নাগরিকত্ব বিল পাশের পর পশ্চিমবঙ্গে যা হলো
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাশ হওয়ার পর শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) ও শনিবার উত্তপ্ত পশ্চিমবাংলা। শুক্রবার রাজ্যটির একাধিক জেলাসহ কলকাতা থেকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। শনিবার মুর্শিদাবাদ জেলার লালাগোলা ও কৃষ্ণপুর স্টেশনে বিক্ষোভ চলে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। কৃষ্ণপুর রেল স্টেশনে চারটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ট্রেনের একাধিক বগি। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল যে ঘটনাস্থলে সাময়িক পৌঁছনোর সাহস পায়নি প্রশাসনও।
এরইমধ্যে কলকাতা থেকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের ৪০টি দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি জেলার লোকাল ট্রেন। শনিবার সন্ধ্যায় কয়েক জায়গা থেকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক সরকারি বাসে। ভাঙচুর করা হয়েছে কিছু দোকানেও।
এনিয়ে রাজ্যবাসীকে আইনশৃঙ্খলা হাতে তুলে না নেওয়ার আবেদন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। পথ অবরোধ, রেল অবরোধ করবেন না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বরদাস্ত করা হবে না। যারা গণ্ডগোল করছেন, রাস্তায় নেমে আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাদের কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বাসে আগুন লাগিয়ে, ট্রেনে পাথর ছুড়ে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব আইনবিরোধীদের উত্তর কোরিয়ায় যেতে বললেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এ রাজ্যে কোনভাবেই কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছেন মমতা।
এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের ওই দুই নীতির প্রতিবাদে মমতা নিজে এবার আন্দোলনে নামবেন। আগামী সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত শহর এবং লাগোয়া হাওড়া থেকে শুরু হওয়া তিনটি প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে এভাবে ভাগ করা যায় না। গোটা বিশ্বের সামনে ভারতবর্ষের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। এটা লজ্জার। সিএবি আইনে পরিণত হওয়ার জেরে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রী সফর বাতিল করেছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে পিছিয়ে দিয়েছেন ভারতযাত্রা। নিজেদের (বিজেপি) নির্বাচনী ইস্তেহারকে বাস্তবায়িত করতে বিভাজনের পথ বেছে নিয়েছে বিজেপি। বিজেপিতে না গেলে জেলে! ওরা (বিজেপি) যেন নতুন মডেলের ওয়াশিং মেশিন। গেলেই সাফ। আসলে ওরা পশ্চিমবাংলার পাপ, দেশের অভিশাপ।
আরও পড়ুন: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভ্রমণে পশ্চিমা নাগরিকদের প্রতি সতর্কতা
এছাড়া এদিন মমতা বলেন, আগামী সোমবার থেকে বুধবার, এই তিনদিন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মিছিলে স্বয়ং থাকবেন তিনি। প্রথম দিন, ১৬ ডিসেম্বর কলকাতা ময়দানে বিআর আম্বেদকরের মূর্তির সামনে থেকে বেলা ১টায় মিছিল বেরিয়ে যাবে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত। পরের দিন, ১৭ ডিসেম্বর ওই সময়ে যাদবপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে মিছিল যাবে ময়দানে গান্ধী মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত। বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর হাওড়া ময়দান থেকে একই সময় শুরু হবে।
অপরদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই একাধিক রাজ্য ইতিমধ্যেই নতুন আইনটি কার্যকর করতে নারাজ।
শুক্রবার কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ঘোষণা দেন তার রাজ্যে এই আইন কার্যকর হবে না। কেরালার তালে তাল মিলিয়েছে পাঞ্জাব। গতকালই পাঞ্জাবও জানিয়েছে দিয়েছে সেখানেও কার্যকর হবে না এই আইন।
আরও পড়ুন: ভারতের নাগরিকত্ব আইন মুসলিমদের জন্য বৈষম্যমূলক: জাতিসংঘ
শনিবার ছত্তিশগড়ের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ওই রাজ্যেও নাগরিকত্ব আইন চালু করা উচিত হবে না। একই পথ বেছে নিয়েছে কংগ্রেস শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীও নীতিশ কুমার এনিয়ে মুখ না খুললেও যথেষ্ট চাপে আছেন। দলের চাপে বিজেপি বিরোধী পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।
তবে মোদি সরকারের পক্ষে সব থেকে উদ্বেগজনক হল আসাম ও ত্রিপুরা। এই দুই রাজ্যে সরাসরি বিজেপি ক্ষমতায়। দুই রাজ্যেই আগুন জ্বলছে আইনটির বিরুদ্ধে। সুতরাং বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলো তো বটেই সঙ্গে আসাম ও ত্রিপুরাতেও বিক্ষোভের মধ্যে আইনটি চালু হবে কিনা কিংবা হলেও কবে থেকে হবে, সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।