতে দেবো না। আমরা হিন্দুরা, মুসলমানদের সাথে আছি। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করি এটাই ভারতের সংস্কৃতি।

বিজ্ঞাপন

দয়া করে সবাইকে বলব কেউ সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবেন না। রাস্তা অবরোধ করবেন না। এতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হয়। আমরা কেউ এই বিল মানি না। আমরা সবাই সবার সাথে আছি। শান্তির সাথে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।

সিএবি ও এনআরসি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। যতক্ষণ না বাতিল হবে ততক্ষণ আমি রাস্তায় থাকবো। ওদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। পুলিশ প্রশাসনের সাথে থাকুন। তাদের সহযোগিতা করুন।

দুদিন আগে বিজেপি এখানে মিটিং করে গেছে। তারা কৈফত চাইছে কেনো বাংলায় অশান্তি হচ্ছে? আমি বলছি আগে তোমাদের ক্ষমতাসীন রাজ্য সামলাও। আসাম ত্রিপুরায় তোমাদের সরকার। সেখানে কেনো অশান্তি? আগে ওই সব রাজ্য সামলাও পরে পশ্চিমবাংলা কথা বলো।

আমরা এনআরসি, সিএবি মানি না। কি করবে আমার সরকার ফেলে দেবে? আমায় ফেলে দেবে? আমি এসবে ভয় পাইনা। আমরা সাধারণ মানুষের সাথে আছি। আপনারা কি ভাবছেন এ সমস্যা শুধু মুসলমানদের। এটা ভুল ভাবছেন। এটা হিন্দুর সমস্যা। বাঙালির সমস্যা।

আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, চলছে ধরপাকড়

জাপানের প্রধানমন্ত্রী এলোনা। ৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু। বঙ্গবন্ধুর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। সেই বন্ধুরাষ্ট্র থেকে সরকারি লোক এলো না। এটা লজ্জার। এ লজ্জা গোটা ভারতবর্ষের।

তিনটি কথা মনে রাখবেন, ১) আমরা সকলে শান্তিতে থাকবো। এই দুই বিল আমরা মানি না। ৩) লোকতান্ত্রিক সংবিধানের উপর বিশ্বাস রাখুন। আমার উপর ভরসা রাখুন। পশ্চিমবাংলায় সিএবি ও এনআরসি করতে হলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে যেতে হবে।

গোটা ভারতে আমিই প্রথম এনআরসি বিরোধিতা করেছিলাম। এখন দেখুন ভারতের অন্যান্য রাজ্য এর বিরোধিতা করছে। সব রাজ্য ধীরে ধীরে বুঝতে পারবে। মনে রাখবেন এটা কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের লড়াই নয়। এ লড়াই সবার।

আরো পড়ুন: বাস জ্বালিয়ে দিলো খোদ দিল্লি পুলিশ!

বিজেপি কি রামকৃষ্ণ পরম হংসদেব ও স্বামী বিবেকানন্দের থেকে বড় হিন্দু? তারা কোন ধর্মের সৃষ্টি করতে চাইছে? তারা হিন্দু ধর্মের কথা বলে না। তারা 'সংকীর্ণ ধর্ম' তৈরি করছে। তাই দয়া করে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবেন না। আমার উপর ভরসা রাখুন। আমি আপনাদের সাথেই আছি।

একদিকে সংবিধান রক্ষা, অন্যদিকে ধর্মীয়ঐক্য ও সম্প্রীতির দুই প্রতিনিধি মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথকে মেলাতেই এই পথ পরিক্রমা মমতা বেছে নিয়েছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি। স্থানীয় সময় দুপুর একটায় মিছিল শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার ও বুধবারও পথে নামবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএবি-এনআরসির বিরোধিতায়।

আরো পড়ুন: নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভ-সহিংসতায় হতাশ মোদি