মহানায়কের ইচ্ছেয় শুরু হয়েছিল লক্ষ্মীপূজা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কলকাতা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

১৯৫০ সালে ছেলে গৌতম জন্মালেন, ওই বছরই মহানায়ক উত্তমকুমারের ইচ্ছেয় ভবানীপুরে গিরিশ মুখার্জী রোডের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা শুরু হয়। সেই লক্ষ্মীপূজার এবার ৬৯তম বছরে পড়লো। শোনা যায়, টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়া থেকে আর্ট ডিরেক্টর এসে আলপনা দিতেন। ভিয়েন বসিয়ে মিষ্টি তৈরি হতো বাড়িতে। গোটা বাড়ি জুড়ে এখনো আছে সাজ সাজ রব। মহানায়কের আমল থেকেই লক্ষ্মীপূজায় নেতা থেকে অভিনেতা ভিড় থাকে।

উত্তমকুমারের পর পূজার ধারা একইভাবে বজায় রেখেছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের নতুন প্রজন্ম। তাঁর নাতি-নাতনি গৌরব, নবমিতা ও মৌমিতার হাতেই এখন এ পূজার দায়দায়িত্ব। পূজার ঠাঁটবাট কমেছে ঠিকই, কিন্তু নিষ্ঠায় ঘাটতি নেই। আলপনা থেকে বিসর্জন সবই এখনও উত্তমের ঐতিহ্যেই চলে আসছে।

বিজ্ঞাপন

সব কাজেই হাত লাগান উত্তমকুমারের প্রজন্ম। পূজার আগের রাতে পরিবারের ছেলেরা প্রতিমা নিয়ে আসেন কুমোরটুলি থেকে। ৬৯ বছর ধরে একই আদলে লক্ষ্মীর মুখ তৈরি হয় মহানায়কের বাড়িতে। আর তা যে সে মুখ নয়, প্রতিমার মুখ তৈরি হয় একবারে মহানায়কের স্ত্রী গৌরীদেবীর আদলে।

বিজ্ঞাপন

শোনা যায়, কুমারটুলীর শিল্পী নিরঞ্জন পাল ‘যদুভট্ট’ ছবির শুটিং ফ্লোরে মূর্তি তৈরি করছিলেন। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে উত্তমকুমারের। তিনি শিল্পীকে বাড়িতে ডাকেন লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ার জন্য। প্রতিমা শিল্পী উত্তমের বাড়ি এসে মহানায়কের খোঁজ করতে থাকেন। গৌরীদেবী ঘর মুছছিলেন। তিনি ঘোমটার ফাঁক থেকে এক ঝলক শিল্পীর দিকে তাকিয়ে মহানায়ককে ডেকে দিলেন। ততক্ষণে শিল্পীর চোখে লক্ষ্মী প্রতিমার মুখের ছবি আঁকা হয়ে গিয়ছিল। গৌরীদেবীর মুখের আদলে লক্ষ্মী মূর্তি গড়লেন শিল্পী নিরঞ্জন পাল। আজও প্রতিমার মুখের গড়নে সেই চেনা ছাপ। দেবীমূর্তির পরনে থাকে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি।

লুচি, পাঁচ রকম ভাজা, বাঁধাকপির তরকারি, ফুলকপির ডালনা, পোলাও, চাটনি ও মিষ্টি দেওয়া হয় লক্ষ্মীর ভোগে। আগে বাড়িতে ভিয়েন বসিয়ে তৈরি হতো মিষ্টি। এখন সে সব আর হয় না। কিন্তু আজও প্রায় চারশো থেকে পাঁচশো জন অতিথি আপ্যায়ন হয় মহানায়কের বাড়িতে। উত্তমকুমারের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল এই আতিথেয়তা। তফাৎ বলতে ভোজনরসিক মহানায়কের সময় অতিথি সংখ্যাটা ছিল আরও বেশী। শোনা যায়, তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সকল নিমন্ত্রিতদের খাওয়াতেন। তবে উত্তমকুমারের নির্দেশে দেবীকে যে ভোগ নিবেদন করা হয় তা অতিথিদের মধ্যে ভাগ করা হয় না। সেই ভোগ বিলানো হয় পরিবারের মধ্যে। দেবীর অন্নভোগের পাশাপাশি অতিথিদের জন্য থাকে আলাদা খাবারের আয়োজন।

প্রতি বছর অতিথি তালিকায় থাকে আত্মীয়স্বজন, নিকট বন্ধুবান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশীরা। থাকেন টলিপাড়ার সেলিব্রিটিরাও। এক সময় মহানায়ক নিজেই বসতেন পূজায়। তিনি মারা যাবার পর তার ছোট ভাই তরুন কুমার বসতেন চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারে পূজায়। তারপর বসতেন উত্তমকুমারের ছেলে গৌতম। এখন বসে পরের প্রজন্ম।

সাধারণত লক্ষ্মী প্রতিমার নিরঞ্জন হয় না। কিন্তু মহানায়কের বাড়িতে প্রতিবছর পূজার পরের দিন প্রতিমা বিসর্জন হয়। বিসর্জনের সময় আবার লক্ষ্মী প্রতিমাকে লাল পাড়ের শাড়ি পরানো হয়। বিসর্জনের পর প্রথামত ওই শাড়িটি পরিবারের কোনো মেয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মহানায়ক উত্তমকুমারের হাত ধরে যে পূজার সূচনা হয়েছিল, আজও সেই ধারা বজায় রেখেছে উত্তমকুমারের পরিবারের প্রজন্ম।